পুলওয়ামার আগে ২০১৮-১৯-এ ভারত-পাকিস্তানের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। ভারত থেকে রফতানির পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ডলার। পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছিল ৫৪ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য।
ফাইল চিত্র।
লাহোর কত দূর?
এই তো মেরেকেটে তিরিশ কিলোমিটার। পৌনে এক ঘণ্টার রাস্তা!
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের সামনে থেকে গাড়িতে উঠলে ভারত-পাকিস্তানের ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত মাত্র তিরিশ কিলোমিটারের রাস্তা। ঠিক এইটুকু রাস্তাই আরও গেলে লাহোর। কিন্তু সীমান্ত যে বন্ধ!
ভোটের সময় দেশের মানুষের নানান রকম দাবি, নানান রকম আশা থাকে। কেউ ভাবেন, এ বার বিদ্যুতের বিল কমবে। কেউ দাবি তোলেন, স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সাইকেল দিতে হবে। পঞ্জাবের নির্বাচনে ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের মানুষের একটাই দাবি। এ বার সীমান্ত খুলে ভারত-পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হোক।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় আধাসেনার কনভয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার পাকিস্তানি পণ্যের উপরে ২২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল। সেটা ছিল প্রথম ধাক্কা। ভোটের পরে মোদী সরকার কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদে বিশেষ অধিকার রদ করল। ইমরান খানের সরকার পুরোপুরিই বাণিজ্য বন্ধ করে দিল। আর তা পুরোপুরি চালু হয়নি। ফল, আনাজ, নুন, যন্ত্রপাতি, যাবতীয় লেনদেন বন্ধ।
অটারী ট্রাক ইউনিয়নের ট্রাক মালিকদের মুখে গত তিন বছর তাই হাসি নেই। কারণ তাঁদের ট্রাকে চেপেই ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত থেকে পাকিস্তান থেকে আসা পণ্য গোটা রাজ্যে পৌঁছে যেত। আবার তাঁরাই ট্রাকে করে ভারতীয় পণ্য ওয়াঘায় নিয়ে আসতেন। তার পর কুলিদের কাঁধে চেপে সে সব পণ্য সীমান্ত পেরিয়ে উঠে যেত পাকিস্তানের ট্রাকে। এক সময় ইউনিয়নের ১৬৫ জন সদস্য ছিলেন। এখন তা কমতে কমতে পঞ্চাশের কাছাকাছি। অমৃতসর থেকে
ওয়াঘা-অটারী যেতে জি টি রোডের দু’ধারে পরিত্যক্ত ট্রাকের চাকা আগাছায় ঘিরে ফেলেছে।
বিষাদগ্রস্ত মুখে ইউনিয়নের সদস্য হরজিত সিংহ বলেন, “এখানে সাতশোর মতো ট্রাক ছিল। প্রায় পাঁচশো ট্রাক বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ হয়নি বলে ট্রাক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন।” শুধু ট্রাক মালিক নয়। কাজকারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোজগার বন্ধ এলাকার কুলি, ট্রাকের মেকানিক, ছোট দোকানদার, ধাবার মালিকদেরও।
ওয়াঘা-অটারী সীমান্তের সবথেকে কাছের গ্রাম রোডাওয়ালা। সেখানে যে দলই প্রচারে যাচ্ছে, গ্রামের তরুণেরা একটাই কথা বলছেন। যে দল সীমান্ত খুলিয়ে দিতে পারবে, তারাই ভোট পাবে। অমৃতসরের কংগ্রেস সাংসদ গুরজিত সিংহ অউজলা সীমান্ত খুলে বাণিজ্য চালু করার দাবি তুলেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি
নভজ্যোৎ সিংহ সিধুও এর পক্ষে। তাঁর যুক্তি, সেই তো ভারতের জিনিসপত্র পাকিস্তানে যাচ্ছেই। কিন্তু দুবাই ঘুরে। অথচ ওয়াঘা-আট্টারির মানুষ মার খাচ্ছেন। কিন্তু কংগ্রেসের দিল্লির নেতারা কেউ এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। তাঁদের ভয়, তা হলেই বিজেপি কংগ্রেসকে ‘দেশদ্রোহী’ বলবে। রাজনীতির এই রুটি সেঁকায় সীমান্তের মানুষের রুটিরুজিতে টান পড়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির হিসেবে, অমৃতসর, গুরুদাসপুর,
তরণতারণে ব্যবসাও কমেছে। হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তার উপরে কোভিড-লকডাউন পথে বসিয়েছে। ওয়াঘার ‘বিটিং দ্য
রিট্রিট’ সমারোহ বন্ধ থাকার ফলেও অমৃতসর ও সীমান্তে পর্যটক আসা কমে গিয়েছে।
সরকারি হিসেবে, পুলওয়ামার আগে ২০১৮-১৯-এ ভারত-পাকিস্তানের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। ভারত থেকে রফতানির পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ডলার। পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছিল ৫৪ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। পুলওয়ামার জবাবে পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে শুল্ক চাপানোয় তা মাত্র ২৬ লক্ষ ডলারে নেমে আসে। ওয়াঘা-অটারী সীমান্তের মানুষের একটাই প্রশ্ন, পাকিস্তানকে শাস্তির মূল্য আর কত দিন তাঁদের মেটাতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy