মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলন আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। —ফাইল চিত্র।
সদ্য কর্নাটকে হার। তার উপরে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে শরিকি বিবাদে এনডিএ জোটের সরকার ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ওঠায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলন আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দল।
বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছিল, আজ ও আগামিকাল দিল্লিতে বৈঠকে বসবেন বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীরা। কিন্তু গত সপ্তাহে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে জোট শরিকদের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদে ওই দুই রাজ্যে এনডিএ সরকারের মেয়াদ শেষ করা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে একনাথ শিন্দের শিবসেনা ও দেবেন্দ্র ফডণবীসের নেতৃত্বাধীন বিজেপি গত এগারো মাস ধরে সরকার চালালেও বছর ঘোরার আগেই দু’দলের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে শিন্দে মুখ্যমন্ত্রী হলেও ফডণবীস পিছন থেকে সরকার পরিচালনা করেন, এই অভিযোগ গোড়া থেকেই। এ নিয়ে জোটের দুই শরিকের মধ্যে তিক্ততা থাকলেও সম্প্রতি একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে দু’পক্ষের বিরোধ চরমে ওঠে। বিজেপি সূত্রের মতে, কল্যাণ-ডোমবিভলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি নন্দু জোশীর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়ে। ওই কেন্দ্রের সাংসদ হলেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের ছেলে শ্রীকান্ত শিন্দে। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, নন্দু জোশীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই শিন্দে গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন শিবসেনা ওই অভিযোগ দায়ের করেছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে, সরকারের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবীন্দ্র চহ্বাণ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও ভাবেই শ্রীকান্ত শিন্দে কিংবা তাঁর পরিবর্তে দাঁড়ানো শিন্দে গোষ্ঠীর কোনও নেতাকে সমর্থন করবে না বিজেপি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই শ্রীকান্ত ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিজেপির সঙ্গে শিন্দে গোষ্ঠীর জোট-জটিলতা দেখে সরব হয় উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীও। তাঁদের মতে, গত এগারো মাস ধরে শিন্দে গোষ্ঠীর ২২ জন বিধায়ক ও ন’জন সাংসদের প্রতি বিমাতৃসুলভ মনোভাব দেখিয়ে চলছে বিজেপি। শিন্দে গোষ্ঠীর নেতাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও যে রক্ষিত হয়নি, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয় রাউতেরা। সব মিলিয়ে দূরত্ব বাড়ছে এনডিএ-র দুই শরিকের। ওই জোট পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
অন্য দিকে হরিয়ানাতেও বিজেপির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে জননায়ক জনতা পার্টি (জেজেপি)। মূলত লোকসভা নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি ও জেজেপি দলের নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালার বিধানসভা আসন উচানা কালান কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে দাঁড় করানো নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। সম্প্রতি ওই রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক বিপ্লব দেব হরিয়ানা সফরে গিয়ে দলীয় প্রার্থী প্রেমলতা চৌধুরিকে আগামী বছর লোকসভা ভোটের পরেই হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনে উচানা কালান থেকে জেতানোর জন্য সওয়াল করেন। প্রেমলতা হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহের স্ত্রী ও হিসারের সাংসদ বিজেন্দ্র সিংহের মা। কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি ওই পরিবার দলের বিরুদ্ধে গিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। রাজনীতির অনেকের মতে, হরিয়ানার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ওই পরিবারকে খুশি করতেই প্রেমলতাকে উচানা কালান থেকে দাঁড় করানোর কথা বলেন বিপ্লব। তাতে প্রবল খেপে যান ওই কেন্দ্রের জয়ী বিধায়ক দুষ্মন্ত।
গত বিধানসভা ভোটের পরে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে দুষ্মন্তের দল। ভোটের লড়াইয়ে প্রেমলতাকে ওই উচানা কালান থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন দুষ্মন্ত। ফলে নিজের জেতা কেন্দ্র আদৌ ছাড়তে রাজি যে তিনি নন, তা মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দিয়ে এসেছেন দুষ্মন্ত। সূত্রের মতে, নিজের বিধানসভা আসন ছাড়াও লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে দশটির মধ্যে তিনটি আসন চেয়ে রেখেছেন তিনি। কিন্তু গত বার দশটির মধ্যে দশটি আসনেই জেতা বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে জেজেপিকে আসন ছাড়া যে কার্যত দুঃসাধ্য, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর পরে জেজেপি সরাসরি সমর্থন তোলার সিদ্ধান্ত না নিলেও দুই শরিকের মতপার্থক্যের সুযোগ নিতে এগিয়ে এসেছেন গোপাল কান্ডা-সহ একাধিক নির্দল বিধায়কেরা। প্রয়োজনে ওই নির্দলেরা বিজেপিকে সমর্থন করতে প্রস্তুত বলে ইতিমধ্যেই বিপ্লব দেব ও খট্টরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মতে, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি সামান্য নড়বড়ে হলেও হরিয়ানায় সরকার পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যে ভাবে দুই রাজ্যে শরিকদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তা আশু মিটিয়ে ফেলাই কাম্য। কারণ আসন্ন লোকসভা ভোটে ভাল ফলের লক্ষ্যে ওই দুই রাজ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দল। সম্প্রতি কর্নাটক ও হিমাচলপ্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। ফলে কমে আসছে বিজেপিশাসিত রাজ্যের সংখ্যা। এই আবহে বৈঠক করার চেয়ে আগে বিবদমান রাজ্যগুলিতে শান্তি ফেরাতে তৎপর হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy