প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
হয় শিলান্যাস, নয় উদ্বোধন। গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত সাত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারি প্রকল্প ‘উপহার’ দিলেন।
গত মার্চ থেকে প্রতি মাসেই অন্তত একবার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে যাওয়া শুরু করেছিলেন। এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছিল গুজরাতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস বা উদ্বোধন। বিরোধীরা তখনই অভিযোগ তুলেছিলেন, গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প শিলান্যাস বা উদ্বোধন করবেন। হয়েছেও তাই। প্রতি মাসেই গুজরাতে গিয়ে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস বা উদ্বোধন করেছেন মোদী। জুন মাসে দু’বার গিয়েছিলেন। অক্টোবর মাসে গিয়েছিলেন তিন বার। শেষ বারের সফর সেরে মঙ্গলবারই তিনি দিল্লি ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল থেকে অক্টোবর, চলতি অর্থ বছরে এখনও পর্যন্ত গুজরাতে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প রয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্পও রয়েছে। আমদাবাদ থেকে বনসকান্থা, নভসারি থেকে সুরাত, গুজরাতের কোনও এলাকাই প্রধানমন্ত্রীর শিলান্যাস-উদ্বোধনের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। বিরোধীদের বক্তব্য, চলতি বছরের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় ১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শুধু গুজরাতের ভোটের জন্যই তার থেকে বেশি অর্থের প্রকল্প ‘উপহার’ দিয়েছেন।
১৫ অক্টোবর হিমাচল প্রদেশের ভোট ঘোষণা হলেও নির্বাচন কমিশন সেদিন গুজরাতের ভোট ঘোষণা করেনি। বিরোধীরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর আপাতত গুজরাত সফর শেষ। এ বার নির্বাচন কমিশন গুজরাতের ভোট ঘোষণা করবে। আগেভাগে ভোট ঘোষণা হলে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি জারি হয়ে যেত। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি, প্রকল্প উদ্বোধন বা শিলান্যাসে বাধা পড়ত।
শুধু সরকারি প্রকল্প নয়। গুজরাতের ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী গুজরাতে গিয়ে টাটা-এয়ারবাসের উদ্যোগে বিমান কারখানার শিলান্যাস করেছেন। তাতে ২২ হাজার কোটি টাকার লগ্নি হবে। গুজরাতে আর্সেলর মিত্তল ও নিপ্পনের যৌথ উদ্যোগে ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন মোদী। সেখানেও ৬০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হবে। এ ছাড়া ফক্সকন ও বেদান্ত-র যৌথ উদ্যোগে সেমিকন্ডাকটর তৈরির প্রকল্পও গুজরাতে হবে বলে ঘোষণা হয়েছে। যেখানে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হবে। যার অর্থ, ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস-উদ্বোধনের পাশাপাশি ভোটের প্রচারে রাজ্যে ২ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেসরকারি লগ্নি নিয়ে আসার কৃতিত্বও দাবি করতে পারেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তথ্য বলছে, মার্চে গুজরাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়, পঞ্চায়েত সম্মেলন, খেল মহাকুম্ভ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মোদী। এপ্রিল থেকে প্রকল্পের শিলান্যাস-উদ্বোধন শুরু হয়। দাহোদ, পাঁচমহল, বডোদরা, নভসারি, সবরকান্থা, ভালসাদ, আমদাবাদ, ভারুচ, সুরাত, রাজকোট, জুনাগঢ়, মেহসানা— কোনও জেলাই বাদ পড়েনি। এ ছাড়াও ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রতি মাসেই গুজরাতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। পাতিদার শিল্পপতিদের সম্মেলন থেকে স্বামীনারায়ণ মন্দিরের যুব সম্মেলন, গুজরাতের ভোটারদের মধ্যে প্রভাবশালী কোনও সংগঠনই বাদ পড়েনি।
জাতীয় কংগ্রেসে গুজরাতের ভারপ্রাপ্ত নেতা রঘু শর্মা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে সরকারি খরচে জনসভা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এক-একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি খরচে লোক জড়ো করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে বক্তৃতা করেছেন। নিজের ঢাক পিটিয়েছেন। ফলে সরকারি খরচেই এত দিন ধরে তিনি ভোটের প্রচার করেছেন। সরকারি কর্মসূচির নামে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলেছে।’’ আম আদমি পার্টির গুজরাতের সভাপতি গোপাল ইটালিয়ার প্রশ্ন, ‘‘গত কাল প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এ বার কি দয়া করে নির্বাচন কমিশন গুজরাতের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy