ছবি: এপি।
ঘর থেকে দূরে আছি তো কী হয়েছে, মেয়ের সঙ্গে এমনিতে একবেলা কথা না-হলে আমার ভিতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে যায়। সেই আমার আজ, চারদিন হল মেয়ের সঙ্গে কথা হয়নি।
শনিবার শেষ বার ফোনে বেশি ক্ষণ কথা বলেনি মেয়েটা! বলে কী, ‘পাপা এখন আমি কত বড় হয়ে গিয়েছি, স্কুলের পরীক্ষার পড়া আছে।’ ইকরার বয়স মোটে ছ’বছর হলে কী হবে কথা শুনে সেটা আপনি বুঝবেন না! দুই ছেলের পরে একমাত্র মেয়ে— জীবনে ও-ই আমার কাছে ‘গড্স গিফ্ট!’ (ঈশ্বরের উপহার)।
বলুন তো, ঘর থেকে দূরে চাকরি করছে বলে যদি মেয়ের সঙ্গেই দিনের পর দিন ফোনে কথা না-হয়, তাহলে সেই চাকরি করে লাভটা কী? শ্রীনগরের সানোয়ারে আমার বৌয়ের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছে রবিবার রাতে। ওর শরীরটা খুব খারাপ ছিল তখন! আমায় বলছিল কিডনির কি-সব পরীক্ষা করাতে বলেছে ডাক্তার। কিন্তু যাবে কী করে? রাস্তায় তখনই সব গাড়ি চলা বন্ধ। বাড়িতে কথা সেই শেষ বার। অবস্থা যে এর পরে আরও খারাপ হবে, তখন কিছুই বুঝিনি।
১৯৮৭ সালে স্কুল থেকে বেরিয়েই জম্মু-কাশ্মীর স্টেট এম্পোরিয়ামের কাজে ঢুকেছি আমি। দেখতে দেখতে এখন ‘সেল্স এগজ়িকিউটিভ’। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গোয়া, গ্যাংটক— কত জায়গায় তো থাকলাম। কলকাতার মতো ভাল কোথাও লাগে না! এর আগে ২০০৩-২০০৯ এখানে থেকেছি। দু’বছর আগে ফের এখানেই পোস্টিং চেয়ে নিলাম। শেষ বার বাড়ি গিয়েছি আট মাস আগে! আমার বৌয়ের মুম্বই বেশি ভাল লাগে। আমায় বলে, কলকাতায় গেলে আমি না কি শ্রীনগরে ফিরতেই চাই না! সে-ই আমারই এখন কলকাতাকেও ভাল লাগছে না।
গত জুম্মাবারে বাড়িতে একটু মাংস রান্না করে খেয়েছি। এখন ভাত-লাউয়ের তরকারিটারি যা পারছি, একটু মুখে তুলছি জানটুকু বাঁচিয়ে রাখতে। আমার ভিতরটা সব সময়ে যে কী হচ্ছে, তা আমিই জানি!
কখনও পরিবার, বন্ধু বা বোন— দিনে চার-পাঁচবার আমার শ্রীনগরে কথা হতো! এ ভাবে চলতে থাকলে আর কাজ করে কী লাভ! আগে কাশ্মীরে ঝামেলা হলে অন্তত বিএসএনএলটা চলত দেখেছি। এ বার তো কাশ্মীরের সব দরজাই দেখি বন্ধ। অফিসে লোক বেশি নেই তাই এ বার ইদে আমি বাড়ি যাব না-ই বলেছিলাম। কিন্তু এখন ভাবছি ইদের পরে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চার-পাঁচদিন আরও দেখব, তারপরও এমন চলতে থাকলে যে ভাবেই হোক, দেশে পৌঁছতেই হবে।
৩৭০ ধারা-টারা আমি কিছু বুঝি না, বিশ্বাস করুন, তবে ফোন না-পেয়ে মনে হচ্ছে কাশ্মীর যেন সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। হাল ঠিক না-হলে আমি বরং বদলি নিয়েই বাড়ি ফিরব। আর কিছুতেই শ্রীনগর ছাড়ব না! বাঁচি, মরি মেয়েটার গলা না-শুনে আর থাকতে পারছি না।
(লেখক জম্মু কাশ্মীর স্টেট এম্পোরিয়ামে কর্মরত)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy