দুপুর হলেই কলকাতার অফিস পাড়ায় ইডলি-দোসার দোকানে ভিড় বাড়তে শুরু করে। বাটিতে ইডলি দিয়ে তার উপর চাটনি ছড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম সম্বর ঢেলে দোকানদারের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা! ডাল-ভাতের মতোই তৃপ্তি করে খান বাড়ি থেকে ‘টিফিন’ না আনতে পারা চাকুরেরা।
ইডলি দক্ষিণ ভারতের খাবার হলেও গোটা দেশেই পেট ভরানোর হালকা পদ হিসাবে জনপ্রিয়। ইদানীং পেটের স্বাস্থ্যের জন্য মজানো খাবার খাওয়ার ঝোঁক তৈরি হওয়ায় আরও বেশি করে ইডলি জাতীয় মজানো খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
অথচ এক রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বিবৃতি বলছে সেই ইডলি থেকে ক্যানসার হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সব ইডলি নয়। এক বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো ইডলি থেকে এমন হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
কোন পদ্ধতিতে তৈরি ইডলিতে সমস্যা?
কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর ওই বিবৃতি জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, হোটেলে- রেস্তরাঁয় বা রাস্তার ধারের দোকানে ইডলি ভাপানোর জন্য অনেক সময় যে প্লাস্টিকের পাত্র বা প্লাস্টিকের বড় পাতা ব্যবহার করা হয়, তা শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
কেন প্লাস্টিকের ব্যবহার?
লোহা বা অ্যালুমিনিয়ামের ইডলি ভাপানোর পাত্রে অনেকেই প্লাস্টিকের পাতা বিছিয়ে তার উপর ইডলির মিশ্রণ ঢেলে দেন। তাতে ভাপানোর পরে ইডলি তুলতে অসুবিধা হয় না। ইডলি তুলতে গিয়ে ভেঙেও যায় না। প্লাস্টিকের পাতাটি ধরে টান দিলেই উঠে আসে। দ্রুত এবং নিটোল আকারের ইডলি বানানোর জন্যই ওই উপায় ব্যবহার করেন বিক্রেতারা।
কী ভাবে প্লাস্টিক থেকে ক্যানসার ছড়াতে পারে?
কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, প্লাস্টিকে ইডলি ভাপানো হলে তা থেকে রাসায়নিক বেরিয়ে মিশতে পারে ইডলিতে। প্লাস্টিকে থাকে বিসফেনল এ এবং ফ্যালেটসের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক। ইডলি বানানোর সময়ে প্লাস্টিকের পাতা গরম হলে তা থেকে ওই রাসায়নিক বেরিয়ে খাবারে মেশার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। আর ওই ধরনের রাসায়নিক শরীরে এন্ডোক্রিনের ভারসম্য নষ্ট করতে পারে যা থেকে ক্যানসারের মতো সমস্যা তো বটেই প্রজননের সমস্যা এবং আরও নানারকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ কণিকা মলহোত্র। তা থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সতর্কবাণী
প্লাস্টিকে ইডলি ভাপানোর বিষয়টি নিয়ে এতটাই চিন্তিত কর্নাটক প্রশাসন যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য দফতর কর্নাটক জুড়ে প্লাস্টিকের পাতায় ইডলি ভাপানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সমস্ত খাদ্য বিক্রেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ইডলি বানানোর জন্য প্লাস্টিক কখনওই ব্যবহার করবেন না।’’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কারও বিরুদ্ধে এর পরও প্লাস্টিক ব্যবহারের অভিযোগ এলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
প্লাস্টিকের বদলে কী?
কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘প্লাস্টিকের বদলে কলা পাতা ব্যবহার করুন।’’ ইডলি তোলার সুবিধার জন্য মসৃণ স্টিলের বাসন ব্যবহার করার কথাও বলেছেন তিনি। পুষ্টিবিদ কণিকা আবার বলছেন, ‘‘ভাপানোর পাত্রে পাতলা সুতির কাপড় রেখে তার উপরে ইডলির মিশ্রণ ঢেলে ভাপানোর পুরনো পদ্ধতি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। সেই ভাবেও ইডলি বানানো যেতে পারে।’’