Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rashtriya Swayamsevak Sangh

একদা ‘নিষিদ্ধ’ আরএসএস করতে সরকারি কর্মীদের ছাড় কেন? বিরোধীদের প্রশ্ন, জবাবে কী বলল সঙ্ঘ?

১৯৬৬ সালের সরকারি নির্দেশিকা বদল করে গত ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ এবং প্রশিক্ষণ দফতর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে সরকারি কর্মীদের আরএসএসের কর্মসূচিতে যোগদানের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৬:০৫
Share: Save:

সরকারি কর্মীদের আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ) করার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের নিশানায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে খোলাখুলি সঙ্ঘের খোলাখুলি অনুপ্রবেশ ঘটবে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, বিজেপির তরফে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

১৯৬৬ সালের সরকারি নির্দেশিকা বদল করে গত ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ এবং প্রশিক্ষণ দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। তাতে সমস্ত স্তরের সরকারি কর্মচারী এবং আধিকারিকদের আরএসএসের কর্মসূচিতে যোগদানের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরএসএস এবং জামাতে ইসলামির কর্মসূচিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ১৯৮০ সালে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় সোমবার দাবি করেছেন, ছ’দশক আগেকার ওই নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক ছিল। অন্য দিকে, আরএসএসের প্রচার বিভাগের প্রধান সুনীল অম্বেকর বলেন, ‘‘গত ৯৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নিরলস ভাবে সমাজের উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনের কাজ করে আসছে। ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাদের উপর বিভিন্ন সময় নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এবং আমলাতন্ত্রে খোলাখুলি সঙ্ঘের অনুপ্রবেশ ঘটবে।

১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস অতীতে তিন বার নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়েছে। প্রথম বার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীহত্যার পরে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অনেক নেতাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন সে সময়। ১৯৪৯-এর জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিলেন বল্লভভাই। এ বিষয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠির জবাবে বল্লভভাই লিখেছিলেন, ‘আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, হিন্দু মহাসভার একটি কট্টরপন্থী অংশ ষড়যন্ত্রে (গান্ধীহত্যা) জড়িত। আরএসএস সরকার এবং দেশের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক।’

গান্ধীহত্যার আগে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় কংগ্রেস, মহাত্মা গান্ধীর পাশাপাশি জাতীয় পতাকাকেও আক্রমণ করে বিতর্কে জড়িয়েছিল আরএসএস। আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজ়ার’-এ সঙ্ঘের তৎকালীন কর্ণধার এমএস গোলওয়ালকর লিখেছিলেন, ‘হিন্দুরা কোনও দিনই তিন রঙের পতাকা মানবেন না, কারণ তাঁরা তিনকে অশুভ মনে করেন!’

শেষ পর্যন্ত অবশ্য সঙ্ঘ পরিবার মুচলেকা দিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার পরে নরম হয়েছিলেন বল্লভভাই। ধৃতেরাও মুক্তি পেয়েছিলেন। যদিও এখনও নিয়মিত ভাবেই সঙ্ঘের নেতা-কর্মীদের একাংশের নামে গান্ধী-ঘাতক নাথুরাম গডসের নামে জয়ধ্বনির অভিযোগ ওঠে। দ্বিতীয় বার ১৯৭৫-৭৭ জরুরি অবস্থার সময় নিষেধাজ্ঞার কোপ পড়েছিল আরএসএসের উপর।

আরএসএসের বিরুদ্ধে তৃতীয় তথা শেষ বার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। উন্মত্ত করসেবকদের হামলায় অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পরে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সরকারের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবি চহ্বাণ আরএসএসের পাশাপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন ‘জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ’ ও ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-কেও নিষিদ্ধ করেছিলেন সে সময়। যদিও ট্রাইব্যুনালের সামনে নিষেধাজ্ঞা জারির যুক্তিগুলি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Rashtriya Swayamsevak Sangh RSS Government Emplyee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy