প্রতীকী ছবি।
করোনার সময়ে নানা কাজেই বাধা এসেছে। তবে বিশেষ করে ক্ষতি হয়েছে অন্য কিছু রোগের চিকিৎসায়। প্রথম দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ঘিরে ব্যস্ততা ছিল চরম। হাসপাতালে প্রায় জায়গাই পাচ্ছিলেন না অন্য কোনও রোগী। এমন কি ক্যানসার আক্রান্তদেরও বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। সে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে ঠিকই, তবে যায়নি আতঙ্ক। গত দু’বছর ধরে হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকের মনেই ভয়, চিকিৎসকের কাছে গেলেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আতঙ্ক সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনও নয়। সরকারের তরফে বারবার সতর্ক করা হয়েছে, ভিড় এড়িয়ে চলতে। হাসপাতালও ভিড়ের জায়গা। সেখানে যাওয়া নিয়ে অস্বস্তি তাই তৈরি হয়েছে।
কিন্তু করোনা নিয়ে আতঙ্কের কারণে কি এখনও বাধা পড়েছে ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসায়?
বহু দেশেই দেখা গিয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানা বাধা সৃষ্টি করছে কোভিড-১৯। অনেক সময়ে রোগ ধরা পড়তেই দেরি হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে ধরা পড়ার পরও দ্রুত গতিতে চিকিৎসা এগনো যায়নি। কারণ, রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা এই অবস্থায় বারবার হাসপাতালে ঢুকতেই ভয় পেয়েছেন। শহর কলকাতাও বাদ পড়েনি সে আতঙ্কের পরিস্থিতি থেকে। যেমন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রীনিবাস নারায়ণ জানান, বহু রোগীর ক্ষেত্রে ক্যানসার ধরা পড়তেই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছে গত দু’বছরে। আগে যেমন সামান্য উপসর্গ দেখেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল, এখন আর তা অনেকেই করছেন না। অসুস্থতা বড় আকার নিলে তবেই চিকিৎসকের কাছে আসছেন। ২০২২ সালেও সেই পরিস্থিতিতে খুব পরিবর্তন আসেনি বলে মত তাঁর। শ্রীনিবাস বলেন, ‘‘বিশেষ করে প্রস্টেট ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, এই ক্যানসারের প্রকট কোনও উপসর্গ শুরুতে দেখা দেয় না। খুব সাধারণ কিছু সমস্যাই এর লক্ষণ। আমরা অনেকের চিকিৎসা করি বলে তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করাই। কিন্তু রোগীদের তা বোঝার কথা নয়। এখন অত সাধারণ উপসর্গ দেখে সহজে চিকিৎসকের কাছে আসছেন না বহু রোগী। তাই অনেক ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়তেই দেরি হচ্ছে।’’
ক্যানসার ধরা পড়ার পরও অনেক সময়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে করোনার আতঙ্ক। শহরের ক্যানসার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রেই শুরুর দিকে ক্যানসার রোগীর উপসর্গগুলি প্রকট হয় না। এই সময়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে সুস্থ হয়ে ওঠার পথটি তুলনায় মসৃণ হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় বহু রোগীই এই পর্যায়ে বারবার চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা নিয়ম মাফিক চিকিৎসা না পেলে অল্প সময়ে বড় আকার নিতে পারে। তেমনটা ঘটছেও।
তবে করোনা-আতঙ্কই একমাত্র বাধা নয়। রয়েছে নানা ধরনের জটিলতা, জানালেন বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক পুষ্কর শ্যাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘ক্যানসার রোগীরাও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এমন হলেই চিকিৎসার গতি কমে যাচ্ছে। সে সময়ে বাধা পড়ছে রেডিয়োথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপিতে।’’
করোনায় সংক্রমিত হলে কি কেমোথেরাপি এবং রেডিয়োথেরাপি কোনও ভাবেই চালানো সম্ভব নয়? পুষ্কর জানাচ্ছেন, এই দু’ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমনিতেই বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এমন বহু রোগী আছেন যাঁরা রেডিয়োথেরাপি নিতে গিয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘করোনা এমন একটি রোগ, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। তাই করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও বেশ অনেক দিন পর্যন্ত রেডিয়োথেরাপি নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বহু রোগী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy