হু হু করে বাড়ছে কোভিড-সংক্রমণ, জেনে নিন এমন অবস্থায় কী খাওয়াদাওয়া করা উচিত কোভিড রোগীদের। প্রতীকী ছবি।
হু হু করে বাড়ছে কোভিড-সংক্রমণ। ফের চেনা-পরিচিতের মহলে অনেকেরই কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। শহর জুড়ে কোভিড-কিচেনগুলিও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যা কোভিডের তৃতীয় ঢেউ বলে চিহ্নিত করছেন অনেকেই, তার একটি বৈশিষ্ট্য— বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোভিডের মৃদু উপসর্গ। তাই বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকছেন অনেকে। জ্বর চলে যাচ্ছে ২-৩ দিনের মাথায়। থেকে যাচ্ছে ক্লান্তি, গায়ে ব্যথা, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি। এমন অবস্থায় কী খাওয়াদাওয়া করা উচিত কোভি়ড রোগীদের?
অনেকের হয়তো এত গলা ব্যথা যে সব খাবার খেতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেকে হয়তো বাড়িতে একাই থাকেন। তাই কোভিডের ক্লান্তিতে রান্না করাটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কী খাওয়া যেতে পারে যাতে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি গিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। পুষ্টিবিদ এবং যাপন-সহায়ক অনন্যা ভৌমিকের কাছে জানতে চাইল ‘আনন্দবাজার অনলাইন’।
অনন্যা প্রথমেই জানালেন, শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, কোভিড রোগীদের সামগ্রিক জীবনযাপনেই বিশেষ নজর দিতে হবে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য। শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন এবং জরুরি খনিজ ছাড়াও প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, জল খাওয়া এবং অল্প হাঁটাহাটি করা। কিছু বিষয়ে তাই বিশেষ খেয়াল রাখতে অনুরোধ করছেন অনন্যা—
১। তিন লিটার তরল শরীরে যেতেই হবে। সবটা জলের মাধ্যমে না খেয়ে, গরম চা, স্যুপ বা কোনও রকম ভেষজ পানীয়ও হতে পারে। যাঁদের সর্দি-কাশিতে গলার অবস্থা খারাপ, তাঁরা হয়তো ফলের রস, শরবত বা স্মুদি খেতে পারবেন না এ সময়ে। তাই গরম স্যুপ বা চা খাওয়াই ভাল।
২। আট ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোভি়ড হলে শারীরিক দুর্বলতা ছাড়াও মানসিক উদ্বেগ থাকে অনেক বেশি। তাই অনেকেরই এই সময়ে ঘুমের সমস্যা হয়। মনে রাখতে হবে, আট ঘণ্টা না ঘুমালে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে না। এতে সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। তাই যে ঘরে নিভৃতবাসে রয়েছেন, সেই ঘরের মধ্যেই ঘুমের আগে আধ ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। খুব দ্রুত বা জোর করে হাঁটার প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে হাঁটলেই চলবে। দিনেরবেলাও কোনও সময়ে ঘরের মধ্যে আরও ১৫-২০ মিনিট হেঁটে নেওয়া যেতে পারে। কারও যদি দুধে সমস্যা না থাকে, তিনি ঘুমের আগে খানিকটা হালকা গরম দুধও খেতে পারেন।
৩। কোভিড রোগীদের সুস্থ হতে যে প্রোটিনের প্রয়োজন, তা দুটি ঢেউয়ের পর অনেকেই জেনে গিয়েছেন। কিন্তু অযথা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খাবেন না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই নানা রকম প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ফেলেছিলেন। তাতে তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তাই শুধু শুধু এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভাল।
৪। প্রোটিন খাওয়ার জন্য দিনে একটি ডিম এবং দুটি ডিমের সাদা অংশই যথেষ্ট। লিপিড প্রোফাইলে কোনও রকম সমস্যা না থাকলে দিনে একটি করে ডিম যে কেউ অনায়াসে খেতে পারেন। তা ছাড়া ডাল থেকেও প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। কোভিডের ক্লান্তিতে অনেকেরই রান্না করতে ইচ্ছে করে না। তাঁরা ভাত ফোটানোর সময়ে সেই পাত্রেই একটি পাতলা সুতির কাপড়ে খানিকটা ডাল দিয়ে পুটলির মতো বেঁধে সেদ্ধ করে নিন। এই থকথকে ডালসেদ্ধতে অনেকটা প্রোটিন থাকে। প্রত্যেকটা মিলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ করে খেলেই চলবে। স্বাদ অনুসারে নুন বা কাঁচা তেল দিয়ে মেখে নিতে পারেন।
৫। তিন বার না খেয়ে অল্প পরিমাণে পাঁচ বার খেলে সুবিধা হবে। বিশেষ করে যাঁরা গলা ব্যথায় ঠিক করে খেতে পারছেন না। বিকেলের দিকে একটি মিল দই হতেই পারে। অনেকে মনে করেন, দই খেলে ঠান্ডা লাগবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দই যে কোনও পছন্দের ফলের সঙ্গে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। আবার লস্যি করেও খেতে পারেন। দই থেকেও প্রোটিন যাবে শরীরে।
৬। প্রোটিনের পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজন ভিটামিন এবং খনিজের। ভাতের সঙ্গে একটি যে কোনও তরকারি করে রাখুন। প্রত্যেক বার খাওয়ার সময়ে একটু করে তরকারি অবশ্যই খাবেন। যে কোনও দু’রকমের মরসুমী ফল খাওয়া আবশ্যিক। মাঝেমাঝে এই ফলগুলি একটু বদলাতে পারলে আরও উপকার পাবেন। তা সম্ভব না হলেও যে কোনও দুটি ফল অবশ্যই খাবেন প্রত্যেক দিন।
৭। ভিটামিন সি পাওয়ার জন্য গরম জলে লেবু চিপে খাবেন না। তার চেয়ে ডাল-ভাত খাওয়ার সময়ে তাতে একটি লেবুর রস চিপে খান। এতে মুখ বিস্বাদ থাকলেও খেতে সুবিধা হবে।
৮। ভাত খাওয়ার সময়ে অবশ্যই এক চামচ করে কোনও ভাল মানের ঘি পাতে রাখবেন। কোভিড রোগীদের জন্য ঘি অত্যন্ত জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy