চিনের একটি বার্ড হাইড। এ ভাবেই আড়ালে বসে চলে পাখি দেখা ও ছবি তোলা। ছবি: সুজন চট্টোপাধ্যায়।
জঙ্গলের মধ্যে কিছুটা পরিষ্কার জায়গার একপাশে ছোট্ট ঘেরাটোপ। সেখানে ছোট জানলার ও-পাশে ক্যামেরা হাতে বসে পাখির ছবিশিকারিরা। কয়েক হাত দূরেই নানা পাখির আনাগোনা। তারা আসছে স্নান করতে বা খাবার খেতে। আর ‘বার্ড হাইড’-এর আড়ালে থেকে সেই সব পাখিদের ফ্রেমবন্দি করছেন ছবিশিকারিরা।
বিদেশে জনপ্রিয় এই ‘হাইড’ প্রচারের আলোয় আসছে ভারতেও। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড, উত্তরবঙ্গের বক্সা, লাটপাঞ্চারে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে এমনই কিছু ‘বার্ড হাইড’। সেই সঙ্গে নিয়মিত খাবার দিয়ে পাখিদের নির্ভরশীল করে তোলা, ‘কল’ দিয়ে (পাখির ডাক নকল করা) তাকে খোলা জায়গায় ডেকে আনার মতো বেআইনি কাজের রমরমাও শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। পাখিদেখিয়ে এবং ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সদস্য সুদীপ্ত রায়ের কথায়, ‘‘এ রাজ্যে হাইড ঠিক ভাবে করা গেলে পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। দেশ-বিদেশ থেকে ছবিশিকারি ও পাখিদেখিয়েরা আসতে পারেন। তবে হাইডে বেআইনি কাজ লাগামছাড়া হওয়ার আগেই পদক্ষেপ করা উচিত সরকারের।’’
কোনটা বেআইনি? পাখিদেখিয়ে মহলের একাংশ জানাচ্ছে, চিন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় ‘হাইডে’ খাবার দিয়ে পাখি ডেকে আনার চল রয়েছে। ফলমূল, শস্যের দানা, ভাত, রুটি এমনকি মুরগির কাঁচা মাংসের টুকরো— দেওয়া হয় এমন অনেক কিছুই। উত্তরবঙ্গে টাইগার হিল যাওয়ার রাস্তায় খাবারের স্টলের পিছনের পাঁচিলে ফেলে দেওয়া খাবার খেতে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, যার অপেক্ষায় থাকেন ছবিশিকারিরা। সেখানে সরকারি তরফে পাখিদের ‘কল’ দেওয়া বারণ থাকলেও খাবার নিয়ে কোনও কথা বলা নেই। স্থানীয় মন্দিরেও রয়েছে পাখি খাওয়ানোর চল। সুদীপ্তের কথায়, ‘‘পাখিদের খাবার দেওয়া অপরাধ। কারণ, এতে ওরা আমাদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। অথচ ভাল ছবি তুলিয়ে রোজগারের আশায় সেটাই করেন কিছু হাইড-মালিক।’’
উত্তরবঙ্গে পাখিদেখিয়েদের স্বর্গ লাটপাঞ্চারে একাধিক ‘হাইড’ তৈরি হয়েছে। তারই একটির মালিক সঞ্জয় রাই জানাচ্ছেন, উত্তরাখণ্ডের এক গাইডের সূত্রেই ‘হাইডে’র সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তবে তাঁর ‘হাইডে’ জল দিলেও খাবার দেওয়া হয় না বলেই দাবি। ‘‘আগে পাখি শিকার করতাম। এখন পাখি সংরক্ষণের কাজ করি। জানুয়ারি-এপ্রিল এখানে জল কমে যায়, তাই পাখিদের স্নানের জন্য হাইডে জল রাখি। আগে খাবার দিতাম, এখন দিই না। ফটোগ্রাফারেরা ‘কল’ দেওয়ার আবদার করলেও তাঁদের বুঝিয়ে নিরস্ত করি।’’ উত্তরবঙ্গের আরও এক ‘হাইড’ মালিক জানালেন, শীতের সময়ে পাখির স্নানের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে। তাই তাঁর হাইডে থাকে শুধু জলের ব্যবস্থাই। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেই জলের টানেই আসে স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখিরা। ক্যামেরা হাতে তখন ভিড় জমান পাখিদেখিয়েরাও।
রাজস্থানের প্রধান মুখ্য বনপাল অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ দেশের ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট’-এ পাখি বেচাকেনা, পাখিশিকার, ক্ষতি করতে পাখির বাসার কাছাকাছি যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাখিকে খাওয়ানো সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘রাজস্থানে ‘হাইড’ সরকারি ভাবে প্রচার করা হয় না। তবে কেউ নিজের জমিতে করলে ক্ষতি কিছু নেই। কারণ, খাবার দিয়ে পাখিদের ক্ষতি করা হচ্ছে, সেটা প্রমাণ করতে পারলে তবেই তা কোর্টে দাঁড়াবে। তাই হাইড-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে, বুঝিয়েই এই সমস্যা মেটানোর পক্ষপাতী আমি।’’
‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সেক্রেটারি সুজন চট্টোপাধ্যায়ের নিয়মিত আনাগোনা দেশে-বিদেশের বার্ড হাইডে। তিনি বলছেন, ‘‘তাইল্যান্ডে আগে যেখানে পাখি শিকার হত, এখন সেখানেই হাইড তৈরি করে রোজগার করছেন স্থানীয়েরা। পাখি শিকারও বন্ধ হয়েছে। আমাদেরও তা শেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy