নেপাল ও ভুটান সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানে অন্তত ছ’টি পাচারকারী গোষ্ঠী সক্রিয় বলে সন্দেহ করছেন সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র তদন্তকারী অফিসারেরা। সেই পাচার চক্রে কাঠমান্ডু, থিম্পু, লখনউ, পটনা, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ারের কয়েকজনের নামও পেয়েছেন অফিসাররা।
এসএসবি সূত্রের খবর, সম্প্রতি চরস পাচারের ঘটনায় ধৃত নেপালের বাসিন্দা গণেশ তামাং ও কালিম্পংয়ের লুকা শেরপাকে জেরা করার পরে অফিসারদের ওই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে। তাই রাজ্য পুলিশ ও নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তদন্তকারীরা।
এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডিআইজি (প্রশাসনিক) টমাস চাকো বিষয়টির তদারকি করছেন। দার্জিলিং পুলিশের ডিএসপি (গ্রামীণ) প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে এসএসবির নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ ভাবে কাজকর্মও করা হচ্ছে। সীমান্তের বাইরের এলাকাতেও নিয়মিত পুলিশি নজরদারি চলছে।’’
২০১৭ সালে যে চোরাচালানকারীদের কাজকর্ম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল, সেকথা ধরা পড়া চোরাই মালের মূল্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ২০১৬ সালে এসএসবি ২০ কোটি টাকা মূল্যের কাছাকাছি চোরাই মাল উদ্ধার করে। সেখানে ২০১৭ সালে, সেই উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই সময়ে চোরাচালানকারীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছিল। যদিও এবছরের প্রথম দু’মাসে তা অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে এসএসবি-র অফিসারেরা দাবি করেছেন।
সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের ২০ অগস্ট পাচারের সময় শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি থেকে ১৯ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার কোকেন আটক করেন এসএসবির জওয়ানরা। নেপালের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়। তখনও আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।
পাচারসামগ্রী পাকড়াও
এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারে অধীনে ইন্দো-নেপাল ৩১৫ কিমি, ইন্দো-ভুটান ২১৫ কিমি সীমান্ত
চোরাই সামগ্রী উদ্ধার-খতিয়ান
• ২০১৫: ৯০ কোটি ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার।
• ২০১৬: ১১৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার।
• ২০১৭: ৪৬০ কোটি ৩ লক্ষ টাকার।
• ২০১৮: ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ কোটি ৮ লক্ষ টাকার।
আগ্নেয়াস্ত্র
• ২০১৬: ৮ টি দেশি, ১ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৯টি বিস্ফোরক ও কার্তুজ।
• ২০১৭: ১৭টি দেশি, ৩টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ৫৪টি বিস্ফোরক ও কার্তুজ।
• ২০১৮: ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১টি দেশি আগ্নেযাস্ত্র ও ৪ টি কার্তুজ।
মাদক দ্রব্য
গাঁজা, চরস, ফেন্সিডিল, কোকেন
• ২০১৫: ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকার।
• ২০১৬: ৪৪ কোটি ৫ লক্ষ টাকার।
• ২০১৭: ৮২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার।
• ২০১৮: ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ লক্ষ।
বন্যপ্রাণ
হাতির দাঁত, গোসাপ, প্যাঙ্গোলিনের আঁশ, চিতাবাঘের চামড়া, হরিণের চামড়া, চিতাবাঘের চামড়া, হরিণের চামড়া
প্রাথমিক তদন্তে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, একটি চক্র বনজ দ্রব্য ও বন্যপ্রাণী পাচারের কারবার করে। দু’টি চক্র মানব পাচারেও যুক্ত। তিনটি গোষ্ঠী শুধুই মাদকের কারবারে যুক্ত বলে অনুমান। এসএসবির-র অফিসারদের কথা অনুযায়ী, বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারেরও বড় ঘাঁটি হয়ে উঠেছে নেপাল ও ভুটান সীমান্ত।
আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁর নিচা বস্তি লাগোয়া এলাকা ও ঝরনা বস্তি ঘেঁষা এলাকা থেকে চোরাই কাঠ, বন্য প্রাণীর দেহাংশ ও আগ্নেয়াস্ত্র কেনা-বেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিচা বস্তিতে তোর্সা নদীর ধারে থাকা একটি গুদাম থেকে এই কারবার চালানো হয় বলেও এসএসবি জেনেছে। অতীতে ওই এলাকা থেকে একাধিকবার চন্দন কাঠ উদ্ধার হয়।
এসএসবির একটি সূত্রের দাবি, উত্তরবঙ্গ থেকে নেপালে কাজের খোঁজে যাওয়া কিছু শ্রমিককে টাকার লোভ দেখিয়ে নানা ধরনের পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মোটা মাইনের কাজের লোভ দেখিয়ে নেপাল থেকে শিশু ও যুবতীদের এনে তাদের ভারতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে দক্ষিণ ভারত এবং বিদেশে পাচার করে দেওয়ার চক্রও এই সীমান্তবর্তী এলাকাতে সক্রিয়। এসএসবির এক কর্তা জানান, এ সব অভিযোগ, তথ্য নিয়মমাফিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারপর সেখানে যা যা পদক্ষেপ করার তা তাঁরা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy