লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের জেরে দলের কেন্দ্রীয় দফতর ধরে রাখতে গভীর সঙ্কটে পড়েছে আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বাম শরিকেরা। দলীয় দফতর নিয়ে সমস্যা না থাকলেও দিল্লিতে দলের নানা সংগঠনের কার্যালয় নিয়ে এ বার একই রকম সমস্যায় সিপিএমও। সঙ্কট সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত দলের বেশির ভাগ সাংসদদের এ বার এক জায়গায় ভাগাভাগি করে থাকার নিদান দিচ্ছে এ কে গোপালন ভবন!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির পাকা ঠিকানা দিল্লির গোল মার্কেটের এ কে জি ভবন। কিন্তু রাজধানী শহরেরই নানা ঠিকানায় এত দিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল দলের নানা শাখা সংগঠনের কার্যালয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দলের সাংসদদের নামে বরাদ্দ বাংলোর ঘর ছেড়ে দেওয়া থাকত গণসংগঠনের কাজ চালানোর জন্য। এ বার ঠিক সেই জায়গাতেই ধাক্কা খেয়েছে সিপিএম। ধাক্কা সামলাতে আপাতত ঠিক হয়েছে, ভি পি হাউসের কিছু ঘরে যত বেশি সম্ভব সাংসদকে থাকতে বলা হবে! যাতে হাতে-গোনা কিছু সাংসদ বাংলো বা ফ্ল্যাট গণসংগঠনের কাজে লাগানো যায়।
সঙ্কটে এখন বামেদের নীতি যদি হও সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন!
লোকসভা ভোটের পরে যেমন ঠাঁইহারা হয়ে পড়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং কৃষক সভা। দুই সংগঠনেরই কেন্দ্রীয় দফতর ছিল ৪ নম্বর অশোক রোডের বড় বাংলোয়। সেই এ কে গোপালনের আমল থেকে ওই বাংলো (যাকে বলা হয় মিনিস্টারিয়াল বাংলো) সিপিএমের বর্ষীয়ান কোনও সাংসদের নামে বরাদ্দ হয়ে আসছে। শেষ বার বাংলোটি ছিল ত্রিপুরার সাংসদ বাজুবন রিয়াংয়ের নামে। রিয়াং এ বার ভোটে দাঁড়াননি। আর তাঁর জায়গায় তত প্রবীণ কোনও সাংসদ সিপিএমের টিকিটে জিতেও আসেননি! কাজেই বহু স্মৃতিবিজড়িত ওই বাংলো ছাড়তে হচ্ছে সিপিএমকে।
আর এক প্রবীণ সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার ২১ নম্বর অশোক রোডের বাংলোও দলের কর্মী ও নানা সংগঠনের কাজে লাগত। বাসুদেববাবু হেরে যাওয়ায় সেখানেও সঙ্কট! আপাতত সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যবস্থা করেছেন, যাতে কিছু দিনের জন্য ওই বাংলোর ভাড়া মিটিয়েই কাজ চালানো যায়। তার মধ্যে কর্মীদের তুলে নিয়ে যেতে হবে অন্যত্র। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, “গণসংগঠনগুলির মধ্যে সিটু যেমন দিল্লিতে নিজেদের কার্যালয় করে নিয়েছে। সকলে তেমন পারেনি। দলের সর্বক্ষণের কর্মী এবং কার্যালয়গুলির কর্মীদের রাখার ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে। তার জন্য কিছু কষ্ট তো হবেই!”
কোনও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বা প্রাক্তন সাংসদ হলে সংসদের নিয়ম অনুযায়ী, তুলনায় বড় ফ্ল্যাট বা বাংলো পাওয়া যায়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং অতীতে রাজ্যসভা ও লোকসভার সাংসদ থাকায় সেলিমের নামে বাংলোর জন্য আবেদন করেছে সিপিএম। দলের লোকসভার দলনেতা, কেরলের প্রবীণ সাংসদ পি করুণাকরন এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরীর নামেও বাংলো চাওয়া হয়েছে। আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর নামে থাকা বাংলোটি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ুর প্রবীণ সাংসদ টি কে রঙ্গরাজনের নামে। এই সাংসদেরা কেউই অবশ্য ওই সব বাংলোয় থাকবেন না। দুই কক্ষ মিলিয়ে দলের ২১ জন সাংসদের বেশির ভাগই ভি পি হাউসের ছোট ঘরে থেকে বাংলো বা ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবেন শাখা সংগঠনের কাজের জন্য।
প্রাক্তন সাংসদ শ্যামলবাবু যেমন বলছেন, “আমার নামে থাকলেও ১৫ নম্বর তালকাটোরা রোডের ওই বাংলোয় আমি কখনওই থাকতাম না। ওটা পার্টির কাজে লাগত।
এখনও তেমনই লাগানো হবে।” সিপিএমের রাজ্যসভার দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরির বাংলোও দলের জন্য ছাড়া আছে। এ ছাড়া, সিটুর সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সদস্য তপন সেনের নামেও একটি বাংলো আছে।
রাজেন্দ্রনগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফ ব আপাতত কাজ চালাচ্ছে। আরএসপি তাকিয়ে আছে কেরলে বাম জোট থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে কংগ্রেসের সমর্থনে জেতা এন কে প্রেমচন্দ্রনের দিকে! কারণ, সেই বাংলো!
দফতর নিয়ে এই টানাপড়েনের পাশাপাশিই সংসদে সংখ্যা কমে গিয়ে নতুন স্থায়ী কমিটিগুলিতেও এ বার সম্ভবত কোনও চেয়ারম্যানের পদ পাওয়া হচ্ছে না সিপিএমের। পরিবহণ ও বিমান চলাচল দফতরের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানও আর সম্ভবত থাকা হবে না ইয়েচুরির। এ রাজ্য থেকে দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের কথায়, “আমরা কোনও কমিটির নেতৃত্ব পাব বলে আর আশা করছি না। এক যদি করুণাকরনকে কিছু দেওয়া হয়।”
আপাতত সংসদের হাউস কমিটির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে এ কে জি ভবনকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy