ফাইল চিত্র।
গলার কাঁটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ সমাজ। গত কাল জাঠ নেতাদের সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠকের পরে আজ রাজপুত নেতা রাজনাথ সিংহকে জাঠেদের মন জয়ে মাঠে নামালেন বিজেপি নেতৃত্ব। অন্য দিকে আজ দিনভর মথুরা-বৃন্দাবনের রাস্তায় নেমে প্রচার চালালেন অমিত শাহ। উস্কে দিলেন অবধারিত একটি বিতর্ক— ক্ষমতায় এলে অযোধ্যা, কাশীর পরে এ বার মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির পালা!
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ বাকি। তার আগে মরিয়া চেষ্টা হিসাবে জাঠ নেতাদের মন জয়ে সর্বাত্মক ভাবে মাঠে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত কাল অমিত শাহ দিল্লিতে জাঠ নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। আর আজ রাজনাথ সিংহ জাঠ অধ্যুষিত মোদীনগর বিধানসভা এলাকায় প্রচারে নেমে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের জাঠ নেতা চৌধরি চরণ সিংহকে নিজের আদর্শপুরুষ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বিজেপির স্বাভাবিক শরিক হলেন জাঠেরা। তাই সাময়িক মনোমালিন্য হলেও জাঠেরা বিজেপি থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন না।
এ কথা ঠিক, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপির পিছনে শক্ত খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে জাঠ সমাজ। ২০১৩ সালে অখিলেশ সিংহের শাসনে মুজফ্ফরপুর জাঠ ও মুসলিমদের সংঘর্ষের পরে বিজেপির সঙ্গে জাঠ সমাজের সেই সম্পৃক্ততা আরও বাড়ে। ফলে গত দুটি লোকসভা ও পাঁচ বছর আগেকার বিধানসভা নির্বাচনে জাঠেদের নিরঙ্কুশ সমর্থনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত খাতা খুলতে পারেননি বিরোধীরা। কিন্তু গত এক বছরের টানা কৃষক আন্দোলন ছবিটি সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। কৃষিবহুল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কার্যত বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে উল্টে রাষ্ট্রীয় লোক দল নেতা জয়ন্ত চৌধরির নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন জাঠেরা। অনেকের মতে, জাঠে-মুসলিমে বিভাজন ঘটিয়ে গত তিনটি নির্বাচনে বিজেপি দাপিয়ে বেড়িয়েছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ। সেখানে এ যাত্রায় উল্টে বিরোধী দুই শিবিরের আঁতাঁতে স্পষ্ট পরাজয় দেখছেন বিজেপি নেতারা।
তাই জাঠেদের সমর্থন ফিরে পেতে গত কাল রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের শেষেই জাঠ নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। বৈঠকে যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়, তার মধ্যে রয়েছে জাঠেদের সংরক্ষণ, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য মন্ত্রিসভায় উপযুক্ত সংখ্যক জাঠ নেতার উপস্থিতি, আখের উপযুক্ত দাম নির্ধারণ, প্রাক্তন জাঠ নেতা চৌধরি চরণ সিংহকে ভারতরত্ন সম্মান প্রদান। বৈঠকের শেষে জাঠ নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছেন শাহ। সূত্রের মতে গত কালের বৈঠকে অমিত জাঠ নেতাদের জানান, এসপি-আরএলডি জোটের নেতা অখিলেশ হলেও আগামী দিনে এই জোটের কর্তৃত্ব চলে যাবে আজ়ম খানের হাতে। যার ফলে ভবিষ্যতে ওই জোটকে নিয়ন্ত্রণ করবেন সংখ্যালঘু ওই বাহুবলী নেতা। রাজনীতির অনেকের মতে, আজ়ম খানের নাম করে আসলে ২০১৩-১৪ সালে মুজফফরপুর দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে দিতে চেয়েছেন অমিত। লক্ষ্য আরএলডি-এসপি জোট ভেঙে জাঠ তথা হিন্দু ভোটে মেরুকরণ ঘটিয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কর্তৃত্ব বজায় রাখা। এমনকি প্রয়োজনে ভোটের পরে আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরির জন্য দরজা খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কংগ্রেসের এক নেতার কটাক্ষ, বিজেপি যত যাদব ভোটকে মরিয়া হয়ে কাছে টানার চেষ্টা করছে, তত নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পরাজয়।
প্রথম দুই দফায় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সঙ্গেই ব্রজভূমি মথুরা, বৃন্দাবন এলাকায় ভোট রয়েছে। যা মূলত যাদব অধ্যুষিত এলাকা। ওই এলাকায় যাদবেরা এ যাত্রায় সমাজবাদী পার্টিকে জেতাতে মরিয়া। সেই কারণে উচ্চবর্ণ ছাড়াও যাদব নন এমন ওবিসি সমাজকে কাছে টানতে হিন্দুত্বের উপরেই ভরসা রেখেছেন শাহেরা। আজ ব্রজভূমিতে বৃন্দাবনের বাঁকেবিহারী মন্দির দর্শন করে শাহ নিজের প্রচার অভিযান শুরু করেন। হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে প্রচ্ছন্ন ভাবে অযোধ্যা-কাশীর পরে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি নতুন করে গড়ে তোলা হবে— সেই প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে তলে তলে।
যোগী আদিত্যনাথ কিংবা কেশবপ্রসাদ মৌর্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন আগামী নিশানা শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি। অমিত শাহ নিজে এ প্রসঙ্গে নীরব থাকলেও, তবে কী ভাবে এসপি শাসনে আজম খান বা মুখতার আনসারের মতো বাহুবলী নেতারা উত্তরপ্রদেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সব শ্রেণির হিন্দু ভোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে মেরুকরণের রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন তিনিও। তিনি আজ বলেন, শুধু রাজ্যের নয়, আগামী কুড়ি বছরে উত্তরপ্রদেশ তথা দেশ কোন দিকে যাবে তা স্থির করে দেবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy