ছবি: এএফপি।
খবরটা শোনার পর নিজের মোবাইল থেকে প্রথমেই ঠাকুরমাকে ফোন করেছিলেন মুজাম্মিল আহমেদ শাহ। প্রায় আড়াই মাস পর সোমবার দুপুর ১২টা থেকে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায় ফের চালু হয়েছে পোস্টপেড মোবাইল পরিষেবা। সে খবর শোনার পরই ঠাকুরমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন মুজাম্মিল।
কেন? শ্রীনগরের আইনপড়ুয়ার চোখেমুখে খুশির ছায়া। মুজাম্মিল বলেন, ‘‘কখন ১২টা বাজবে, সেই অপেক্ষায় বসে ছিলাম। আমাদের বলা হয়েছিল, সে সময়ই পোস্টপেড মোবাইল লাইন চালু হবে। মা-বাবার জন্য চিন্তা তো হয়ই। তবে তাঁদের সঙ্গে ল্যান্ডলাইনে বেশ কয়েক বার কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু ঠাকুরমার জন্য আরও বেশি চিন্তা হত। সব সময় তো ফোনের কাছে এসে কথা বলতে পারতেন না তিনি! ওঁর গলা শুনে ফের যেন আশ্বস্ত হলাম।’’
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং রাজ্যের বিভাজনের দিন সেই ৫ অগস্টের পর ৭২ দিন কেটে গিয়েছে। সে সময় থেকেই উপত্যকায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কড়াকাড়ি। জারি করা হয়েছে কার্ফু, স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ, বন্ধ ল্যান্ডলাইন, মোবাইল থেকে শুরু করে ইন্টারনেট সংযোগ— যাবতীয় যোগাযোগের মাধ্যমও। পরে অবশ্য স্কুল-কলেজ খুললেও, তাতে দেখা মেলেনি পড়ুয়াদের। সরকারি অফিসেও আসননি কর্মীরা। সেই অবস্থা থেকে এ দিন দুপুরে শুরু হল পোস্টপেড পরিষেবা। প্রায় ৪০ লক্ষ পোস্টপেড মোবাইল গ্রাহক এতে উপকৃত হবেন। তবে এখনও কাশ্মীরে ইন্টারনেট বা প্রি-পেড মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতে অবশ্য উৎসাহের খামতি নেই উপত্যকার অধিকাংশ মানুষের। শ্রীনগরের লালচকে আপাতত বইছে খুশির হাওয়া। তবে সব মানুষের হাতে তো পোস্টপে়ড মোবাইলের সুবিধা নেই। তা সত্ত্বেও ঘন ঘন মোবাইলের রিংটোন শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সনিয়া গাঁধী ‘মৃত ইঁদুর’, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা কংগ্রেসের
তবে লালচকের খুশির ছোঁয়া যেন স্পর্শ করতে পারেনি শ্রীনগরের এক বাসিন্দার মনে। বাড়ির বাইরে বেরোনর আগে ঘরেই ফেলে এসেছিলেন নিজের মোবাইলটি। তাঁর কথায়, ‘‘এতে আমার কোনও তফাৎ হবে না... মোবাইল পরিষেবা চালু করা ছাড়াও এমন অনেক ইস্যু রয়েছে যা আগে নিষ্পত্তি করা দরকার। তবে হ্যাঁ, আজকালকার দিনে এটা তো একটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার। তাতে হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলল।’’
আরও পড়ুন: “মহাত্মা গাঁধী কী ভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন?” প্রশ্ন গুজরাতের এক স্কুলের পরীক্ষায়
মুজাম্মিলের মতোই এ দিন নিজের মোবাইল থেকে বেশ কিছু কল করেছেন উপত্যকার এক দোকানি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘ফোনলাইন চালু হওয়ার পর এখন মনে হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবন বলতে কী বোঝায়, আর কেমন করে তা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কাশ্মীরের বাইরের মানুষের কাছে যা সহজেই মেলে, তা আমাদের কাছে তা অভাবনীয়!’’
জম্মুতে অগস্টের মাঝামাঝি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হলেও তা ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে গত মাসে ল্যান্ডলাইন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই বিএসএনএলের ফোনলাইন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, উপত্যকায় ৮৪ লক্ষ ফোনের সংযোগ রয়েছে। তবে পোস্টপেড চালু হলেও এখনই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা পাবেন না উপত্যকার প্রায় ৩০ লক্ষ প্রি-পেড গ্রাহক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy