দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বুঝলেই বিপদ। বাড়ির বড়রা খামোখাই বলেন না যে, দিনে দু’বার ভাল করে দাঁত মাজা উচিত। কিন্তু তা শোনেন ক’জন। সারা দিনে যত খাবার খাওয়া হচ্ছে, তার ভগ্নাংশ জমছে দাঁতের ফাঁকে, মাড়িতে। তাতে বহাল তবিয়তে বাসা বাঁধছে নানা রকম ব্যাক্টেরিয়া। মুখগহ্বরে জন্মানো এই সব জীবাণু যে কেবল দাঁতের ক্ষয় বা ব্যথার কারণ বা মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী, তা কিন্তু নয়। এই সব জীবাণু মুখ থেকে ছড়ায় সারা শরীরে এবং এদের সবচেয়ে পছন্দের ঠিকানা হল হার্টের ধমনী। কাজেই দাঁতের অযত্ন হলে হার্টের স্বাস্থ্যও বেহাল হতে বাধ্য।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়বে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে এক গবেষণায়। দাঁত থেকে কী ভাবে হৃদ্রোগ হতে পারে, তা ভেবে আশ্চর্য হওয়ারই কথা। কিন্তু গবেষকেরা সে ব্যাখ্যাই সবিস্তার দিয়েছেন। আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও দেশের পাবমেড থেকে প্রকাশিত দু’টি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মাড়িতে ও মুখগহ্বরে জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া হৃদ্রোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করলে মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়। পরফাইরোমোনাস জিঞ্জিভালিস, অ্যাকটিনোব্যাসিলাস, ট্রিপোনেমা ডেন্টিকোলা নামে কিছু ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় মাড়িতে, যারা প্রদাহ তৈরি করে। এই সব ব্যাক্টেরিয়া দাঁতের ক্ষয়ের কারণ তো হয়ই, পাশাপাশি লালায় মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:
মুখগহ্বরে জন্মানো এই সব জীবাণু রক্তেও মেশে এবং হার্টের ধমনীতে গিয়ে বাসা বাঁধে। সেখানে প্রদাহ তৈরি করে, ফলে রক্তজালিকাগুলির ক্ষতি হয়। রক্ত সংবহন বাধা পেয়ে ধমনীর দেওয়ালে দূষিত পদার্থ জমতে থাকে। যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের কারণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ধমনীর দেওয়ালের মধ্যে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমতে থাকে যাকে বলে ‘প্লাক’। এর ফলে ধমনী সংকীর্ণ হয়ে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিতে পার। এই ব্লকেজ থেকেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের হৃদ্রোগ হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।
জীবনযাপনের পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত নেশার কারণে দাঁতের সমস্যা ইদানীং কালে বেশিই হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানীয়, জাঙ্ক ফুডের কারণেই মুখগহ্বরে নানা রকম ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধছে। মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা ডায়াবিটিসে ভুগছেন, তাঁদেরকেও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভাল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। তাই দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজা, প্রয়োজনে ফ্লসিং করা, নিয়মিত গার্গল করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফলের রস বা ঠান্ডা নরম পানীয় খাওয়ার পর মুখের লালার পিএইচ-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই গার্গল করলে তা আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে নিয়মিত জিভ পরিষ্কার রাখাও জরুরি।