হিংসা থামার লক্ষণ নেই মণিপুর। — ফাইল চিত্র।
সাড়ে চার মাসের গোষ্ঠীহিংসায় নিহত ১৭৫, নিখোঁজ ৩৩। তবুও কেন্দ্রীয় বাহিনী অসম রাইফেলসকে শান্তিরক্ষার কাজ করতে দিতে নারাজ মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইরা।
অভিযোগ তোলা হয়েছিল আগেই। এ বার মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস সরানোর দাবিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দ্বারস্থ হল মেইতেই সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রীয় বাহিনী ধারাবাহিক ভাবে কুকিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। মেইতেই জনগোষ্ঠীর নাগরিক সংগঠনগুলি যৌথমঞ্চ ‘কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ বা ‘কোকোমি’ প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। চলতি সপ্তাহের গোড়া থেকে মণিপুর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী গোষ্ঠীহিংসা পর্বে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান শুরু করেছে। তারই মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক মাথাচাড়া দিল উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে।
এরই মধ্যে মণিপুর পুলিশের তরফে প্রকাশিত এক রিপোর্টে শুক্রবার জানানো হয়েছে, গত সাড়ে চার মাসের হিংসায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৭৫ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জন নিহতের দেহ শনাক্ত করাই যায়নি। আহত ১,১১৮। গোষ্ঠীহিংসা কবলিত এলাকাগুলি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ৩৩ জন। গোষ্ঠীহিংসার ঘটনায় মোট ৫১৭২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশি রিপোর্টে দাবি। এর মধ্যে ৪৭৮৬টি বাড়ি এবং দফতরের পাশাপাশি ৩৮৬টি ধর্মস্থান রয়েছে। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে ৩৬০টি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে বলে পুলিশ রিপোর্ট জানাচ্ছে।
তবে হিংসাদীর্ণ মণিপুরে পুলিশ-প্রশাসনের ঘুম কেড়েছে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র। গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক হিংসা পর্বে বিভিন্ন থানা, এমনকি জেলা পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে ৫,৬৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৫ লক্ষ গোলাগুলি লুট হয়েছে মণিপুরে। পুলিশ রিপোর্ট জানাচ্ছে, এর মধ্যে ১,৩২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫ হাজার ৫০টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪০০টি বোমাও। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পথে এই সব উধাও হয়ে যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র বড় অন্তরায় বলে মনে করছে মণিপুর পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে মেইতেই এবং কুকি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ১২৮টি চেকপোস্ট বসিয়ে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারির কাজ। এই আবহে মেইতেইদের দাবি, মিশ্র জনবসতি এলাকাগুলিতে নতুন করে অশান্তির আবহ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অগস্ট মাসে মণিপুরের ৪০ জন মেইতেই বিধায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাঠানো চিঠিতে অসম রাইফেলসের বদলে মণিপুরে কোনও ‘বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা বাহিনী’ মোতায়েন করার দাবি জানান। মণিপুর হিংসার গোড়ার দিন থেকেই বার বার বিতর্কে জড়িয়েছে অসম রাইফেলস। তাদের বিরুদ্ধে কুকিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মেইতেইরা। মেইতেই সংগঠনগুলির অভিযোগ, অসম রাইফেলসের প্রত্যক্ষ মদতেই মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চলছে রাজ্যে।
কিছু দিন আগে মণিপুর পুলিশও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিল অসম রাইফেলসের বিরুদ্ধে। মেইতেইদের উপরে অত্যাচারে অভিযুক্ত কুকি সংগঠনগুলিকে আড়াল করায় অভিযুক্ত হয়েছেন অসম রাইফেলসের আধিকারিকেরা। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে অসম রাইফেলস। ইতিমধ্যেই মণিপুরের কয়েকটি এলাকা থেকে অসম রাইফেলস প্রত্যাহার করে সিআরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কোকোমির মুখপাত্র খুরাইজাম অথৌবা জানিয়েছেন, এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও একই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসম রাইফেলসের পক্ষপাতদুষ্টতার প্রমাণ দিয়েছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy