জমি বিল নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি অন্দরমহলেও আক্রমণের মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ এবং বনবাসী কল্যাণ আশ্রম— সঙ্ঘ পরিবারের এই তিন সংগঠনের প্রতিনিধিই আজ সংসদীয় কমিটির সামনে জমি বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়। সঙ্ঘ পরিবারের আর এক সংগঠন, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও এ দিন কমিটিকে স্মারকলিপি দিয়ে জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরুদ্ধে মত জানিয়েছে। মনমোহন সিংহ জমানার একেবারে শেষবেলায় জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন পাশ হয়েছিল। শিল্প ও পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণ সহজ হবে— এই যুক্তিতে সেই আইনে সংশোধন করে বিল এনেছিল মোদী সরকার। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনগুলি যে ভাবে এই বিলের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছে, তাতে কার্যত তারা এখন কংগ্রেসেরই পাশে বলে মনে হচ্ছে।
স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনগুলির এই অবস্থান দেখে কংগ্রেস নেতারা উল্লসিত। বিলটিকে লোকসভায় ঠেকাতে না পারলেও রাজ্যসভায় তা সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে বাধ্য করেছে কংগ্রেস। এ বার সেই কমিটির সামনে সঙ্ঘ পরিবারের লোকেরাই যে ভাবে প্রশ্ন তুলছেন, তা দেখে কংগ্রেসের নেতারা নিজের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘আমাদের তো আর কিছু করারই দরকার নেই’। এমনিতেই ললিত মোদীকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের পদত্যাগের দাবি তুলে মোদী সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। দলের নেতারা বাদল অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ারও ছক কষছেন। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে সঙ্ঘ পরিবার থেকেই মোদী সরকারের বিরোধিতা কংগ্রেসের হাত আরও শক্ত করছে।
বিজেপির একটি সূত্র বলছে, সঙ্ঘ পরিবারের গণ সংগঠনগুলি জমি বিলের বিরোধিতা করলেও ক্ষতি কিছু নেই। এতে বরং দুই কূলই রক্ষা পাবে। মোদী সরকার শিল্পের স্বার্থে জমি বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর। তার জন্য প্রয়োজনে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে সেই বিল পাশ করানো হবে। অথচ বিজেপি শিবিরের কিষাণ বা শ্রমিক সংগঠনগুলি তাদের সমর্থকদের কাছেও বড়াই করে বলতে পারবে তারা এর বিরোধিতা করেছে। তবে ব্যাপরটা এত সরল ভাবে মিটে যাবে বলে মনে করছেন না কংগ্রেসের নেতারা। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, বিএমএস ইতিমধ্যেই অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলে মোদী সরকারের শ্রমিক নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এখন জমি বিল নিয়েও সঙ্ঘের সংগঠনগুলির সঙ্গে বিরোধ বাধছে। এ সব মিলিয়ে মোদী সরকারের অস্বস্তি ক্রমেই বাড়বে বৈ কমবে না বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
মনমোহন সিংহের সরকার যে জমি আইন পাশ করিয়েছিল, তাতে জমির মালিকদের সম্মতির নেওয়ার শর্ত রাখা হয়েছিল। মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশ ও তার বিলে তা তুলে দেওয়া হয়। বলা হয়, পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামো, সস্তার আবাসন ও শিল্প করিডর— এই পাঁচটি প্রয়োজনে জমি নিতে মালিকদের সম্মতির দরকার নেই। জমি অধিগ্রহণের সামাজিক প্রভাব নিয়ে সমীক্ষার বিষয়টিও তুলে দেওয়া হয়। কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলির মতো সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনগুলিও মূলত এরই বিরোধিতা করছে। কিষাণ সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক প্রভাকর কেলকারের দাবি, কৃষিজমি নিতে অন্তত ৫১% জমি মালিকের সম্মতি নিতে হবে। তাঁর বক্তব্য, সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা ও অব্যবহৃত অধিগৃহীত জমি পুরনো মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্ত তুলে দেওয়ায় কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একই বক্তব্য মজদুর সঙ্ঘ ও স্বদেশী জাগরণ মঞ্চেরও। শিল্প করিডর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল ও হোটেলের জন্য যে সব ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ওই মঞ্চ। কমিটির চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে বিএমএসের প্রতিনিধি এ দিন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া হবে না। সে কথা বিলে স্পষ্ট করে লেখা হচ্ছে না কেন?’’
স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা অশ্বিনী মহাজন তুলেছেন পরিবেশের প্রশ্নও। কমিটিকে তিনি জানিয়েছেন, মোদী সরকার তাড়াহুড়ো করে এই বিল নিয়ে এসেছে। যে কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রেই তার পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব কতখানি পড়বে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy