মোদী সরকারের আশ্বাসে ১১ জুলাই থেকে ধর্মঘট তুলে নিল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। কিন্তু কী সেই আশ্বাস, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও কর্মচারী সংগঠনগুলির বিবৃতিতে ফাঁক থেকেই গেল।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে কর্মচারী সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, সরকারের সামনে তাঁরা ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলেন। মূল বেতনকেও আরও বেশি গুণে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রেখেছেন। সরকার এই দাবিগুলি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি করবে। চার মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা করবে।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, কর্মচারীদের দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের। কিন্তু চার মাসের কোনও সময়সীমার উল্লেখ অর্থ মন্ত্রকের বিবৃতিতে নেই। অথচ সেই বিবৃতি দেখিয়েই ধর্মঘট প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন ইউনিয়নের নেতারা।
সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী সংগঠনগুলি আগেই ১১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। দাবি ছিল, কমিশন খুব সামান্য হারে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। তার থেকে বেশি হারে বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা হোক। কিন্তু মোদী সরকার কার্যত বেতন কমিশনের সুপারিশই অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেওয়ায় সেই ক্ষোভ আরও বাড়ে। ধর্মঘটে অনড় থাকার হুমকি দেন কর্মচারীরা। ধর্মঘটে রেল কর্মচারীদের সংগঠনগুলি যোগ দেওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
আসরে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ৩০ জুন তিনি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে নিয়ে ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। ইউনিয়নের দাবি ছিল, ন্যূনতম বেতন সরকার ১৮ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার টাকা করতে হবে। মূল বেতন ২.৫৭ গুণের বদলে ৩.৪২ গুণ বাড়ানোরও দাবি তোলেন তাঁরা। তাঁদের মতে, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তখন জানান, সরকার বিবৃতি দিয়ে ইউনিয়নের দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখার কথা ঘোষণা করবে। ইউনিয়নের নেতারা জানান, ওই বিবৃতি জারি হলেই তাঁদের পক্ষে ধর্মঘট থেকে সরে আসা সম্ভব হবে।
কিন্তু ৩০ জুনের বৈঠকের পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। ইউনিয়নের নেতারা ফের সকালে এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন। প্রতিশ্রুতি সত্বেও বিবৃতি জারি করা হল না কেন, তা নিয়ে বিতর্ক হয়। বার্তা পাঠানো হয় সরকারের কাছে। এর পরে রাত পৌনে ন’টা নাগাদ অর্থ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে। যদিও সেই বিবৃতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার কোনও আশ্বাস নেই। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যাশনাল জয়েন্ট কাউন্সিল অফ অ্যাকশন-এর নেতা শিব মিশ্রর দাবি, তাঁরা ধর্মঘট থেকে সরে আসেননি। চার মাসের জন্য ধর্মঘট স্থগিত রাখা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের কমিটিকে এই চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সপ্তম বেতন কমিশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সচিবদের একটি কমিটি কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করেছিল। কিন্তু কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তার পরেও তাঁদের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়নি। আর গত ৭০ বছরেও এত কম হারে বেতন বাড়ানোর সুপারিশ হয়নি। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস। আগামিকালই দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy