পঞ্জাবের ‘পলাতক’ খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহ। — ফাইল চিত্র।
জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে তাঁর আদর্শ। প্রকাশ্যে বারে বারেই সে কথা বলেন পঞ্জাবের ‘পলাতক’ খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহ। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, নিহত ‘গুরুর’ মতোই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পঞ্জাব জুড়ে অশান্তি বাধানোর ছক কষেছিলেন ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ সংগঠনের নেতা।
স্বঘোষিত শিখ ধর্মগুরু অমৃতপাল আইএসআইয়ের মদতে পাক সীমান্তে অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানে জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, তাঁর নির্দেশেই অমৃতসরের জল্লুপুর খেরা এলাকায় অনুমোদনহীন একটি মাদক মুক্তিকরণ কেন্দ্র এবং একটি গুরুদ্বারে অস্ত্র মজুত করা ব্যবস্থা করেছিলেন ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’র নেতা-কর্মীরা।
ঘটনাচক্রে, এখানেও ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গে তাঁর মিল রয়েছে। ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাবেগ সিংহের সহায়তায় আশির দশকের গোড়ায় পবিত্র স্বর্ণমন্দিরকে কার্যত অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিলেন পঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জনক। ভারতীয় সেনার অপারেশন ‘ব্লু স্টার’-এ ভিন্দ্রানওয়ালের পাশাপাশি নিহত হয়েছিলেন সাবেগও।
ভিন্দ্রানওয়ালের কায়দাতেই স্বাধীন এবং সার্বভৌম খলিস্তান রাষ্ট্র গড়ার আহ্বান জানিয়ে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করতেন অমৃতপাল। ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’র কোনও কমিটিতেই সংগঠনের আয়-ব্যয়ের কোনও হিসাব দেওয়া হত না। খলিস্তানপন্থী আন্দোলনে হাওয়া দিতে সীমান্তের ও-পার থেকে জোগানো হচ্ছিল প্রচুর অস্ত্র, রসদ, মাদক। গত এক বছরে সীমান্তে ড্রোনের মাধ্যমে মাদকের চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় অমৃতপালের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
ভিন্দ্রানওয়ালের জমানায় তাঁর সংগঠন ‘দমদমি তখসালের’ সশস্ত্র বাহিনী উদারপন্থী শিখ এবং হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করেছে। অমৃতপালের বাহিনী আজনালা হামলা ছাড়া বড় ধরনের অশান্তি ছড়াতে না পারলেও ধারাবাহিক বিদ্বেষমূলক প্রচার চালিয়ে পঞ্জাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাতে বেশ কিছুটা সফল হয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে কৃষক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে যোগ দিয়েছিলেন অমৃতপাল। তা শেষ হওয়ার পরে তিনি দুবাইয়ে পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে ফিরে গিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দুবাই আইএসআইয়ের অন্যতম বড় ঘাঁটি। কৃষি আন্দোলনে অমৃতপালের ভূমিকা দেখে তাঁকে বেছে নেয় পাক গুপ্তচর সংস্থা। অতীতের খলিস্তানি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কোনও সম্পর্ক ছিল না অমৃতপালের। কিন্তু আইএসআইয়ের সংস্পর্শে এসেই তিনি খলিস্তানি আন্দোলন নিয়ে দুবাইয়ে প্রচার শুরু করেন।
গোয়েন্দাদের দাবি, অমৃতপালকে জর্জিয়াতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতেও পাঠায় আইএসআই। শেষে দুবাই হয়ে পাঠানো হয় ভারতে। পঞ্জাবে ফিরে এসে মাদক-বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার আড়ালে খলিস্তানপন্থী আন্দোলনের সমর্থনে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় হয়েছিলেন অমৃতপাল। তাঁর মাদক-মুক্তি কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের এত নিম্ন মানের ওষুধ দেওয়া হত, যে তাঁরা উল্টে মাদকে আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়তেন। এর পর তাঁদের ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’-র কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হত। যে কর্মসূচির এক মাত্র লক্ষ্য ছিল হিংসা ছড়িয়ে খলিস্তান গড়ার ‘মগজধোলাই’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy