অবশেষে দিল্লিতে বাংলা আকাদেমি স্থাপন হতে চলেছে। দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দিল্লিতে বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়ের চৌকাঠ পার করলো। দিল্লি সরকারের কাছেও এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
১৯৫৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের হাত ধরে দিল্লিতে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়শন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বাংলা আকাদেমি তৈরির উদ্যোগ জোরদার হল।
দিল্লিতে বর্তমানে অনেকগুলি ভাষার আকাদেমি রয়েছে। যেমন, হিন্দি আকাদেমি, পঞ্জাবি আকাদেমি, উর্দু আকাদেমি, মৈথিলী, ভোজপুরী আকাদেমি, সিন্ধি আকাদেমি, সংস্কৃত আকাদেমি। কিন্তু বাংলা আকাদেমি নেই। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেনগুপ্ত বলেন, “দিল্লিতে এই মুহূর্তে প্রায় ২৫ লক্ষ বাঙালি। বাংলা স্কুলের সংখ্যা প্রায় ১২, বাঙালি পরিচালিত মন্দির রয়েছে প্রায় ২৫টি, বাংলা নাট্য সংস্থার সংখ্যা প্রায় ৩০ এবং বাংলা সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে অন্তত আরও ৩০টি। সর্বোপরি বাঙালিদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর সংখ্যা এখন পাঁচশোরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি পরমুখাপেক্ষী না থেকে একটি নিজস্ব আকাদেমি তৈরি করে তাদের সমস্ত কাজকে বাস্তবায়িত করতে পারে।’’
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বাংলা একটি মধুর ভাষা, রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত সে কথা স্বীকার করেছে। দিল্লির বাঙালি যদি বাংলা ভাষার চর্চায় কাজ করতে চায় তবে আমরা তাকে সবরকম সাহায্য করতে আগ্রহী।’’
বাংলা আকাদেমির কাজ ও তার পরিধি সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে স্থির হয় যে প্রধানত বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার, বয়স্ক শিক্ষা ও তাদের উন্নতিবিধান, বিশেষ করে বয়স্ক নারীশিক্ষা, দিল্লিতে বাঙালিদের জন্য একটি তথ্যমূলক বাংলা লাইব্রেরি এবং উপযুক্ত পাঠগৃহ নির্মাণ।
সাহিত্য আকাদেমির প্রাক্তন সম্পাদক ইন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, “দিল্লি সরকারের কাছে আমরা বাংলা আকাদেমির জন্য আবেদন করছি। আশা করি আমাদের এই আবেদন যথেষ্ট সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচিত হবে এবং খুব শীঘ্রই আমরা বাংলা আকাদেমির কাজ শুরু করব।’’বেঙ্গল অ্যাসোসিয়শনের তরফ থেকে সর্বসন্মতিক্রমে অধ্যাপক ইন্দ্রনাথ চৌধুরীকে বাংলা আকাদেমির কর্ণধার নির্বাচন করা হয়।
এর আগে বেশ কয়েক বার বাংলা আকাদেমি গঠনের চেষ্টা হলেও তা সরকারি গাফিলতিতে বাস্তবায়িত হয়নি। প্রাক্তন ইনস্পেক্টর জেনারেল দেবাশিস বাগচী বলেন, “আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে এই চেষ্টা হলেও তা সঙ্গবদ্ধতার অভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।’’ বেশ কয়েক বছর আগে উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর শীলা দীক্ষিতের কাছে আবেদন গেলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
সময়ের হাত ধরে দুনিয়া বদলাছে। দিল্লির প্রবাসী বাঙালিরা বাংলা ভাষার চর্চা থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছেন। বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে ইংরেজি, এমনকী, হিন্দিও বাংলার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। এই পরিস্থিতিতে বাংলা আকাদেমি বাংলা ভাষার চর্চাকে নতুন অক্সিজেন যোগাবে বলে আশা করছে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন। শুধু বাংলা ছবি প্রদর্শন অথবা বাংলা গানের অনুষ্ঠান নয়, বাংলা ভাষা, শব্দ, ব্যাকরণ নিয়ে গবেষণার কাজ করবে এই আকাদেমি। কী ভাবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলিতে বাংলা বিভাগ চালু করা যায়, বাংলা স্কুলগুলিকে পুনর্জীবিত করা যায়, সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হবে বাংলা আকাদেমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy