সংসদে ঢুকছেন অরুণ জেটলি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে জিনিসপত্রে দাম কমানোটা এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মধ্যবিত্তের অসন্তোষ কমাতে ব্যক্তিগত আয়করে কিছুটা ছাড় ও সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন অরুণ জেটলি। এবং করের হার বা কাঠামোয় কোনও বদল না করেই এটা করেছেন তিনি।
মোদী সরকারের প্রথম সাধারণ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জেটলি ঘোষণা করলেন, আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য এখন আর কোনও আয়কর দিতে হবে না। এত দিন এই ছাড়ের পরিমাণ ছিল দু’লক্ষ টাকা। ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য এই ছাড়ের পরিমাণ আড়াই লক্ষ থেকে বাড়িয়ে করা হল তিন লক্ষ টাকা।
এখানেই থেমে থাকেননি জেটলি। আয়করে সাশ্রয়ের জন্য আরও দু’টি দাওয়াই দিয়েছেন করদাতাদের। এক, ৮০সি ধারায় ছাড় পাওয়ার সুযোগ ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়েছেন। দুই, গৃহঋণে সুদের ক্ষেত্রেও ছাড়ের সুযোগ বাড়িয়েছেন ৫০ হাজার টাকা।
আয়কর বিধির ৮০সি ধারায় জীবনবিমা, ভবিষ্যনিধি প্রকল্প (পিএফ), ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট ইত্যাদিতে এত দিন ১ লক্ষ টাকা ছাড় মিলত। অর্থমন্ত্রী তা বাড়িয়ে দেড় লক্ষ টাকা করেছেন। করযোগ্য আয় বের করার আগে এটা মোট বেতন থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিপিএফ) বাৎসরিক সঞ্চয়ের সুযোগও এক লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লক্ষ টাকা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে।
গৃহঋণের উপরে যে সুদ পরিশোধ করতে হয় সেই খাতে এত দিন দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যেত। এই ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে এখন করা হল সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা। আয়কর আইনের ২৪ নম্বর ধারায় এটা মোট বেতন হিসেব করা আগে বাদ দেওয়া হয়।
বস্তুত অদূর ভবিষ্যতে প্রত্যক্ষ কর বিধি চালু করার প্রস্তাব থাকায় ইউপিএ জমানায় ব্যক্তিগত আয়করে ছাড় বিশেষ বাড়েনি। গত দুই আর্থিক বছর ধরে তা ২ লক্ষ টাকাতেই থেমে ছিল। এ বার চাকুরিজীবীদের দাবি ছিল, এই ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা করা হোক। কিন্তু বাজেট পেশের পর জেটলি বলেন, “ব্যক্তিগত করদাতাদের আরও সুরাহা দিতে পারলে খুশিই হতাম। তবে আর্থিক ঘাটতির পরিস্থিতিতে সেই বিলাসিতার সুযোগ বিশেষ ছিল না। তাই সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটা সম্ভব সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”
কিন্তু এতে কতটা সুরাহা হতে পারে ব্যক্তিগত করদাতাদের? হিসেব করে দেখা যাচ্ছে:
• আড়াই লক্ষ টাকা বা তার কম আয়ে কোনও আয়কর দিতে হবে না। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এটা ৩ লক্ষ।
• বার্ষিক আয় যাঁদের আড়াই লক্ষ টাকার বেশি, তাঁরা প্রত্যেকেই বছরে কমপক্ষে ৫,১৫০ টাকা কম আয়কর দেবেন গত বারের চেয়ে।
• ৮০সি খাতে শুধু সঞ্চয় বাবদ যতটা ছাড় মেলে তার পুরো সুযোগ নিতে পারলে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ১ টাকাও আয়কর দিতে হবে না।
• ৮০সি-তে শুধু সঞ্চয় বাবদ যতটা ছাড় মেলে তার পুরো সুবিধা নিতে পারলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে সাশ্রয় হবে অন্তত ১০,৩০০ টাকা। গৃহঋণের সুদ শোধ করার জন্য সর্বাধিক ছাড়ের সুযোগ নিলে ওই আয়সীমায় ন্যূনতম সাশ্রয় হবে ১০,৩০০ টাকা।
• বছরে ১০ লক্ষের বেশি আয় যাঁদের, তাঁরা আয়করে অন্তত ২০,৬০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন।
তবে মধ্যবিত্তদের এই সাশ্রয় দেওয়ার নেপথ্যে অনেকে রাজনীতি দেখছেন। তাঁদের মতে, মোদীর ‘আচ্ছে দিন’ আসার স্লোগানে ভরসা করে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় অংশ এ বার লোকসভা ভোটে দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি থেকে রেহাই না পেয়ে তাঁদের অনেকেই সমালোচনা শুরু করেছেন। তাই তাঁদের কিছুটা সুরাহার ব্যবস্থা করল সরকার।
যদিও এই পদক্ষেপ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর যুক্তিও রয়েছে। তাঁর কথায়, ২০০৯-’১০-এর তুলনায় ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে সঞ্চয়ের হার ৩৩.৭ শতাংশ থেকেকমে দাঁড়িয়েছে ৩০.১%। অথচ সঞ্চয় বাড়লে ও তা কার্যকরী ভাবে ব্যবহার করলে তা বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে। তাই সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থাগুলিরও দাবি ছিল। এ ছাড়াও সঞ্চয়ে আগ্রহ বাড়াতে বাজেটে আরও কিছু ঘোষণা করেছেন জেটলি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, নতুন করে কিষাণ বিকাশ পত্র (কেভিপি)-র প্রচলন। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার ২০১১ সালে এই সঞ্চয় প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছিল। বাজেট বক্তৃতায় জেটলি জানান, এই প্রকল্প নতুন করে শুরু হবে। ব্যাঙ্কে জমা টাকা বা নগদ অর্থের মাধ্যমে কিষাণ বিকাশ পত্র কেনা যাবে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ সঞ্চয়ে উৎসাহ দেবে বলেই তাঁর মত। তবে অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, নগদ অর্থের মাধ্যমে কিষাণ বিকাশ পত্র কেনার ব্যবস্থা করে আসলে বাজারের কালো টাকার মজুত বন্ধ করতে চাইছে সরকার।
কেভিপি চালু করার পাশাপাশি ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট-এর ক্ষেত্রে আমানতকারীদের সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেট কিনলে এ বার ফেরত ছাড়াও বিমার সুযোগও মিলবে। তা ছাড়া কন্যা শিক্ষা ও বিয়ের জন্যও নতুন একটি সঞ্চয় প্রকল্প শুরু করবে সরকার। জেটলির এ-ও আশা, গৃহঋণে দেয় সুদ বাবদ ছাড়ের হার বাড়ানোর ফলে আবাসন ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
তবে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “ব্যক্তিগত আয়করে যে ছাড়ের ঘোষণা করেছে সরকার, তা লোক দেখানো। প্রথমত, গরিব মানুষের এতে উপকার হবে না। দ্বিতীয়ত, মধ্যবিত্তকে সামনে থেকে এই ছাড়ের গাজর দেখিয়ে পিছন থেকে তা আদায়ের ব্যবস্থাও করছে সরকার। এমনিতেই রেলের ভাড়া বেড়েছে। তার ওপর পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে কেন্দ্র। তাই যেটুকু সাশ্রয় হবে জীবনযাপনের জন্য তার থেকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে মানুষকে। আশা করি, মোদী সরকারের এই ধোঁকা বুঝতে কারও অসুবিধা হবে না।”
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন....
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy