ইন্টারট্রাইগোর সমস্যা। — ফাইল চিত্র।
শীতের মনোরম আবহাওয়া শেষ, গ্রীষ্মের চোখরাঙানি শুরু। এই অবস্থায় ত্বকের বিড়ম্বনা বাড়তে শুরু করে। হাজার রকম সংক্রমণের জ্বালায় নাজেহাল হন মানুষ। তার মধ্যে অন্যতম হল ইন্টারট্রাইগো।
খটমট নামের এই ত্বক-সংক্রমণটি কিন্তু ঘটে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের ঘর্ষণে (স্কিন টু স্কিন ফ্রিকশন)। অর্থাৎ, শরীরের যে অংশে ভাঁজ রয়েছে, ঘাম, আর্দ্রতা, ধুলো-ময়লা জমে সেই অংশেই হানা দেয় এই সমস্যা। আপাত ভাবে দেখলে মনে হবে লাল রঙের র্যাশ, কিন্তু ক্রমশ অস্বস্তি ও চুলকানি বাড়তে থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশ ব্যথাও হয়। অনেক সময়ে, ইন্টারট্রাইগোর উপরে ব্যাক্টিরিয়া বা ইস্টের একটা সেকেন্ডারি সংক্রমণও হতে পারে।
ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর জানালেন, ল্যাটিন শব্দ ‘ইন্টারট্রিজ়নাস’ থেকে ইন্টারট্রাইগো কথাটি এসেছে। শব্দটির অর্থ শরীরে যে কোনও ভাঁজ (ঘাড়, বগল, পেট, কুঁচকি ইত্যাদি)। সেই ভাঁজের প্রদাহকে বলা হয় ইন্টারট্রাইগো।
কাদের হতে পারে ইন্টারট্রাইগো?
ডা. ধর জানালেন,
স্থূলতার সঙ্গে ইন্টারট্রাইগোর সম্পর্ক রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের শরীরে ভাঁজের সংখ্যাও বেশি। ফলে হতে পারে এই প্রদাহ।
যাঁদের ডায়াবিটিস, হাইপোথাইরয়েডিজ়ম রয়েছে। কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন তাঁরা এই ধরনের সংক্রমণে চট করে আক্রান্ত হন। ক্যানসার রোগীরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
বয়স্ক মানুষেরা বা যাঁরা ঠিক ভাবে নিজেদের পরিষ্কার রাখতে পারেন না, তাঁদের হতে পারে এই অসুখটি।
অনেক সময়ে শরীরের ভাঁজে পোকার কামড় বা স্পর্শে সংক্রমণ হতে পারে। একে বলে মিরর ইমেজ লিশন।
অতিরিক্ত ওজনের শিশুরও এই সমস্যা হতে পারে। এটি ডায়াপার র্যাশ নামেও পরিচিত। অনেক সময় বড়দের থেকে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে শিশুদের মধ্যে।
মোকাবিলা করব কী ভাবে?
প্রাথমিক ভাবে নিজের হাইজিন ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত স্নান করতে হবে। গরমে পরিষ্কার ও আরামদায়ক সুতির পোশাক পরলেই ভাল।
পাউডার ব্যবহার করা একেবারেই যাবে না। পাউডার ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। বদলে অ্যান্টি-পার্সপিরেন্ট ডিয়োডোরেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে শরীরের ভাঁজে। অনেক সংস্থা শিশুদের জন্যও বিশেষ ধরনের ডিয়োডোরেন্ট তৈরি করে। সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন হলে একাধিক বার স্নান করাতে হবে। ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে ঈষদুষ্ণ জল করে নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাতের দিকে স্নান না করিয়ে বিকেলের দিকে একবার গা ধুইয়ে দিতে পারেন।
সংক্রমণ একটু বেশি মাত্রায় হলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলমের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খেতে হবে। অনেক সময়ে ইন্টারট্রাইগোর সঙ্গে জোড় বাঁধে স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ। ফলে, অ্যান্টি স্ট্যাফাইলোকক্কাস ধরনের ওষুধ খেতে হবে।
চুলকানির অস্বস্তি কমাতে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হবে।
সংক্রমণ দগদগে হয়ে উঠলে অল্প সময়ের জন্য স্টেরয়েড খেতে হতে পারে। তবে তার পর আবার অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম ও ওষুধেই ফিরতে হবে।
বার বার কি ফিরে আসতে পারে এই সংক্রমণ?
ডা. ধর জানালেন, মূলত তিনটি কারণে বার বার ফিরে আসে ইন্টারট্রাইগো:
আক্রান্ত রোগীর কারণে: ওবেসিটি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যায়, যদি যথাযথ ভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায়, তা হলে সমস্যাটি ফিরে আসে না। সেটির অন্যথা হলেই ফিরে আসতে পারে এই রোগ।
পরিবেশগত কারণে: গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে এই অসুখটির প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। সেই সময়ে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
পেশাগত কারণে: যাঁরা মাটি ঘাঁটেন তাঁরা যদি নখ পরিষ্কার না করেন তা হলে সেখান থেকে বার বার ফিরে আসতে পারে ইন্টারট্রাইগো। সুতরাং, ধুলো-বালি-মাটি ঘাঁটার পরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুতেই হবে।
এই অসুখ কি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়?
ডা. ধর জানালেন, অবশ্যই নির্মূল হতে পারে। তবে তার জন্য মেনে চলতে হবে বেশ কিছু পদক্ষেপ। যেমন, অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। নিয়মিত পরিষ্কার থাকতে হবে। তা হলেই আস্তে আস্তে অসুখ কমতে থাকে।
র্যাশ রুখতে শিশুদের ডায়পার দিনে কত বার পাল্টানো উচিত?
দিনে দু’ঘণ্টা অন্তর ডায়পার পাল্টানো উচিত। তবে এখন বাজারে সুপার-অ্যাবজ়রব্যান্ট ডায়পার পাওয়া যায়, রাতের জন্য সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, ডায়পার খুলে ও পরানোর আগে নিয়মিত জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে। ভিজে কাপড় বা টিসু দিয়ে মুছে দিতে হবে। সবসময়ে ডায়পার না পরিয়ে একটু হাওয়া লাগানোও দরকার।
ছোটখাটো এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে হাইজিন মেনে চললে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
শ্রেয়া ঠাকুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy