এক ঘরে আমলা। অন্য ঘরে তাঁর দিদি। সিলিং থেকে দু’জনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। আরও একটি ঘরে বিছানায় পড়ে আমলার মায়ের দেহ। সাদা কাপড়ে ঢাকা। পাশে রাখা ফুলের তোড়া। একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কোচিতে। এই মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে রহস্যও। বৃহস্পতিবার ঘর থেকে তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়।
আমলা মণীশ বিজয়। তিনি শুল্ক দফতরের অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে কোচিতে সরকারি কোয়ার্টারে মা শকুন্তলা এবং দিদি শালিনীকে নিয়ে থাকতেন। বছর দেড়েক আগে কোঝিকোড় থেকে বদলি হয়ে কোচিতে এসেছিলেন মণীশ। মাস দেড়েক আগে তাঁর কোয়ার্টারে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন মা এবং দিদি।
মণীশের এক সহকর্মী জানিয়েছেন, কাজ আছে বলে চার দিনের ছুটি নিয়েছিলেন আমলা। ছুটি পেরিয়ে গেলেও অফিসে না আসায় মণীশের বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ঢুকে ডাকাডাকি করেও কারও সাড়াশব্দ পাননি। শুধু তা-ই নয়, একটা কটু গন্ধও ভেসে আসছিল। ফলে তাঁর সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশী এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে কোয়ার্টারের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখে বিছানার উপর পড়ে রয়েছে বৃদ্ধার দেহ। সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। পাশে রাখা ফুলের তোড়া। তার পর অন্য দু’টি ঘরে যেতেই তারা দেখে মণীশ এবং তাঁর দিদি শালিনীর দেহ সিলিং থেকে ঝুলছে।
কোচির পুলিশ কমিশনার পুত্তা বিমলাদিত্য জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘পারলে বোনকে আমাদের মৃত্যুর খবরটা পৌঁছে দিয়ো।’’ কার উদ্দেশে লেখা ওই চিঠি, তা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মাকে আগে খুন করার পর তার পর কি মণীশ এবং তাঁর বোন শালিনী আত্মহত্যা করেছেন? এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মণীশের বোন বিদেশে থাকেন। তিনি এলে দেহগুলি ময়নাতদন্ত করা হবে। পুলিশ জানতে পেরেছে, মণীশের দিদি শালিনীর চাকরি সংক্রান্ত একটি মামলা চলছিল ঝাড়খণ্ডে। ২০০৬ সালে ঝাড়খণ্ড পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। তার পর অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে কাজে যোগ দেন। কিন্তু তাঁর সেই র্যাঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আদালতে মামলা হয়। তার পর তাঁর র্যাঙ্ক বাতিল হয়। চাকরিও চলে যায়। ২০২৪ সালে সিবিআই এই মামলায় একটি চার্জশিটও দেয় আদালতে। কিন্তু হঠাৎ করে কী এমন হল যে, তিন জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন? মণীশের বোন, সহকর্মী এবং পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।