Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাতের কুম্ভের আঁধার ঘোচান মেহমুদ

অন্ধকারকে আলোয় ভরে দেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই সেজে ওঠে রাতের কুম্ভ। জুনা আখড়ার সামনে পৌঁছে খুঁজলেই দেখা মিলবে ‘মোল্লাজি লাইটওয়ালে’-র। মহম্মদ মেহমুদকে এই নামেই সবাই চেনে। 

মহম্মদ মেহমুদ

মহম্মদ মেহমুদ

সংবাদ সংস্থা
ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৫
Share: Save:

অন্ধকারকে আলোয় ভরে দেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই সেজে ওঠে রাতের কুম্ভ। জুনা আখড়ার সামনে পৌঁছে খুঁজলেই দেখা মিলবে ‘মোল্লাজি লাইটওয়ালে’-র। মহম্মদ মেহমুদকে এই নামেই সবাই চেনে।

বছর ৭৬-এর মেহমুদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মুজফ্‌ফরনগরে। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। মেলা বসলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসেন ইলাহাবাদ, হরিদ্বারে। তিরিশ বছর ধরে এটাই মেহমুদের রুটিন। গোটা দেশ থেকে আসা সাধুসন্তদের ভিড়ে কুম্ভ জমে ওঠে। তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে মেহমুদের। মেলায় এসেই খোঁজ পড়ে লাইটওয়ালে-র।

মেহমুদের কথায়, ‘‘রাতে এখানে এলে দেখবেন গোটা এলাকা আলোয় ভরে উঠেছে। সব আমার কাজ!’’ গর্ব ঝরে পড়ে লাইটওয়ালে-র গলায়। সেই ১৯৮৬ সালে হরিদ্বারের কুম্ভমেলা দিয়ে শুরু। নাশিক বাদ দিয়ে বাকি সব কুম্ভমেলায় পৌঁছে গিয়েছিলেন মেহমুদ। ক’টা কুম্ভমেলা দেখেছেন? ভাল মনে না-পড়লেও নয় নয় করে এগারোটি তো বটেই— জানান লাইটওয়ালে।

কুম্ভ তো এক মাস। বাকি সময়টা কী ভাবে দিন গুজরান হয়? জানালেন, কখনও মুজফ‌্‌ফরনগরে জন্মাষ্টমী উৎসব, কখনও বা মেরঠের বিখ্যাত নাউচণ্ডী মেলা। মেলার তো অভাব নেই। বসে থাকেন না লাইটওয়ালে।

নাগা সন্ন্যাসী সঙ্গম গিরি প্রতি কুম্ভে আসেন জুনা আখড়ায়। বললেন, ‘‘ফি বারই ওঁকে পাই। কোনও দিন জানতে চাইনি কী নাম। ও আমাদের বন্ধু, লাইটওয়ালে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দুদের কাছে আমরা গুরু, মুসলিমদের কাছে পির। মুসলিমরা নিরাকারের পুজারী। আমরা সাকারে পুজো করি। পথটাই যা আলাদা। কিন্তু পৌঁছতে তো হবে শেষমেশ একই জায়গায়!’’

এ ভাবেই প্রতি কুম্ভে এক মিলনের সাক্ষী থাকে সাগর সঙ্গম। মেহমুদ জানান, কোনও দিন ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এই সহজ যাতায়াতে। ‘‘সাধু বাবাদের সঙ্গে থেকে মনে হয়, এটা আমারও বাড়ি। কত বার তো ওঁদের পাশে ওঁদের গদিতেই বসেছি। শ্রদ্ধা করি ওঁদের। এখানে এসেও পাঁচ বার নামাজ পড়ি। কোনও অসুবিধে হয়নি কখনও। বরং সাধুরাই অনেক সময় আমাকে জায়গা করে দিয়েছেন।’’ পুরনো কথা মনে পড়ে যায় মেহমুদের। জানান— যদি সাধুরা এমন ভাবে আমাকে গ্রহণ না করতেন, কবেই আসা ছেড়ে দিতাম। যে দিন এই সহজ জায়গাটা শেষ হয়ে যাবে, সেটাই হবে তাঁর শেষ কুম্ভ।

তিন দশক ধরে কুম্ভ যেন জীবনেরই একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেহমুদের। জীবনের ১২তম কুম্ভে কি এ ভাবেই আলো জ্বালবেন লাইটওয়ালে? হেসে বলেন, ‘‘আল্লা চাইলে নিশ্চয়ই আসব!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Juna Akhara Allahabad Kumbh Mela 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE