আইনসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে শনিবার। শীর্ষ আদালতের রায়ে তামিলনাড়ু বিধানসভায় দু’বার পাশ হওয়া ১০টি বিল রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়াই কার্যকরও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেশের ‘প্রথম নাগরিক’কে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার সেই রায়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সহমত নয় বলেই একটি সূত্র জানাচ্ছে।
ওই সূত্রের দাবি, দুই বিচারপতির বেঞ্চের ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ তামিলনাড়ুর ওই মামলায় গত ৮ এপ্রিলের রায়ে জানিয়েছিল, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপাল ফেরত পাঠানোর পরে আবার তা বিধানসভায় পাশ হলে সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যপাল তাতে সম্মতি দিতে বাধ্য। তিনি তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কোনও পদক্ষেপ করলেও তার সাংবিধানিক বৈধতা থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রাজ্যপালের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকেও আইনসভায় পাশ হওয়া বিল অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে সময়সীমা মেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়েছিল। দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে জানাতে হবে তিনি বিলে অনুমোদন দিয়েছেন না কি দিচ্ছেন না।’’ কারণ না দেখিয়ে রাজ্যপালের মতো রাষ্ট্রপতিও ‘অনির্দিষ্ট সময়’ ধরে বিল ফেলে রাখলে আদালত তার পর্যালোচনা করবে বলেও জানায় শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন:
সাধারণত, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে এই ধরনের বিল এলে রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা ফেলে রাখতে পারবেন না। যদিও ভারতীয় সংবিধানে বিল নিয়ে মতামত জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই সুপ্রিম কোর্টে ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিল করা হতে পারে কেন্দ্রের তরফে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার এবং রাজ্যপাল রবির টানাপড়েনের সূত্রপাত ২০২২ সালে। তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিল পাশ করেছিল স্ট্যালিনের সরকার, যাকে কেন্দ্র করে শুরু চাপানউতর। ডিএমকে সরকার যখন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের বিল আটকে রাখা নিয়ে পিটিশন দায়ের করেছিল, সে সময় ১২টি বিল ঝুলে ছিল। তার পরে ১০টি বিল পর্যালোচনার জন্য তামিলনাড়ু বিধানসভায় ফেরত পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। বাকি দু’টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন। পর্যালোচনার পরে ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর আবার সেই বিলগুলি রাজ্যপাল এন রবির কাছে পাঠিয়েছিল স্ট্যালিন সরকার। তাঁর সম্মতির জন্য।
যদিও রাজ্যপাল ১০টি বিলই রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি সাতটি বিল আটকে রাখেন। একটিতে সম্মতি দেন। বাকি দু’টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে জানায়, কোনও বিল নিয়ে বিধানসভায় দু’বার আলোচনা হলে এবং তার পরে সেখানে ছাড়পত্র মিললে, সংবিধান মেনে সেই বিল আটকে রাখার আর অধিকার নেই রাজ্যপালের। তার পরেই সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সাংবিধানিক বিধি স্মরণ করায়। সেই সঙ্গে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতিকেও সময়সীমা বেঁধে দেয়। শীর্ষ আদালতের সম্মতিতে ভারতের ইতিহাসে প্রথম বার রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের সই ছাড়াই কার্যকর হয় নতুন আইন।