মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় চিকিৎসক উষসী বন্দ্যোপাধ্যায়
পরিসংখ্যান বলছে, বিগত কয়েক বছর ধরে বহু মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে এই লকডাউনকে। ঘর বন্দি থাকতে গিয়ে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই হাঁপিয়ে উঠছেন। এক দিকে অফিস, পড়াশুনা, অন্য দিকে বন্দিদশার সাতকাহন — সাঁড়াশি চাপে বাড়ছে মানসিক সমস্যা। সত্যিই কী পরিস্থিতি এতটাই জটিল? এই পরিস্থিতিতে কী করনীয়? কী ভাবে ফুরফুরে থাকা যায়? উপায় জানালেন চিকিৎসক উষসী বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার মতে, আমরা কেউই ‘চাপিয়ে দেওয়া’ বিষয়টি পছন্দ করি না। ফলে হঠাৎ করে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যখন আমরা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে এমন বদল সত্যিই আমাদের প্রত্যেককে চিন্তিত করে তুলেছিল। উপরন্তু করোনার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের যে যে কঠোর পদক্ষেপ করার উপদেশ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা, সেই পদক্ষেপগুলিই আমদেরকে হাঁপিয়ে তুলেছিল। যেন শিকল বন্দি এক জীবন। বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়ে উঠেছিল আরও প্রবল।
উষসী বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “প্রত্যেককে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে মানসিক ক্লান্তির এই যে গুঢ় সমস্যা, তার শিকড় কিন্তু একটি বা দু’টি নয়, বরং অনেকগুলি। এবং হঠাৎ ঘরবন্দি থাকার কারণই কিন্তু মানসিক অবসাদের একমাত্র কারণ নয়। করোনার সময়ে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখেছি। প্রিয়জন হোক বা পরিচিত কেউ, হারানোর যে যন্ত্রণা, সেই যন্ত্রনা বহু মানুষকে মানসিক অবসাদের দিকে ঠেলে তো দেবেই। যাঁরা এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন, তারা ভাল আছেন। কিন্তু আশার বিষয় এই যে, এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পরেও আমরা কেউ কিন্তু থেমে থাকিনি। রোজকার অভ্যেসে আমরা ফের মিশে গিয়েছি।
বিগত এক দশকে কি দুশ্চিন্তার পরিমাণ বেড়েছে? উষসী বন্দ্যোপাধ্যায় এক কথায় এটি স্বীকারও করে নিলেন এটি। উত্তরে জানালেন, “আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। পেশার উপরেই এই দুশ্চিন্তার মাত্রা নির্ভর করে। কেউ তাঁর চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তিত। কেউ আবার আর্থিক বিষয় নিয়ে। কেউ বা অফিসের পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত। আবার কেউ নিজের পরিবার নিয়ে। অতএব, এই দুশ্চিন্তা করোনার আগে যে ছিল না, তা কিন্তু নয়। বলা যেতে পারে করোনা আসার পরে তার পরিমাণ বেড়েছে। তবে এ কথাও আমাদের মানতে হবে যে বাড়ির বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই দুশ্চিন্তা বা হতাশার পেছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই। এবং এই দুই বয়সের মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিযোজন করার ক্ষমতাও ভিন্ন। আমার মনে হয় এ আসলে অভ্যাস পরিবর্তনের সমস্যা। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, বাচ্চারা সকাল ১০টা-১১টায় ঘুম থেকে উঠছে। এর পর কোনও ভাবে ল্যাপটপ বা মোবাইলের সামনে বসে পড়ছে। সারা দিন কোনও রকম অ্যাক্টিভিটি নেই। নিয়মমাফিক দিনযাপন নেই। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত নেই। খেলাধুলা নেই। শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন নেই। বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ। এতে তো মানসিক অবসাদ বাড়বেই।”
এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে সুস্থ থাকা যায়? উত্তরে উষসী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ফুরফুরে থাকতে হলে মানসিক ক্লান্তি দূর করা ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। যে কোনও বয়সের ক্ষেত্রে। যে কোনও পরিস্থিতিতে। আমাদের বুঝতে হবে যে শারীরিক সুস্থতার নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপক রয়েছে। মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে তেমন কোনও পরিমাপক নেই। অর্থাৎ মানসিকভাবে ভাল থাকাকে কোনও একজন ব্যক্তি কী ভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন তা সম্পূর্ণ রূপে ওই ব্যক্তির উপরেই নির্ভর করে। যদি ধরা যায়, ভাল থাকা মানে স্থিতীশীল থাকা বা ফুরফুরে থাকা, তা হলে সেই ফুরফুরে থাকার দায়িত্বও কিন্তু সেই ব্যক্তির। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সব থেকে বড় সমস্যা হল হতাশা বা অনিশ্চয়তা। যা অতিমারির সময় বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন মানুষ তুলনামূলকভাবে ভাল আছে। বলা ভাল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। মানিয়ে নিয়েছে। তবে খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটা লড়াকু মানসিকতার প্রয়োজন। হার না মানা স্বভাব কিন্তু সব কিছুকে অনায়াসে সামাল দিয়ে দিতে পারে। আত্মবিশ্বাসী থাকুন। নিজেকে নিজের মতো করে উপলব্ধি করুন। তবেই কিন্তু ক্লান্তি কাটিয়ে ফুরফুরে থাকা সম্ভব।
সব শেষে মনে রাখবেন, ক্ষেত্র বিশেষে প্রত্যেক আলাদা আলাদা ব্যক্তির ক্ষমতা আলাদা আলাদা। এমন কোনও পরিস্থিতি যদি জীবনে আসে, এবং তাকে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে, তা হলে অবশ্যই কোনও মনোবিদের সাহায্য নিন। ভাল থাকুন। ভাল রাখুন।
এই প্রতিবেদনটি আমরির সঙ্গে যৌথ উদ্য়োগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy