‘দিনচর্যা’ একটি সংস্কৃত শব্দ; এর অর্থ প্রতিদিনের রুটিন বা ২৪ ঘণ্টার রুটিন। এই শব্দটিকে দৈনন্দিন রুটিনের একটি ধারণা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
ডাঃ দেবব্রত সেন
পেটানো শরীর, পেশিবহুল হাত, চওড়া কাঁধ, ঢেউ খেলানো একমাথা চুল, এক মুখ মিষ্টি হাসি, আধুনিক স্টাইলিস্ট বিয়ার্ড, এমন চেহারাই তো সবার স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমানে এমন ঐশ্বরিক চেহারার দেখা কখনও কখনও মেলে। আধুনিক জীবনযাপনের কারণে এই কাঙ্খিত শরীর অর্জন করা কি সত্যিই কঠিন? কী ভাবে এমন সুঠাম চেহারার অধিকারী হলেন ডাঃ দেবব্রত সেন? কী ভাবেই বা সেই নির্মেদ পেশিবহুল এবং ফিট শরীর দিনের পর দিন ধরে রেখেছেন আয়ুর্বেদাচার্য? রইল তাঁর আয়ুর্বেদের গোপণ রহস্য। কী ভাবে আয়ুর্বেদকে সঙ্গী করে নিজের চলার পথ বেছে নিয়েছেন ডাঃ দেবব্রত সেন, তা শিখে নিন আপনারাও।
ডাঃ দেবব্রত সেন জানাচ্ছেন, তথাকথিত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট বা ক্ষতিকারক বিভিন্ন হেলথ ড্রিংকসের বাইরে বেরিয়ে এসে আযুর্বেদিক দিনচর্যা, ঋতুচর্যার পাশাপাশি সঠিক আয়ুর্বেদিক ভেষজের হাত ধরে সহজেই পেশিবহুল ফিট চেহারা ধরে রাখা যেতে পারে।
ডাঃ সেনের মতে, যে কোনও ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে পথ একটাই। সঠিক নিয়মানুবর্তিতা। এই নিয়মানুবর্তিতা তিনি তাঁর নিজের জীবনেও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। আজ পর্যন্ত ডাঃ সেন কোনও পার্টিতে যাননি। তিনি কোনও ক্লাবের সদস্য নন। তাঁর স্বচ্ছ ও সহজ জীবনযাত্রাই বলে দেয় যে তার দায়িত্বশীল জীবনযাত্রার কথা। ডাঃ দেবব্রত সেনের গ্ল্যামার, চুলের স্টাইল ও ফিট শরীরের নেপথ্যে থাকা গল্পের সঙ্গে কোনওভাবেই কেউ দ্বিমত হতে পারেন না।
সত্যিই তো! দিনের পর দিন ডাঃ সেন এই সমাজকে শিখিয়ে চলেছেন সুস্থতার কথা। নায়ক বা মডেল হতে হতে কোনও এক অজানা কারণে তিনি আজ আয়ুর্বেদাচার্য। তাঁকে কাছ দেখে মনে হয়, কোনও গ্রিক দেবতাকে ডাঃ দেবব্রত সেনের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একাকার করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কাছ থেকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা এক বাক্যে এই কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন।
আদ্যান্ত বাঙালি। বাঙালি খাবারই তার প্রিয়। একসময় তাঁর ওজন ছিল ১০০ কেজিরও উপরে। কিন্তু সেখান থেকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিজেকে স্লিম এবং ট্রিম করে তুলেছেন ডাঃ সেন। নেপথ্যে সেই আয়ুর্বেদিক ভেষজ, যা তথাকথিত হেলথ সাপ্লিমেন্টকে এক ধাক্কায় কয়েক ক্রোশ দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে ডাঃ সেন বলেন, “আমরা জানি, হেলথ সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য উপকারী নয়। অতিরিক্ত প্রোটিন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিডনির উপরে প্রভাব ফেলে। অথচ আয়ুর্বেদ চিকিৎসা, দিনচর্যা ও ঋতুচর্যার মাধ্যমে সেই কাঙ্খিত ফিটনেস খুব সহজেই পাওয়া যায়। এবং এর পাশাপাশি দারুন কঠোর সাধনার মাধ্যমে একটি দারুন শরীর বানিয়ে তুলতেই পারি।”
ডাঃ সেন এখনও সেই বাঙালি খাবার ভালবাসেন। খান বাঙালি খাবারই। কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবারের পাশাপাশি তিনি প্রোটিন জাতীয় ডায়েটও পছন্দ করেন। তাঁর ডায়েটে থাকে ডিম, চিকেন, ভাত, রুটি, ভুট্টা এবং অবশ্যই একটি মরসুমি ফল। যেদিন চিকেন খাওয়া হবে, সেদিন কোনওরকম দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া চলবে না। এমনকি দই পর্যন্ত না। না হলে পরিপাকে সমস্যা হতে পারে। ডাঃ সেনের সকাল থেকে রাত, শৃঙ্খলায় মোড়া। তিনি ডায়েট ও শরীরচর্চার রুটিন বেশ কঠোরভাবে মেনে চলেন। কোনওদিন রুটিনের অন্যথা হয় না। তাঁর ব্যক্তিগত জিম ও সুইমিং পুলে তিনি রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করেন। ওয়ার্কাউটের সময় তিনি যেন নিজের অন্তঃরাত্মাকে খুঁজে পান। কারণ জিমে মন ভাল করার হরমোন ক্ষরণ হয়। এই শৃঙ্খলাই ডাঃ সেনের জীবন থেকে সারাদিনের এত ব্যস্ততার মধ্যেও কোনও চাপ, উদ্বেগ ও সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখে। নিজের পেশায় যত ব্যস্ততাই থাকুন না কেন কোনওভাবেই তিনি ওয়ার্কআউট মিস করেন না।
আয়ুর্বেদাচার্য জানাচ্ছেন, নতুন প্রজন্মের যাঁরা জিমে যান, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই নেটমাধ্যমে ভুল গাইডেন্সের কারণে পেশিতে চোট পান। বা ক্ষতি হয়। তাই সঠিক ট্রেনার ছাড়া পাওয়ার লিফ্টিং বা জিম নৈবঃ নৈবঃ চঃ। তার থেকে বরং সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, কার্ডিয়ো সেশন ইত্যাদি করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন যে ট্রেডমিলে দৌঁড়ানোর থেকে হাঁটা অনেক বেশি উপকারি।
ডাঃ সেন মনে করেন জীবনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া খুব সহজ। কিন্তু প্রতি বছর প্রথম স্থান বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। যেখানে ধারাবাহিকতা রয়েছে, সেখানে ফল আসতে বাধ্য। ওয়ার্কআউট, ফিটনেস বা আয়ুর্বেদিক ভেষজ সেবন করার ক্ষেত্রে নিয়মাবর্তীতা ও ধারাবাহিকতা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন সপ্তাহে একদিন জিমে গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফিট হয়ে যান না, ঠিক তেমনই আয়ুর্বেদিক ওষুধ একদিন সেবন করেই যদি কেউ মনে করে কাল থেকেই ফল আসবে, তা হলে সেই ব্যক্তি মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
ডাঃ সেন খেলাধুলা করতেও বেশ ভালবাসেন। সময় পেলেই ব্যাট হাতে বা ফুটবল পায়ে নেমে পড়েন মাঠে। যদিও তাঁর প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রতি বছর পরম্পরা পরিবারের তরফে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এবং শেষ তিন বছর ডাঃ সেন সেখানে ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মান পেয়েছেন।
কথায় আছে 'স্বাস্থ্যই সম্পদ'। মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ এই শব্দবন্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। যে কোনও মানুষই তাঁর প্রতিদিনের রুটিনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে চান। যদিও হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে সেই রুটিন মেনে চলার সময় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের লক্ষ্যে অনেকেই ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি তথা আয়ুর্বেদের উপর ভরসা রাখছেন। মনে করা হয়, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে আয়ুর্বেদ দিনচর্যা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে। চিকিৎসক আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন এই দিনচর্যা অনুসরণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।
‘দিনচর্যা’ একটি সংস্কৃত শব্দ; এর অর্থ প্রতিদিনের রুটিন বা ২৪ ঘণ্টার রুটিন। এই শব্দটিকে দৈনন্দিন রুটিনের একটি ধারণা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যা আদতে আমাদের অভ্যন্তরীণ শারীরবৃত্তিয় ঘড়ির সঙ্গে আমাদের কার্যকলাপকে সংযুক্ত করার জন্যেই তৈরি করা হয়েছে। এটি অনুসরণ করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ডাঃ দেবব্রত সেনের মতে কী ভাবে আয়ুর্বেদিক দিনচর্যা অনুসরণ করবেন তা সম্পর্কে এখানে একটি বিশদ নির্দেশিকা দেওয়া হল —
ডাঃ দেবব্রত সেন উল্লেখ করেছেন যে আয়ুর্বেদিক দিনচর্যা অনুসরণ করে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাই নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডায়েটের প্রতিও সচেতন হওয়া যায়। এবং এটি দীর্ঘকালীন সময়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। বেদ মতে, প্রতিটি আয়ুর্বেদিক খাবার গ্রহণের সঙ্গে শারীরিক ভারসাম্যের যোগ রয়েছে। পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন আয়ুর্বেদিক ঔষধির উপর ভিত্তি করে একটি আয়ুর্বেদিক ডায়েটের পরিকল্পনা তালিকাভুক্ত করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, “আয়ুর্বেদে প্রায় প্রত্যেকটি ভেষজেরই ঔষধিগুণ রয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও ওষুধের বেশি ব্যবহারে হিতে বিপরীত ফলও হতে পারে। সুতরাং ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আয়ুর্বেদিক ডায়েট আমাদের ত্রিদোষ অর্থাৎ বাত, পিত্ত বা কফের উপর ভিত্তি করে কী খাওয়া উচিত এবং কী এড়ানো উচিত তার একটি তালিকা প্রদান করে। আবার আয়ুর্বেদিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ না করলে অনেক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগের তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল জ্ঞান, খিটখিটে মেজাজ এবং ঘুমের সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ সহ অন্যান্য মারাত্বক রোগ।”
এখানে কিছু নিয়ম দেওয়া হল যা আয়ুর্বেদিক ডায়েট করার সময় অনুসরণ করা উচিত। ডাঃ দেবব্রত সেনের মতে এটি দিনচর্যারই একটি অংশ।
তাঁর সুস্থ শরীরের রহস্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও যোগ করেছেন যে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ উভয়ই আমাদের জন্য প্রয়োজন এবং এগুলির নিজস্ব সুবিধা রয়েছে। ডাঃ দেবব্রত সেন জানাচ্ছেন, “আমি বলব, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে যেমন গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যায় আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ওষুধের মাধ্যমে ভালোভাবে নিরাময় করা যায়। আয়ুর্বেদিক ওষুধের জন্য, এই নিরাময় প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময় নেয়। তবে তা সমস্ত দীর্ঘস্থায়ী রোগকে সমূলে নিরাময় করতে সক্ষম।”
আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেনের ক্লিনিক এবং তাঁর পরামর্শ সমগ্র ভারত জুড়ে উপলব্ধ। ইতিমধ্যেই দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছেন এবং পরম্পরা আয়ুর্বেদের ওষুধের সাহায্যে সুস্থ রয়েছেন।
বিশদে জানতে ক্লিক করুন – www.drdebabratasen.com
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy