দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে নোংরা জল ঢালছেন আপ সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল। ছবি: সংগৃহীত।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশীর বাসভবনের সামনে নোংরা জল ঢেলে বিক্ষোভ দেখালেন আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল। সঙ্গে হুঁশিয়ারিও দিলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি পরিস্থিতি না শুধরোয়, তা হলে এ বার ট্যাঙ্কারভর্তি নোংরা জল নিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বহু এলাকায় জল সরবরাহ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। নোংরা এবং অপরিস্রুত জল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। আর তা নিয়েই এ বার ময়দানে নেমে পড়েছেন আপ সাংসদ। মূলত দ্বারকা, সাগরপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় অপরিস্রুত জল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সেই অভিযোগ সঠিক কি না খতিয়ে দেখার জন্য দ্বারকায় যান। সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। তার পর একটি বাড়ির কল থেকে এক বোতল অপরিস্রুত জল নেন। তার পর সেই জলের বোতল নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে গিয়ে ঢেলে দেন।
আপ সাংসদ বলেন, ‘‘সাগরপুর, দ্বারকার বাসিন্দারা আমাকে ফোন করে জলের পরিস্থিতির কথা জানান। আমি ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে অভিযোগ খতিয়ে দেখি। কল থেকে পড়া কালো রঙের এক বোতল জল ভরে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ঢেলে দিয়ে আসি।’’ স্বাতীর অভিযোগ, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যে, এ বছরই ঠিক করে দেওয়া হবে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে জলের পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যে জল নিয়ে এসেছি, সেই জলই কি খেতে হবে দিল্লিবাসীকে?’’
এর পরই স্বাতী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এখন একটি নমুনা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি জলের সমস্যার সমাধান না করা হয়, তা হলে নোংরা জলভর্তি ট্যাঙ্কার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এই জলের একটা নমুনা দিয়ে গেলাম মাত্র! তিনি এই জল দিয়ে স্নান করতে পারেন, খেতে পারেন। আবার নিজের পাপও ধুয়ে নিতে পারেন।’’ স্বাতীর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রয়েছে এই দফতর। তিনি নিজে জলমন্ত্রীও বটে। তার পরেও কী ভাবে না শুধরে দিনে দশটি করে সাংবাদিক বৈঠক করছেন?
স্বাতীর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন দ্বারকার বিধায়ক বিনয় মিশ্রও। ঘটনাচক্রে তিনি আবার দিল্লি জল বোর্ডের সহ-সভাপতি। বিধায়কের উদ্দেশে আপ সাংসদের প্রশ্ন, নিজের বিধানসভা এলাকায় জলের এত বড় সমস্যা দেখেও কী ভাবে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন? কী ভাবে এলাকার বাসিন্দাদের নোংরা জল খেতে বাধ্য করছেন? আপ সাংসদের এই অভিনব প্রতিবাদ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও মুখ্যমন্ত্রী অতিশী জানিয়েছেন, দলের জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বে এই পরিস্থিতি শুধরোনোর কাজ চলছে।
আপ শিবিরে গোড়া থেকেই কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত স্বাতী। কেজরীওয়াল ক্ষমতায় আসার পরেই দিল্লি মহিলা কমিশনের সভাপতি করা হয় স্বাতীকে। প্রায় দশ বছর ওই পদে থাকার পরে দলের টিকিটে রাজ্যসভার প্রার্থী হন স্বাতী। আপ সূত্রের খবর, তার পর থেকেই কেজরীওয়ালের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল স্বাতীর। এমনকি, আবগারি দুর্নীতিতে কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি পর্বে একবারও তাঁকে সামনে আসতে দেখা যায়নি। যা মূলত স্বাতীর সঙ্গে কেজরীওয়ালের দূরত্বকে স্পষ্ট করে দিয়েছিল দলের অভ্যন্তরে।
কেজরীওয়াল মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর প্রাক্তন সচিব বৈভব কুমারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর আবাসেই স্বাতীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। যে ঘটনার জল গড়ায় অনেক দূর পর্যন্ত। এই ঘটনা স্বাতীর সঙ্গে আপ নেতৃত্বের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই মনে করেন রাজনীতিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy