শ্রীনগরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার।
নির্বাচনের ফল যে দিন বেরোল সে দিন সন্ধ্যায় নবনির্মিত প্রাসাদোপম দলীয় সদর কার্যালয়ে এসে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, নিন্দুকেরা বলে বিজেপি নাকি হিন্দি পার্টি। কিন্তু এ বার কর্নাটক বিজয় সম্ভব হল। এর চার দিনের মাথায় আজ ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফা! সন্দেহ নেই, ২০১৯-এর আগে মোদীর কাছে এটা একটা বড় ধাক্কা। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বললেন, ‘‘এ তো আমও গেল। ছালাও গেল।’’
শঙ্করদয়াল শর্মা সুযোগ দিলেও একদিন অটলবিহারী বাজপেয়ী পারেননি সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে। ১৩ দিনের সরকারে ইতি টেনে তিনি ইস্তফা দেন। কিন্তু সে দিন আর আজ, এক নয়। মোদী, অমিত শাহের জমানায় জনমনে একটা জোরালো ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, বিজেপির তহবিলে এখন কোটি কোটি টাকা। এমন অভিযোগও উঠেছে, ইয়েদুরাপ্পাকে গদিতে রাখতে মোদী-শাহের বাজেট ১০০ কোটি টাকা! তফাত এটাই যে, বাজপেয়ীর নিজস্ব পথ ও তাঁর সম্পর্কে মানুষের ধারণা, দু’টিই ছিল আলাদা।
বিধানসভায় ইস্তফা ঘোষণার আগে ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: পিটিআই
আর ইয়েদুরাপ্পার ক্ষেত্রে মানুষ বিশ্বাস করেছে ওই ১০০ কোটির গল্প। কারণ, তাঁর ভাবমূর্তি অনেক দিন থেকেই কালিমালিপ্ত। ফলে সরকার হল না। উল্টে বদনাম হলেন মোদী।
কর্নাটক কাহিনি
• ১২ মে, ২০১৮: কর্নাটকে বিধানসভা ভোট।
• ১৫ মে, ২০১৮: ১০৪টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল বিজেপি। ৭৮টি আসন কংগ্রেসের। জেডি(এস)-এর ৩৭টি আসন। জোট গড়ল দুই বিরোধী। সরকার গড়ার দাবি করল তারা।
• ১৬ মে, ২০১৮: বিজেপিকে সরকার গড়তে ডাকলেন রাজ্যপাল বজুভাই বালা। পরের দিন বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ। সুপ্রিম কোর্টে গেল কংগ্রেস।
• ১৬-১৭ মে, ২০১৮: মাঝরাতে খুলল সুপ্রিম কোর্ট। রাত দু’টোর পরে শুরু শুনানি। ইয়েদুরাপ্পার শপথ স্থগিত হল না।
• ১৭ মে, ২০১৮: সকাল ন’টায় শপথ ইয়েদুরাপ্পার। নিজেদের বিধায়কদের কর্নাটক থেকে সরাল কংগ্রেস-জেডিএস।
• ১৮ মে, ২০১৮: ১৯ মে বিধানসভায় আস্থাভোটের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। প্রোটেম স্পিকার হিসেবে বিজেপি বিধায়ক কে জি বোপাইয়ার নিয়োগকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ কংগ্রেস-জেডিএসের।
• ১৯ মে, ২০১৮: স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আস্থাভোট সরাসরি সম্প্রচার করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কর্নাটকে ফেরানো হল বিরোধী বিধায়কদের। বিকেল চারটের সময়ে ইয়েদুরাপ্পা জানালেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন।
ভারতের রাজনীতিতে অনেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই শেষ দু’টি বছর বড় কঠিন। নরসিংহ রাও থেকে রাজীব গাঁধী— প্রত্যেকের ক্ষেত্রে দুর্যোগ বেড়েছে শেষবেলায়। মোদীর ক্ষেত্রে পরাজয়ের বার্তা আসা শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচন থেকে। সে রাজ্যের গোরক্ষপুর থেকে শুরু করে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের উপনির্বাচনে একের পর এক দুঃসংবাদ এসেছে। মোদী তাই ব্যক্তিগত ভাবে ইয়েদুরাপ্পাকে অপছন্দ করলেও ভোটে জেতার জন্য আপস করেন। কর্নাটক বিজয়ে তাঁকেই দলের মুখ হিসেবে বেছে নেন। হরিয়ানা বা মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি তিনি নিয়েছিলেন, কর্নাটকের ক্ষেত্রে তা করেননি। তবু শেষরক্ষা হল না। এর ফলে ২০১৯-এর আগে রাহুল গাঁধীর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ল। অর্থবল, বাহুবল থাকা সত্ত্বেও রাহুলের কাছে এ যাত্রা পরাস্ত হতে হল মোদীকে। রাহুল নিজেই লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন। আজ থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy