আলুপোস্ত থেকে ইলিশ ভাপের সুবাস। দরবার হলের অনুষ্ঠানে শচীন কর্তা থেকে ভাটিয়ালি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে গত কালের ভোজসভা যেন বাঙালি বাড়ির উৎসব!
ভারত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং উপস্থিত একটি মাত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মাতৃভাষায় কাল সরগরম ছিল রাষ্ট্রপতি ভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও তাঁর স্ত্রী রশিদা খানমের সঙ্গে ভোজসভায় ছিলেন তাঁদের তিন ছেলেও। ছোট ছেলে রিয়াধ অহমেদ এমআইটি-র স্নাতক। নিজের বড় দাদার (সাংসদ রেজোয়ান অহমেদ) মতো তিনি আর রাজনীতিতে আসেননি। তবে খেতে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও প্রচুর গল্পগাছা করেছেন মমতা।
তবে দই মাছ থেকে মালপোয়া রাবড়ি খাদ্যের বিপুল সমাহার থাকলেও সে সব কিছুই দাঁতে কাটেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। শুধু কমলালেবুর রসে চুমুক দিতে দিতেই গল্প করেছেন অতিথিদের সঙ্গে। “দিদি তুম ক্যায়সে হো?” বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন মমতার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন, তেমন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও জানতে চেয়েছেন, কেমন আছেন মমতা? সূত্রের খবর, মনমোহন মমতাকে বলেছেন, তাঁকে যথেষ্ট রোগা দেখাচ্ছে। রোগা হওয়া ভাল। কিন্তু তাঁর শরীর ঠিক আছে তো?
টেবিলে মোদীর ডান পাশে বসেছিলেন সুষমা স্বরাজ। বাঁ পাশে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির স্ত্রী। গত কালই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার খানিক পরে তিনি চলে গেলে গোটা নৈশভোজটি পরিচালনা করেন উপরাষ্ট্রপতিই। হামিদের স্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। উপরাষ্ট্রপতির মেয়ে গুজরাতে শিক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মোদী তখন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়ে নাকি তখন বাবা-মাকে বলতেন, কেন তাঁরা মোদীর বিরোধিতা করেন! রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করেছেন মোদী। গল্পটা বলে উপরাষ্ট্রপতির স্ত্রী মজা করে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর বড় সমর্থক আনসারি-পরিবারের মধ্যেই রয়েছে!
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি হয় দরবার হলে। নেতা-মন্ত্রীরা ছাড়াও ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, চিকিৎসক নরেশ ত্রেহান, প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার, এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী। ছিলেন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র। ভোজসভার ফাঁকে মমতার সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়েও কিছুক্ষণ কথা বলেন ডোভাল।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের একাধিক বক্তৃতার একটি সিডি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন প্রণববাবু। সিডিটি তৈরি করেছে অল ইন্ডিয়া রেডিও। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের খবর, প্রণববাবু চেয়েছিলেন বাংলাদেশ বিজয়ের মাসেই সেটি আব্দুল হামিদের হাতে তুলে দিতে। তাই হাসপাতালে থাকাকালীন এই কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত খবর নিয়েছেন তিনি।
এক বাঙালি রাষ্ট্রপতির বাসভবনে অতিথি হলেন আর এক বাঙালি রাষ্ট্রপতি অভূতপূর্ব তো বটেই। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিই দ্বিতীয় বিদেশি অভ্যাগত, যিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে রাত্রিবাস করলেন (এর আগে রাইসিনা পাহাড়ে অতিথি হয়েছিলেন ভুটানের রাজা)। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এর থেকেই স্পষ্ট, বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে মোদী সরকার। ভোজসভায় আব্দুল হামিদের সঙ্গে মমতারও একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। মমতা জানান, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার পথেই ভবিষ্যতে এগোতে চান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy