Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

সঙ্ঘের পাল্টা প্রচার ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ রাহুলের

জেএনইউ বিতর্কে একেবারে প্রথম সারিতে থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরোধিতা করছেন রাহুল গাঁধী। এবং তিনি যে ভুল করছেন, এমন বলছেন না কংগ্রেসের কেউই। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তথা টিম রাহুল এও বুঝতে পারছেন, তাঁদের এই অবস্থানের অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা পুরোদস্তুর!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

জেএনইউ বিতর্কে একেবারে প্রথম সারিতে থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরোধিতা করছেন রাহুল গাঁধী। এবং তিনি যে ভুল করছেন, এমন বলছেন না কংগ্রেসের কেউই। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তথা টিম রাহুল এও বুঝতে পারছেন, তাঁদের এই অবস্থানের অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা পুরোদস্তুর! পাল্টা সেই প্রচার সামলে নিজেদের যুক্তিকে তুলে ধরাই এখন কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জ।

কেন এমন আশঙ্কা? রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনায় ব্যাকফুটে ছিল বিজেপি। সেটাকে চাপা দিতেই জেএনইউ-র ঘটনায় হাওয়া দিচ্ছে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। জেএনইউ-তে আফজল গুরুর সমর্থনে স্লোগান ওঠার অভিযোগকে অস্ত্র করে কংগ্রেস, বামেদের মতো দলগুলির গায়ে রাষ্ট্রবিরোধী তকমা সেঁটে দিতে মরিয়া বিজেপি! কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, ‘‘দেশের শিক্ষিত সমাজের বড় অংশ বিজেপির খেলা ধরে ফেলেছেন। কিন্তু তাঁদের বাইরেও বিশাল সংখ্যক মানুষ আছেন, যাঁদের কাছে কংগ্রেস, বামের মতো দলগুলি সম্পর্কে একটা মিথ্যে ধারণা তৈরি করতে কিছুটা হলেও সফল বিজেপি।’’

এখন কী ভাবে ঘুঁটি সাজানোর কথা ভাবছেন রাহুল? কংগ্রেস সূত্রে খবর, এ নিয়ে পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বল, আহমেদ পটেল-সহ দলের পোড় খাওয়া নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাহুল। তার পর তুলনামূলক নিচুতলার নেতা ও মুখপাত্রদের দলের কৌশল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী কৌশল? সরকারের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতার অভিযোগের সঙ্গে মূল বিতর্ককে জড়াতে হবে। সঙ্গে আরএসএস তথা বিজেপির জাতীয়তাবাদ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলা। সংসদ ও রাস্তায় নেমে তো বটেই, এ নিয়ে আদালতেও সক্রিয় থাকবে দল। সিব্বলরা মনে করছেন, কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দাঁড়াবেই না। কারণ, শুধু স্লোগান তোলা আইনত রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়। পৃথিবীর একাধিক উন্নত দেশেই রাষ্ট্রদ্রোহের আইন উঠে গিয়েছে। না হলে ইরাকে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে পারতেন না সে দেশের মানুষ। সিব্বলদের মতে, কানহাইয়ার বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিলেই বড় ধাক্কা খাবে বিজেপি তথা মোদি সরকার। আজ জেএনইউ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে কংগ্রেস। সিব্বলের এক আবেদনের ভিত্তিতেই আজ পাটিয়ালা হাউস কোর্টে ৬ আইনজীবীর পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

বিজেপি ও সঙ্ঘকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আরএসএস নাগপুরে তাদের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা তুলত না! স্বাধীনতা সংগ্রামেও তাদের অংশগ্রহণের ইতিহাস নেই! বরং স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্তর্ঘাত করেছিল! আর মহাত্মা গাঁধীর মৃত্যু হয়েছিল আরএসএসের হাতেই।’’

বিজেপি নেতা চন্দন মিত্র আজ ব্লগে লিখেছেন, জেএনইউ বন্ধ করার এটাই উপযুক্ত সময়! রণদীপ-আনন্দ শর্মাদের পাল্টা বক্তব্য, চেন্নাই আইআইটি-তে অম্বেডকর-পেরিয়ার স্টাডি সার্কেলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট এবং সর্বোপরি জেএনইউ— সব ঘটনার ধাঁচ এক। তাঁদের কথায়, ‘‘ফ্যাসিস্ত কায়দায় সরকার চালাতে চায় মোদী সরকার। যাঁরা তাদের মতের বিরোধিতা করবে, তাঁদের দেশ-বিরোধী, তকমা দিয়ে জেলে ঢোকানো হবে! না হলে পুলিশ দিয়ে পেটানো হবে! সেটাও না পারলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তালা ঝোলানো হবে! দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য এই ধারা বিপজ্জনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE