৩০ বছর পূর্তির মুখে কলকাতার অন্যতম প্রথম সারির চিকিৎসাকেন্দ্র রুবি জেনারেল হাসপাতাল। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর হাত ধরে ১৯৯৫ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল এই হাসপাতালের। উদ্বোধনের ছ’মাস পরেই মাদার টেরেসার হাত ধরে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সূচনা হয়। আগামী ২৫ এপ্রিল (শুক্রবার) সেই পথ চলার ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। শুরুর লগ্ন থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে কী ভাবে এটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল এবং ক্যানসার সেন্টারের রূপ নেয়, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার আলোকপাত করেন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা তথা চেয়ারম্যান চিকিৎসক কমল কে দত্ত।
গত এক দশকে পূর্ব ভারতে ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে রোগী পরিষেবা দিয়ে গিয়েছে রুবি ক্যানসার সেন্টার। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের এক উন্নত রেডিয়োথেরাপি যন্ত্র ‘ভেরিয়ান ট্রুবিম’-এর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুবি দত্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিশনারিজ় অফ চ্যারিটির সিস্টার মাইকেল এবং দক্ষিণেশ্বরের আদ্যাপীঠের বিবেক মহারাজ। ক্যানসার টিউমর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভেরিয়ান ট্রুবিম যন্ত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলতি বছরের জুন মাস থেকেই রুবি জেনারেল হাসপাতালে ‘ডিজিটাল পিইটি স্ক্যান’-এর সুবিধা চালু হবে। কলকাতার মধ্যে এই পরিষেবা প্রথম চালু হচ্ছে এই হাসপাতালেই। আগে যে স্ক্যান করতে আধ ঘণ্টা সময় লাগত, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা পাঁচ মিনিটেই সম্ভব হবে। রোগীদের শরীরে রেডিয়েশনের মাত্রাও এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। হাসপাতালে এই পরিকাঠামোর জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

রুবি জেনারেল হাসপাতালে ৩০তম বর্ষপূর্তি উদযাপনের মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার বুকে এই হাসপাতালটির উৎকর্ষ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলেও স্বীকৃত হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর ধরে আমেরিকার নিউজ়উইক ম্যাগাজ়িনে ভারতের সেরা ৫০ হাসপাতালের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে রুবি হাসপাতাল। পূর্ব ভারতের মধ্যে একমাত্র এই হাসপাতালেরই টানা পাঁচ বছর ধরে এই স্বীকৃতি মিলেছে। হাসপাতালের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে একটি দাতব্য মানসিক সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে আজ। রুবি হাসপাতালের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই পরিষেবার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। সমাজের সর্বস্তরের সব বয়সের মানুষ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে মনোস্তাত্ত্বিক পরামর্শের সুবিধা পাবেন।
পাশাপাশি আদ্যাপীঠ আশ্রমের ৮৫০ জন শিশুর বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুবি হাসপাতাল। ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দ্রুত শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য মিশনারিজ় অফ চ্যারিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে রুবি হাসপাতাল। মিশনারিজ় অফ চ্যারিটির প্রতিটি আশ্রমের আবাসিকদের জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর ক্যানসার চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা করছে তারা। পাশাপাশি ‘বি হেলদি’ নামে একটি কিয়স্কও চালু করছে তারা। এর মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রক্তচাপ, রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করাতে পারবেন সাধারণ মানুষ।