Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
National news

মাতৃগর্ভেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কন্যাভ্রূণ!

হায়দরাবাদে সম্প্রতি এনডিটিভি-র চালানো একটি স্টিং অপারেশনে সামনে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোঁজ মিলল একটি বড় শিশুপাচার চক্রের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৩৭
Share: Save:

মাথা পুরোপুরি পরিণত হওয়ার আগেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে মাথার দাম! শিশুপিছু তা কখনও ১৫ হাজার টাকা তো কখনও ৮০ হাজার। জন্মের আগে এই ভাবেই হাজার হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কন্যাভ্রূণ!

হায়দরাবাদে সম্প্রতি এনডিটিভি-র চালানো একটি স্টিং অপারেশনে সামনে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোঁজ মিলল একটি বড় শিশুপাচার চক্রের। পশ্চিমবঙ্গেও বড়সড় শিশুপাচার চক্রের হদিশ মিলেছে অনেক আগেই।

ওই স্টিং অপারেশনের দৌলতে শিশুপাচার চক্রের ৬ ‘পান্ডা’কেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও।

এনডিটিভির দাবি, হায়দরাবাদের এই শিশুপাচার চক্রের খবর তাঁদের কাছে ছিল আগেই। স্টিং অপারেশনের জন্য হায়দরাবাদে একটি অস্থায়ী অফিস খুলে ফেলে তারা। শিশুপাচার চক্রের এক ‘চাঁই’কে শিশু কেনার কথা জানিয়ে খবর দেওয়া হলে রবি নামে এক জন টিভি চ্যানেলের অস্থায়ী অফিসে নিয়ে আসেন এক অন্তঃসত্ত্বাকে। ওই মহিলাকে তার ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে রবি জানায়, তাঁর গর্ভে কন্যাভ্রূণ রয়েছে। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করে সে কথা ডাক্তারই জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: লালু ফের জেলে, দোষী সাব্যস্ত আরও এক পশুখাদ্য মামলায়

তার পর রফা হতে দেরি হয়নি। শিশুটির জন্মের আগেই ঠিক হয়ে যায় তার ‘দর’! রবি শিশুটির জন্য ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। সে জানায়, এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি ৫০ হাজার টাকা হাসপাতালের নার্সকে দেবে।

এক সপ্তাহের মধ্যেই সদ্যোজাতকে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় রবি। এও জানায়, জন্মের পর শিশুটিকে যদি পছন্দ না হয় ‘ক্রেতা’র, তা হলে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। রবি বলে, সে ক্ষেত্রে তার বোনের তিনটি শিশুকন্যার মধ্যে এক জনকে বেচে দেবে।

কিন্তু কী ভাবে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে শিশু বিক্রি করে চলেছে রবি? তার জন্য রবির মতো শিশুপাচার চক্রের ‘চাঁই’দের কৌশলটা কী?

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হায়দরাবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কালওয়াকুর্তি হাসপাতালের সঙ্গে একটা ‘বোঝাপড়া’ আছে রবির। সেই মতো ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ থেকে শিশুর জন্ম, সবটাই করানো হবে ওই হাসপাতালে। তাই যাঁরা ‘ক্রেতা’ সেজে রবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, বিশ্বাস অর্জন করতে সেই সাংবাদিককেও কালওয়াকুর্তি হাসপাতালে নিয়ে যায় রবি। ৫০ হাজার টাকা যে নার্সের জন্য চেয়েছিল রবি, তার সঙ্গে আলাপও় করিয়ে দেয়। শিশু জন্মানোর পর সেই নার্সই শিশুটির ‘ডেথ’ সার্টিফিকেট দেন। হাসপাতালের খাতায় শিশুটির নামের পাশে ‘মৃত’ লিখে দেন নার্স। তার পর শিশুটির মা আর তাঁর পরিবারের কাছে শিশুকে ‘মৃত’ প্রমাণ করতে শিশুটিকে তড়িঘড়ি কবর দেওয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করে রবি। গর্ত খুঁড়ে ফেলে। তার পর সকলের নজরের আড়ালে সেই গর্তের ওপর পাথর চাপা দিয়ে দেয় রবি। তার পর আরেক দফা নাটক! ‘শিশুটি মারা গিয়েছে’ বলে চোখের জল ফেলে রবি। এর পর শিশুটিকে নিয়ে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেয় রবি।

গরিব মানুষদের কাছ থেকে কম টাকায় কন্যাভ্রূণ কিনে এই ভাবে তাদের অনেক বেশি টাকায় ‘ক্রেতা’দের কাছে বেচে দেয় রবি। সে কথা সে ‘ক্রেতা’ সেজে আসা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককেও জানিয়েছে। রবি এও বলেছে, ওই কাজ চালাতে অনেক তাবড় তাবড় নেতার সঙ্গেও সে যোগাযোগ রাখে।

কী ভাবে ধরা পড়ল রবি?

গত শুক্রবার কন্যাভ্রূণ বিক্রির জন্য হায়দরাবাদের একটি মন্দিরে টিভি চ্যানেলের ‘ক্রেতা’ সাংবাদিককে ডেকে পাঠায় রবি। ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে যান ‘ক্রেতা’ সাংবাদিক। সঙ্গে ছিল পুলিশ। তবে পুলিশ সাদা পোশাকে লুকিয়ে ছিল আশেপাশে। তার আগেই অবশ্য রবি এসে টাকা নিয়ে কোন জায়গায় তার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তা জানিয়ে যায় ‘ক্রেতা’ সাংবাদিককে। কিছু ক্ষণ পরেই এক মহিলা সদ্যোজাতকে নিয়ে হাজির হয় সেখানে। আর তখনই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে রবি সহ ৫ জন শিশু পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পশ্চিমবঙ্গেও বড়সড় শিশুপাচার চক্র অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। কলকাতার খুব কাছে বাদুড়িয়ায় গত বছরের শেষাশেষি এমন একটি বড়সড় শিশু পাচারচক্রের হদিশ পান তদন্তকারীরা। বিস্কুটের বাক্সের মধ্যে থেকে তিন সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয়। এও জানা যায়, বাদুড়িয়া ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগণার একাধিক নার্সিংহোমে রমরমিয়ে চলছে এই শিশুপাচার চক্রের কাজকর্ম। রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের আরও কয়েকটি জেলা ও শহরেও এই চক্রগুলি সক্রিয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy