জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার জন্য এ বারের লোকসভা নির্বাচনে কেরলের দিকেই বেশি নজর প্রকাশ কারাটের। ভোট মিটে যাওয়ার পরে সে রাজ্যের সিপিএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিল, ওই দক্ষিণী রাজ্যে গত বারের চেয়ে বামেদের আসন তিন গুণ বাড়বে বলে তারা আশাবাদী। দলের সব ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে দিল্লিতে পৌঁছতে পারবেন বলে তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি সেন্টার মনে করছে।
কেরলের ২০টি আসনেই ভোট হয়ে গিয়েছে তিন দিন আগে। ভোটের হার ছিল প্রায় ৭৪%। তার পরেই দু’দিন ধরে জেলাওয়াড়ি প্রাথমিক রিপোর্ট আনিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। সিপিএম সূত্রের খবর, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে এ বার ১১ থেকে ১২টি আসন বামেদের ঝুলিতে আসবে বলে পিনারাই বিজয়নেরা আশা করছেন। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির এ বিজয়রাঘবন, পি কে শ্রীমতি, পি করুণাকরনেরা জিতে আসবেন বলেই জেলা থেকে পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও সেই তথ্য জানিয়ে দিয়েছে কেরল সিপিএম।
পাঁচ বছর আগে রাজ্যে ২০টির মধ্যে মাত্র চারটি আসন পেয়েছিল সিপিএম। বিরোধী দলে গিয়ে একের পর এক আন্দোলনের ঢেউয়ে ভর করে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে এ বার অবশ্য আসন বাড়ানোর ব্যাপারে গোড়া থেকেই আশাবাদী ছিল তারা। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “বুথভিত্তিক বিশদ হিসাব না হলেও প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কেরলে ১১-১২টা আসন আমরা পেতে পারি। খুব ভাল ফল হলে সংখ্যাটা ১৫-তেও পৌঁছতে পারে!” ক্ষমতাসীন ইউডিএফ অবশ্য বামেদের হিসেব উড়িয়ে নিজেরাই ১৫টা আসন পাওয়ার দাবি করছে!
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আগের বারের চারটি ধরে রেখে বাড়তি যে আসনগুলি তারা পাবে বলে রাজ্য সিপিএম মনে করছে, তার বেশির ভাগই দক্ষিণ ও মধ্য কেরলে। উত্তরাংশের আসন তুলনায় কম। এই হিসেব মানলে উত্তরাঞ্চলে মুসলিম লিগ ও কংগ্রেসের দাপট অব্যাহতই থাকছে। পালাক্কাড, আলাতুর, এট্টিঙ্গল এবং কাসারগোড়ে দলের বর্তমান সাংসদেরাই আবার জিতবেন বলে সিপিএম আশা করছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সঙ্গে তালিকায় যোগ হতে পারে কান্নুর, কোঝিকোড়, কোল্লম, তিরুঅনন্তপুরম, পাতানামতিট্টা, ভাডাকারা, ত্রিশূর এবং ইদুক্কি। এর মধ্যে কোল্লমেই হচ্ছে কেরলের সব চেয়ে উত্তেজক লড়াই সিপিএমের বেবি বনাম কংগ্রেস-সমর্থিত আরএসপি-র প্রেমচন্দ্রন। কান্নুর ও কাঝিকোড়ে প্রার্থী যথাক্রমে শ্রীমতি ও বিজয়রাঘবন। এ বার পাঁচটি আসনে নির্দল প্রার্থী দিয়ে নতুন পরীক্ষার পথে হেঁটেছে এলডিএফ। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁদের মধ্যে দু’জনের জয়ের সম্ভাবনা পাতানামতিট্টায় প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি ফিলিপোজ ম্যাথুজ এবং ইদুক্কিতে নির্দল জয়েস জর্জ।
প্রথমে কোনও হাওয়া না-থাকলেও ভোটের ধরন দেখে সিপিএমের মনে হচ্ছে, অরবিন্দ কেজরীবালের আপ কিছু আসনে বেশ কিছু ভোট পাবে। এমনিতে কেরলে জয়-পরাজয়ের ফয়সালা হয় অল্প ভোটে। সেখানে আপ ভোট কেটে দিয়ে আসনের ভারসাম্যই বদলে দিতে পারে। কেরল সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য, এক সাংসদের বক্তব্য, “এর্নাকুলাম আসনে আপ প্রার্থী, সাংবাদিক অনিতা প্রতাপ প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বেশ কিছু ভোট পেয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। তার জেরেই কংগ্রেস ওই আসন বাঁচাতে পারে।” আবার রাজ্যের অন্যত্র বিশেষ প্রভাব ফেলতে না-পারলেও তিরুঅনন্তপুরমে বিজেপি-র ও রাজাগোপাল বেশ কিছু ভোট টেনে নিয়ে শশী তারুরকে বিপাকে ফেলবেন বলে বাম শিবিরের দাবি। সত্যিই তা-ই হলে ইন্দ্রপতন ঘটিয়ে রাজধানী শহরের আসনটি ঘরে তুলতে পারে সিপিআই।
পাতানামতিট্টায় কংগ্রেস প্রার্থী বদল করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করে ভোটের পরেই হইচই ফেলে দিয়েছেন ইউডিএফের শরিক কেরল কংগ্রেস (এম) নেতা এবং মুখ্য সরকারি সচেতক পি সি জর্জ। তিরুঅনন্তপুরম, ইদুক্কির মতো কয়েকটি আসন ইউডিএফ ধরে রাখতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি! কংগ্রেস ফ্রন্টে তাই নিয়ে কাজিয়া চরমে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভি এম সুধীরন অবশ্য বলছেন, “বামেদের অবস্থার কোনও উন্নতি হবে না! ইউডিএফ অন্তত ১৫টা আসন পাচ্ছেই।”
বাম-শাসিত ত্রিপুরার দু’টি আসনেই ভোট হয়ে গিয়েছে। সেখানে কোনও অঘটন ঘটবে না বলেই সিপিএমের দাবি। কেরলের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, “আমাদের রাজ্য থেকে ১১-১২টা আসন পেলে এবং বাংলাও একই সংখ্যক আসন বার করতে পারলে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আমাদের যথেষ্ট গুরুত্ব থাকবে।” আপাতত স্ট্রং রুম-বন্দি ভোটযন্ত্র ১৬ মে খোলার আগে দাবি যাচাইয়ের উপায় নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy