গলা ভলো রাখতে ভেপার নিন।
অনেক মানুষই এমন পেশার সঙ্গে যুক্ত, যেখানে দিনরাত অনেকটা সময়ে কথা বলতে হয়। গলার জোর দরকার হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা, গায়ক-গায়িকা, ভয়েস আর্টিস্ট... প্রত্যেকের রুজিরুটিই নির্ভর করছে কণ্ঠের উপরে। সেই কণ্ঠের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা তাই একান্ত দরকার। অন্য দিকে নানা রোগভোগে মানুষের গলার স্বর পাল্টে যেতে পারে, অনেক সময়ে গলা দিয়ে স্বরই বেরোয় না অনেকের। কথা বন্ধ হয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ভয়েস থেরাপির সাহায্য নিয়ে সুস্থ কণ্ঠস্বর ফেরত পেতে পারেন। সমস্যার গোড়া কোথায়, সেটা আগে জানা জরুরি।
কণ্ঠস্বরে বদল কেন?
স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্ট প্রবীর কর্মকার বললেন, “অনেকের ভোকাল কর্ডে পলিপ বা সিস্ট হয়, সে ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর বদলে যায়। আবার পেশার খাতিরে যাঁদের খুব চেঁচিয়ে সারা দিন কথা বলতে হয়, তাঁদের মাসল টেনশন ডিসফোনিয়া হতে পারে। আবার ভোকাল কর্ড প্যারালিসিসও হতে পারে। যে কোনও অসুখবিসুখ থেকে বা পেশাগত কারণেও যদি কণ্ঠস্বরে বদল আসে, গলা বসে যায়, বিভিন্ন ব্যায়াম দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়।” তবে এর পিছনে কোনও রোগবালাই দায়ী কিনা বা কী কারণে কণ্ঠস্বরে কতটা সমস্যা হচ্ছে তার উপরেই নির্ভর করে চিকিৎসা।
চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রথমে রোগীকে কিছু ভয়েস অ্যাসেসমেন্ট করতে হয়। এর পর প্রয়োজন মতো বিশেষ এক্সারসাইজ় দেওয়া হয়। সেই ব্যায়ামে রোগীর সুরাহা মিলছে কিনা, সে সব বিষয় দেখা হয় নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে। প্রবীর কর্মকার জানালেন যে, ভিডিয়োস্ট্রোবোস্কপির মাধ্যমে ল্যারিঙ্কসের মধ্যে ছোট ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেখা হয়। এতে বোঝা যায়, রোগী কতটা সারছেন। সেই মতো ভয়েস এক্সারসাইজ় বদলানো হয়। ভোকাল কর্ডে পলিপ বা নডিউলস থাকলে এ ভাবে তিন মাসের মধ্যেই রোগীকে সারিয়ে তোলা যায়। তবে ভোকাল কর্ড প্যারালিসিস হলে তা সারতে আরও সময় লাগে।কণ্ঠস্বরের এক্সারসাইজ় ব্যক্তিবিশেষে ঠিক করা হয়। সব রোগীকেই যে একই রকম ব্যায়াম দেওয়া হয়, তা নয়। প্রবীর কর্মকার বললেন, “রোগীর সমস্যা কী ও তিনি রোগের কোন পর্যায়ে রয়েছেন, এ সব দিক বিবেচনা করে ভয়েস এক্সারসাইজ় দেওয়া হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে এখানে। যেমন অনেক সময়েই আমরা হেড পোজ়িশনিং ভয়েস এক্সারসাইজ় দিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে মাথা ডান, বাঁ, উপর ও নীচে চার দিকে ঘুরিয়ে আ-আ করে গলার ভিতর থেকে আওয়াজ বার করতে হয়।”
ভয়েস এক্সারসাইজ়
হামিং ওয়ার্ম-আপ এক্সারসাইজ়, পুশিং এক্সারসাইজ়, ইয়ন শাই এক্সারসাইজ় ইত্যাদি নানা ধরনের ভয়েস এক্সারসাইজ় রয়েছে। ভয়েস ট্রেনিং, এক্সারসাইজ়ের মাধ্যমে মূলত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, পিচ নিয়ন্ত্রণ, ভোকাল ব্যালান্স ইত্যাদি শেখানো হয়।
আবার কণ্ঠশিল্পীদের ক্ষেত্রে ভয়েস রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ় দেওয়া হয়। আমরা যখন কথা বলি, তখন আমাদের ভোকাল কর্ডের মাঝের গ্যাপটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কণ্ঠশিল্পীদের ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডের মাঝখানে ফোনেটরি গ্যাপ তৈরি হয়। অত্যধিক কণ্ঠের ব্যবহারে ভোকাল কর্ডে সোয়েলিং দেখা যায়। “সাধারণত এই সমস্যা গায়ক-গায়িকাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে নডিউলস তৈরি হয়। তাই এই রোগকে সিঙ্গারস নডিউলও বলা হয়ে থাকে। তখন তাঁদের রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ় দেওয়া হয়। এর ফলে ভোকাল কর্ডের মাঝের গ্যাপ মিলিয়ে আবার স্বাভাবিক পিচ অর্থাৎ গানের পিচ ফিরে আসে,” বলে জানালেন প্রবীর কর্মকার। ভয়েস রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ়ে মুখ হাঁ করে হাই তোলার মতো খানিকটা হাওয়া টেনে গলার মধ্যে নিতে হবে, তার পরেই আবার বায়ুটা ছেড়ে মুখে একটা ‘হাম’ আওয়াজ করতে হবে। এতে গলার পেশি বিরাম ও আরাম পায়। কিছু থ্রোট মাসাজও করতে দেওয়া হয়।
তবে এ-ও জানালেন যে, এক্সারসাইজ়ের পাশাপাশি ভোকাল হাইজিনও অভ্যেস করতে বলা হয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যেমন শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তেমনই যাঁদের পেশা কণ্ঠনির্ভর, তাঁদের কণ্ঠের যত্ন নেওয়া জরুরি। যেমন,
পিউবারফোনিয়া হলে ছেলেদের কণ্ঠস্বর মেয়েলি হয়। সে ক্ষেত্রে
ভয়েস এক্সারসাইজ়ের মাধ্যমে সেই কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করা সম্ভব। তবে অনেক সময়ে মেয়েদের কণ্ঠস্বরও পুরুষালি হয়। একে বলে অ্যান্ড্রোফোনিয়া। এর কারণ মূলত হরমোনজনিত। এ ক্ষেত্রে ভয়েস থেরাপির পাশাপাশি মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টও প্রয়োজন হয় বলে জানালেন প্রবীর কর্মকার।
ছোট-ছোট এই দিকগুলো খেয়াল রাখলেই কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক থাকবে। আর কণ্ঠস্বরের সমস্যায় নিজে থেকে ভয়েস এক্সারসাইজ় না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy