ক্যানসার জীবনের একটি অংশ মাত্র, গোটা জীবন নয়। ছবি: সংগৃহীত
ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধি যখন পরিবারের কোনও সদস্যকে আক্রমণ করে, তখন তার প্রভাব বাকিদের উপরও পড়ে। যিনি রোগের সঙ্গে লড়ছেন, তাঁর পাশাপাশি যাঁরা তাঁর পাশে থাকছেন, তাঁদের লড়াইও ততটাই কঠিন এবং দীর্ঘ হয়ে ওঠে। ফলে তাঁদের মানসিক চাপও হয়ে ওঠে অপরিসীম। রোজকার লড়াইয়ের জমতে থাকা ক্লান্তির পাশাপাশি অনেক সময়েই ভিড় করে এক ধরনের অপরাধবোধ।
কেন এমন হয়? এ বিষয়ে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আসলে ক্যানসারের মতো কঠিন রোগের সঙ্গে যখন আমরা লড়াই চালাই, অনেক সময়েই আমাদের মধ্যে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। আমরা বুঝতে পারি না শেষ অবধি লড়াইটা কোথায় গিয়ে থামবে। শত চেষ্টা করেও যদি আমরা প্রিয়জনকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে না পারি, তা হলে আমাদের মধ্যে একটি অপরাধবোধ তৈরি হয়।’’
ক্যানসার রোগীদের দায়িত্বে যাঁদের নিতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এই অপরাধবোধ তৈরি হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। অনেক সময়ই আত্মীয়-পরিজনদের বিভিন্ন রকম পরামর্শে তৈরি হতে পারে বিভ্রান্তিও। তখনই ফল প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলে আরও চেপে ধরে অপরাধবোধ। কিন্তু এই ধরনের অপরাধবোধ তৈরি হওয়া আমাদের শরীর-মন দুইয়ের জন্যেই অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই অনুত্তমার পরামর্শ, কিছু বিষয় প্রথম থেকেই মাথায় রাখা—
১। কোনও প্রিয়জন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে আমরা সেই লড়াইয়ে যদি শুধু মাত্র কেয়ারগিভারের ভূমিকা পালন করি, তা হলে তিনিও নিজেকে শুধু রোগীই মনে করবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, অসুস্থতা জীবনের অংশ মাত্র, পুরো জীবন নয়। অনেক সময়ে হয়তো কেউ তাঁর রোগের বদলে অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু তা না করে যদি আমরা বারবার শরীর-চিকিৎসা— এ সব নিয়েই আলোচনা করি, তা হলে তিনিও নিজেকে সব সময়ে অসুস্থই মনে করবেন। ক্যানসার রোগীর দেখভাল করার সময়ে অবশ্যই তাঁকে কিছুটা বাড়তি সময় দিতে হবে, কিছুটা পরিকল্পনা করতে হবে সে বিষয়ে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, শুধু কেয়ারগিভার নয়, তাঁর জীবনে আমাদের অন্যান্য ভূমিকাও রয়েছে। এবং অন্য অনেক মানুষের জীবনেও আমাদের অন্য ভূমিকা এবং কার্যাজি রয়েছে।
২। চিকিৎসা চলাকালীন কোনও নতুন উপসর্গ বা রোগের নিরিখে আগে থেকে কিছু অনুমান করে নেওয়া অনুচিত। যে কোনও বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি বুঝে তবেই সির্দ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়। পূর্বানুমানের ভিত্তিতে অতিরিক্ত আশঙ্কা বা পরিকল্পনা কোনওটিই ফলপ্রসূ না হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। তখনই আরও বেশি করে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।
৩। চিকিৎসার প্রেক্ষিতে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা গত দিনের। সেই ক্রিয়া-পক্রিয়া নিয়ে কখনওই আজ প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। তখন জানতেন না, আজকের তার ফল কী হতে চলেছে। তাই যা করেছেন, প্রিয়জনের ভাল কথা ভেবেই করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না হলেও ফিরে গিয়ে আগের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা করার কোনও রকম অবকাশ রাখবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy