হাথরসের ঘটনায় মারা গিয়েছেন ১২১ জন। — ফাইল চিত্র।
গত দু’দিন ধরে খুঁজে চলেছেন মাকে। উত্তরপ্রদেশের হাথরস এবং আশপাশের কোনও হাসপাতাল বাদ দেননি। বার বার ঘটনাস্থলেও গিয়েছেন মীনেশ কুমার। পণ করেছেন, এ বার মাকে খুঁজে পেলে আর কোনও দিন সৎসঙ্গে যেতে দেবেন না। মঙ্গলবার হাথরসে স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবা ওরফে নারায়ণ সাকার হরির সৎসঙ্গে বিশৃঙ্খলার কারণে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ১২৩ জন। ওই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ মীনেশের মা রামকলি দেবী।
এখনও হাথরস এবং আশপাশের হাসপাতাল, মর্গে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন বহু মানুষ। খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। তাঁদেরই এক জন মীনেশ। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীতে। মঙ্গলবার ভোলে বাবার সৎসঙ্গে যোগ দেবেন বলে সোমবার বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন ৫৪ বছরের রামকলি। মীনেশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মা বলত সৎসঙ্গে ভাল কথা বলেন ভোলে বাবা। আমি এক বার বা দু’বার গিয়েছি। মা সব সৎসঙ্গে যেতেন। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশ, যেখানেই হত, মা চলে যেতেন।’’ এই নিয়ে মাকে বার বার বাধা দিতেন মীনেশ। শোনেননি রামকলি। মীনেশের কথায়, ‘‘মাকে বলতাম, বয়স হয়েছে, যেয়ো না। কথা শুনতেন না। এখন তাঁকে খুঁজে পেলে আর কোনও দিন যেতে দেব না।’’
মীনেশ জানিয়েছেন, স্বঘোষিত এই বাবার বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানেন না। তবে এই বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তির দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনের জানা উচিত, এটা কার দোষ। ভুল সংশোধন করা উচিত।’’ মঙ্গলবার থেকে মায়ের সঙ্গে গলা আর শোনা হয়নি মীনেশের। বার বার মোবাইলে ফোন করেছেন। ফোন বেজেছে। এক মহিলা ফোনও ধরেছেন, তবে তিনি রামকলি নন। ওই মহিলা বার বার ভুল পথেই চালনা করেছেন মীনেশকে। প্রথম বার ফোন তুলে ওই মহিলা মীনেশকে আশ্বাস দেন, তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। তার পরে মীনেশ আবার ফোন করলে তিনি জানান, তাঁর মা আগরা গিয়েছেন। তৃতীয় বার মীনেশ ফোন করলেন ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?’’ এর পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ফোন। মীনেশের মতোই এখনও বহু মানুষ ঘুরে চলেছেন হাসপাতাল থেকে প্রশাসনের দফতরে। প্রিয়জনকে খুঁজে চলেছেন, আর বলছেন, ‘‘বাবা ঈশ্বর হলে ফিরিয়ে দিন প্রিয়জনকে!’’
মঙ্গলবার হাথরসের মুগলগঢ়িতে একটি ‘সৎসঙ্গ’-এর ডাক দিয়েছিলেন ‘ভোলে বাবা’। খোলা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে ‘সৎসঙ্গ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষেই ঘটে যায় বিপত্তি। হাথরসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনার তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করেছে। দায়ের হয়েছে এফআইআরও। সেই এফআইআরে ‘ভোলে বাবা’র সহযোগী তথা ‘সৎসঙ্গ’-এর প্রধান সংগঠক দেবপ্রকাশ মধুকর এবং আরও কয়েক জনের নাম থাকলেও নাম নেই নারায়ণের। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy