কর্নাটকের নেলামঙ্গলায় তৈরি হয়েছে এই ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’
৪৮ ঘণ্টাও কাটল না। তার মধ্যেই ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে এমন এক তথ্য সামনে এল, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। রামলীলা ময়দানে রবিবার মোদী ঘোষণা করেছিলেন, দেশের কোথাও ‘কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই’। কিন্তু এ বার ডিটেনশন ক্যাম্পের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়াই শুধু নয়, সেই ক্যাম্প রীতিমতো চালু বলে দাবি করেছেন সরকারি আধিকারিক। বিজেপি শাসিত কর্নাটকে চালু হল দেশের প্রথম ডিটেনশন ক্যাম্প। যদিও এটা যে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’, সে কথা মানতে নারাজ কর্নাটক সরকার।
একাধিক সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে, রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নেলামঙ্গলাতে একটি ডিটেনশন ক্যাম্প চালু হয়েছে। সরকারি আধিকারিকই সে কথা স্বীকার করেছেন। নেলামঙ্গলার সমাজকল্যাণ বিভাগের কমিশনার আর এস পেড্ডাপাইয়া সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘‘আমরা ক্যাম্পটি চালু করে দিয়েছি। অনুপ্রবেশকারীদের রাখার জন্য তৈরি এই ক্যাম্পটি।’’ এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্নাটকের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষকর্তাও।
কর্নাটকের সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, এই ডিটেনশন ক্যাম্পটি চালু হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকা পেয়ে কয়েক দিন আগেই সেটি চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দফতরের এক আধিকারিক। পেড্ডাপাইয়া আরও জানিয়েছেন, যেহেতু কয়েক দিন আগেই চালু হয়েছে, তাই আপাতত কোনও আবাসিক এখানে নেই। তিনি বলেন, ‘‘দ্য ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে এবং তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও কর্মী-সহ আমরা অনুপ্রবেশকারীদের রাখতে প্রস্তুত।’’
জানা গিয়েছে, সমাজকল্যাণ দফতরের একটি হস্টেলকেই ডিটেনশন ক্যাম্প হিসেবে তৈরি করেছে। তার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে আবাসিকদের থাকার জন্য ছ’টি ঘর। এক একটি ঘরে ৪ জন করে রাখার বন্দোবস্ত রয়েছে। অর্থাৎ মোট ২৪ জনকে এই ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা যেতে পারে। এছাড়াও নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য একটি ঘর এবং একটি রান্নাঘর রয়েছে। রয়েছে স্নানাগারও। নজরদারির জন্য রয়েছে দু’টি ওয়াচটাওয়ার। ক্যাম্পের চার দিকে আপাতত অস্থায়ী ভাবে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে।
ডিটেনশন ক্যাম্পের প্রাচীরের উপর দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। ছবি: সংগৃহীত
স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপি এবং রাজ্য সরকারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেছেন, ‘‘নেলামঙ্গলার ওই কেন্দ্রটি তৈরি করেছে সমাজকল্যাণ দফতর। নাইজেরিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশকে আক্রমণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর পর থেকে এই ধরনের কোনও অপরাধের প্রমাণ পেলে নাইজেরিয়ার নাগরিকদের ওই কেন্দ্রে রাখা হবে যাতে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে সুবিধা হয়। এর সঙ্গে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিষয়ের কোনও যোগ নেই। এটা ডিটেনশন ক্যাম্প নয়।’’ পাশাপাশি সমাজকল্যাণ আধিকারিকের দাবি উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এও বলেন, ওই কেন্দ্রটি চালু হয়নি।
যদিও একাধিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি, পুরোপুরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ম্যানুয়াল মেনে এই ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’টি তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবস্থাও ডিটেনশন ক্যাম্পের ধাঁচেই গড়ে তোলা হয়েছে।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রবিবার রামলীলা ময়দানে প্রচারের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই নির্বাচনী সভাতেই তিনি দাবি করেন, দেশের কোথাও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই। কিন্তু মোদীর ওই দাবি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে অসমে একাধিক ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে ওই দাবি করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার মধ্যেই এ বার হাতে এল অকাট্য প্রমাণ, যা আবার মোদীর দল বিজেপি শাসিত কর্নাটকেই।
সম্প্রতি দুই বাংলাদেশি নাগরিকের জামিন মামলায় কর্নাটক হাইকোর্টে সে রাজ্যের সরকার জানিয়েছিল, সারা রাজ্যে অস্থায়ী ভাবে মোট ৩৫টি ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যে ফরেনার্স অ্যাক্টে মোট ৮৬৬ জনের বিরুদ্ধে ৬১২টি অনুপ্রবেশের মামলা নথিবদ্ধ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy