শিশুর শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কোন রোগের লক্ষণ? প্রতীকী ছবি।
শীতকাল বলে শুধু নয়, মরসুমের যে কোনও সময়েই যদি শিশুর ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে গিয়ে র্যাশ বেরোতে থাকে, তা হলে সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের। অনেক সময়েই দেখা যায়, কোনও খাবার বা ধাতব জিনিস থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে শিশুর। কিন্তু যদি দেখা যায়, ত্বক সবসময়েই শুষ্ক হয়ে মাছের আঁশের মতো খসখসে হয়ে যাচ্ছে বা ত্বকে লালচে র্যাশ বেরোচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে ত্বকেরই কোনও অসুখ বাসা বেঁধেছে। ত্বকের উপরিভাগে যে অ্যালার্জি হয়, তার শতকরা ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এগ্জ়িমা বা শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থাকে। শিশুরাও এই সমস্যায় ভোগে।
চর্মরোগ চিকিৎসক অতুল তানেজার কথায়, ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে গিয়ে র্যাশ বেরোলে বা চুলকানি হলে, তাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় ‘অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস’। দু’বছর বা তার কম বয়সি শিশুদের বেশি হয়। পাঁচ বছর অবধি ত্বকের এই সমস্যা ভোগাতে পারে। এ ক্ষেত্রে ত্বকে প্রচণ্ড চুলকানি হয়। ত্বকে এত বেশি প্রদাহ হয় যে, ত্বক ফুলে ওঠে। র্যাশ, ফুস্কুড়ি দেখা দিতে পারে। অথবা বড় বড় ফোস্কার মতো দেখা দিতে পারে ত্বকে।
অনেক শিশুর অ্যালার্জির ধাত থাকে। ক্রমাগত হাঁচি-কাশি, চোখ দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ, শ্বাসনালিতে প্রদাহ হয়। একে বলে ‘অ্যালার্জিক রাইনিটিস’। এই ধরনের অ্যালার্জি থাকলেও তার থেকে ‘অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস’ দেখা দিতে পারে। আবার ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ থেকেও ত্বকের অ্যালার্জি মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়ে ত্বকে র্যাশ, চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশু অপুষ্টিতে ভুগলে, বা তার হাইপোথাইরয়ডিজ়ম কিংবা ডায়াবিটিস থাকলে, তার থেকেও ত্বকের এই সমস্যা ভোগাতে পারে।
বাবা-মায়েরা কী করবেন?
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সাবান ব্যবহার করতে হবে। উষ্ণ গরম জলে শিশুকে স্নান করাতে হবে রোজ।
শিশুর শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দেখা দিলেই ভাল করে ময়েশ্চারাইজ়ার মাখাতে হবে। শিশুর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজ়ার কেনা জরুরি। সে ক্ষেত্রে প্রতি দিন অন্তত দু’বার করে ভাল করে ময়েশ্চারাইজ়ার মালিশ করতে পারলে ত্বক নরম ও কোমল থাকবে। স্নানের আগে শিশুর গায়ে নারকেল তেল বা অলিভ তেল মালিশ করতে পারলে খুব ভাল হয়। জলে অ্যান্টিসেপটিক মেশাবেন না, ওতে অনেক সময় ভাল ব্যাক্টিরিয়াও নষ্ট হয়ে যায়। এমন ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে, যাতে প্যারাফিন রয়েছে। সপ্তাহে দুই- তিন বার শ্যাম্পু করানোও জরুরি।
শিশুর ত্বকে এগ্জ়িমা যদি বার বার দেখা দেয়, তা হলে ধাতব কোনও গয়না না পরানোই ভাল। ঘামের সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ত্বক লালচে র্যাশে ভরে যায়। এর থেকেও সাবধান থাকতে হবে। নখে ময়লা জমলে নখ কেটে দিন, কান ও নাক পরিষ্কার রাখুন। ধুলোময়লার থেকেও দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুর ত্বকে কোনও রকম স্টেরয়েড ক্রিম লাগানো বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো চলবে না। বরং শিশুকে প্রোটিন, ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। শরীরে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে যায়। এমনকি ত্বকে সংক্রমণজনিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। কাতলা, লটে, বাগদা চিংড়ি, ইলিশ, কই মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ক্যানোলা তেল সর্ষের তেলেরই এক প্রকার পরিশুদ্ধ রূপ। এই তেলে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। পাশাপাশি তিসি ও সয়াবিনের তেলেও ওমেগা ৩ থাকে। আখরোট ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের খুব ভাল উৎস। নিয়ম করে প্রতি দিন একমুঠো (৫ -৬টি) আখরোট খাওয়ালেও খুব উপকার হবে। চিয়া বীজও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। তবে শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না তা আগে জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy