Advertisement
E-Paper

‘তুমি কে? আমি কে? সমন্বয়ক! সমন্বয়ক!’ দাবি আদায়ে সোমবার থেকে ফের পথে নামল বাংলাদেশ

আন্দোলনের এক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সোমবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এখনও অসহযোগিতা করে যাচ্ছে সরকার। তাই দেশজোড়া আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আবেদন, আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান।’’

বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশ।

বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৪
Share
Save

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাত সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে সরকারকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পেরোনোর পর সোমবার থেকে ফের রাস্তায় নামলেন বাংলাদেশের ছাত্রেরা। বুঝিয়ে দিলেন, পুরোদমে ধরপাকড় চালিয়েও ‘দাবায়ে’ রাখা যাবে না আন্দোলন।

সরকারি হিসাব বলছে, বাংলাদেশে বিগত দু’সপ্তাহে পুলিশ, মিলিটারি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৪৭ জন আন্দোলনকারী ও সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও অন্যান্য সূত্রের মতে, সংখ্যাটা ২০০রও বেশি। সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি মানুষ। আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘নিরাপত্তা’র দোহাই দিয়ে একে একে হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর পরই শনিবার একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করে নতুন তিন দফা দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেন আন্দোলনকারী ছাত্রেরা। ছাত্রদের দাবি ছিল, আটক সকল শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে গণহত্যার দায় স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত কনস্টেবল থেকে মন্ত্রী— সকলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এত মৃত্যুর জন্য জনসমক্ষে ক্ষমাও চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। সরকার সহযোগিতা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগোবেন তাঁরা।

যদিও তাঁদের ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা মানেনি হাসিনা সরকার। রবিবার সন্ধ্যার পরেও মুক্তি পাননি আটক সমন্বয়কেরা। এর পরেই রাস্তায় নেমেছেন বাংলাদেশের ছাত্রেরা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, কয়েক জন সমন্বয়ককে আটকে রেখে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। স্লোগান উঠেছে, ‘‘তুমি কে? আমি কে? সমন্বয়ক! সমন্বয়ক!’’ আন্দোলনের আর এক সমন্বয়ক আবদুল কাদের সোমবার এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এখনও অসহযোগিতা করে যাচ্ছে সরকার। তাই দেশজোড়া আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আবেদন, আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান।’’

প্রসঙ্গত, বিগত তিন সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আগুন। দলে দলে ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নামেন। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। চাকরি থেকে জনজাতিদের জন্য সংরক্ষণ বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। তার মধ্যেই সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট গত ২১ জুলাই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সাত শতাংশ সংরক্ষণ রেখে বাকি সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয়। এতে আন্দোলনের আঁচ খানিক কমলেও এখনও পুরনো ছন্দে ফেরেনি বাংলাদেশ। কার্ফু শিথিল হতে না হতেই পুরোদমে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বলছে, সোমবার পর্যন্ত ১৩ দিনে সারা দেশে দশ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সোমবারেই গ্রেফতার হয়েছেন ৪০৩ জন।

এর পর একে একে আটক হন আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। শুক্রবার বিকালে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকি‌ৎসারত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে। শনিবার আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। শনিবার ভোরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুম এবং আরিফ সোহেল নামে আরও দুই সমন্বয়ককে। এ প্রসঙ্গে রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন-অর-রশিদ জানান, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ আটক করা হয়েছে তাঁদের। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, ‘‘ওই সাত জন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে ছিল। সে জন্যই তাদের হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।’’

এর মধ্যেই সোমবার কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আটক ছাত্রদের তরফে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রবিবার পুলিশি হেফাজতে থাকা সাত ছাত্রের গোয়েন্দা পুলিশের প্রধানের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়ার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি পোস্ট করে গোয়েন্দা পুলিশ নিজেই। এর পর সোমবার আটক ছয় ছাত্র পাশাপাশি বেঞ্চে বসে একটি অনলাইন সংবাদ বৈঠক করে বলেন, ‘‘সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার করেছে। সোমবারই তাই কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস এ বার খুলে দেওয়া হোক।’’ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বিবৃতিটি পাঠ করেন। আবারও গোয়েন্দা পুলিশের তরফেই ভিডিয়োটি সংবাদমাধ্যমগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলন প্রত্যাহার কি গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত, না কি সবটাই পুলিশের চাপে? সংগঠনের অন্য সমন্বয়কেরা জানিয়েছেন— চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বিবৃতি পড়ানো হয়‌েছে নেতাদের।

ছাত্রনেতাদের গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে আটকে রাখাকে বেআইনি ঘোষণার আর্জি নিয়ে সোমবারই দুই আইনজীবী হাই কোর্টে মামলা করেন। মামলাটি গ্রহণ করে দুই বিচারপতি গোয়েন্দাপ্রধান হারুনের উদ্দেশে বলেন, “জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না! যাকে ধরে নেন, খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন। কেন করেন এ সব? কে আপনাকে এগুলা করতে বলেছে?” আজ, মঙ্গলবার ওই মামলার ফের শুনানি রয়েছে।

Bangladesh Sheikh Hasina quota Protest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।