রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। ছবি: পিটিআই।
জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের স্বতন্ত্র পরিচয় আদৌ সঙ্কটে পড়েনি বলে স্বাধীনতা দিবসে আশ্বাস দিলেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। কিন্তু হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও থমথমে এবং ‘অ-স্বাভাবিক’ কাশ্মীরের গৃহবন্দি ছবিটা এড়ানো গেল না। প্রশাসন অবশ্য স্বস্তিতে। কাশ্মীরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোহিত কানসল সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘সব জেলায় মহা সমারোহে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’
শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অবশ্য আজ উপস্থিত থাকলেন ৫০০ জন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আবার আমলা। এক দলকে আনা হয়েছিল আবার কাশ্মীরের বাইরে থেকে। জাতীয় পতাকা নিয়ে ‘ভারত মাতা কি জয়’ শ্লোগান দেন তাঁরা। দিল্লি থেকে প্রায় ১৫০ জন সাংবাদিক থাকলেও কাশ্মীরের সাংবাদিকদের মধ্যে অল্প কয়েক জন হাজির ছিলেন। কারণ, উপত্যকায় নিষেধাজ্ঞার জেরে প্রকাশিত হচ্ছে না সেখানকার অধিকাংশ সংবাদপত্রই। ওই অনুষ্ঠানেই মালিক বলেন, ‘‘সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপের ফলে রাজ্যে কাশ্মীরি, ডোগরি, গোজরি, পাহাড়ি, বালটি, শিনার মতো ভাষার প্রসার ঘটানো যেতে পারে। অনেক জনজাতির রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছিল না। জনজাতিভুক্ত মানুষ এ বার সেই প্রতিনিধিত্ব পাবেন।’’
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে কাশ্মীরেই রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এ দিনের অনুষ্ঠানে তিনিও ছিলেন। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য জম্মুর নৃত্যশিল্পীদের একটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল প্রশাসন। দলের প্রধান অর্চনা শর্মা বলেন, ‘‘বিকেলেই জম্মু ফিরতে হবে। কারণ, যাতায়াত বড় সমস্যা।’’
দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদ-চ্যানেলও সকাল থেকেই কপ্টার থেকে ছবি তুলে দেখাচ্ছিল যে কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাস্তব হল, বেশির ভাগ জায়গাতেই কার্ফু এবং ১৪৪ ধারা জারির ফলে রাস্তাগুলো ছিল ফাঁকা। বিশেষ মর্যাদা লোপের আগে থেকেই মূলস্রোতের কাশ্মীরি নেতাদের অধিকাংশই গৃহবন্দি। মঙ্গলবার রাতে আটক করা হয়েছিল প্রাক্তন আইএএস এবং রাজনীতিক শাহ ফয়জ়লকে। সূত্রের খবর, আজ তাঁকে শ্রীনগরের একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কাশ্মীরের মূলস্রোতের নেতারা ছিলেন না।
শ্রীনগরে নিজের বাড়ির সামনে বসেছিলেন বছর আটত্রিশের বিলাল আহমেদ। বললেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতা দিবস আমাদের পক্ষে কালো দিবস। কাশ্মীরিরা এখনও স্বাধীনতা পাননি। স্বাধীন হলে এ ভাবে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হতে না।’’ স্টেডিয়াম থেকে কিছুটা দূরেই ফাঁকা ফুটপাথে বসেছিলেন বছর সত্তরের গুলাম আহমেদও। বললেন, ‘‘বাড়িতে বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। তাই বাইরে বসে আছি।’’ জুতো সারাইয়ের কাজ করেন গুলাম। বললেন, ‘‘দশ দিন ধরে কাজ করিনি। আমি অসুস্থ। কিন্তু ওষুধ কেনার পয়সা নেই।’’
হঠাৎ মাথার উপরে হেলিকপ্টারের আওয়াজে মুখ তুলে তাকালেন গুলাম। ফাঁকা রাস্তার উপরে নজর রাখছে ভারতীয় বাহিনীর কপ্টার। কিন্তু কাদের উপরে নজরদারি, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy