অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের বিবাদ মেটাতে রাজস্থানেও বিধানসভা ভোটের আগে ‘কর্নাটক মডেল’ বেছে নিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। যুযুধান দুই নেতার মধ্যে ভারসাম্যের নীতি নিয়ে বৃহস্পতিবার গড়া হল ২৯ সদস্যের নির্বাচন কমিটি। তাতে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত এবং পাইলট দু’জনেই। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি গোবিন্দ সিংহ দোতাসরা। যিনি একদা ‘গহলৌত ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত হলেও বর্তমানে দু’গোষ্ঠীর সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
চলতি বছরের শেষে রাজস্থান বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার প্রস্তুতি এবং দুই নেতার বিবাদ মেটাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল রাহুল গান্ধী মরুরাজ্যের নেতাদের সঙ্গে গত ৬ জুলাই দিল্লিতে চার ঘণ্টা টানা বৈঠক করেছিলেন। পাইলট বৈঠকে হাজির থাকলেও পায়ে চোট পাওয়ায় গহলৌত দিল্লি না এসে জয়পুর থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেন। গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে পাইলট তিনটি বিষয়ে সরব ছিলেন— এক, বসুন্ধরা রাজে সরকারের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করতে হবে। দুই, সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের নিয়োগের মাপকাঠি তৈরি করতে হবে। তিন, চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
তিনটি দাবিই রাহুল মেনে নেওয়ায় বিরোধিতার আবহ কিছুটা প্রশমিত হয় বলে দলের একটি সূত্রের খবর। এর পর চলতি মাসেই ২১ জন সহ-সভাপতি ৪৮ জন সাধারণ সম্পাদক-সহ একাধিক পদাধিকারী নিয়োগ করা হয়েছিল রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের সরকারের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ চালাতে গিয়ে ‘ব্যর্থ’ হয়েছিলেন পাইলট। রাজস্থানের তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাঁর অনুগামী ১৯ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লির কাছে একটি রিসর্টে গিয়ে উঠেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী পাইলটের এই পদক্ষেপে কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয় যে, বিজেপির সহায়তায় তিনিও রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার ফেলে দিতে পারেন। তবে কিছু দিন পরেই বিদ্রোহে ইতি টানেন প্রয়াত রাজেশ পাইলটের পুত্র। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে।
আরও পড়ুন:
এর পর গত তিন বছর ধরেই পাইলট রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইছেন। গত অক্টোবরে ‘লক্ষ্যের’ কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ছিল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন। প্রাথমিক ভাবে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তখন গহলৌতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি সভাপতি হলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন পাইলট, এ রকমই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে সময়ই গহলৌত অনুগামী ৮২ জন বিধায়ক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁরা এআইসিসি প্রতিনিধিদের বৈঠকেও হাজির হননি। শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে সরিয়ে দিয়েছিল গহলৌতকে। কিন্তু পাইলটের ‘ভাগ্য’ ফেরেনি।