অক্ষয় কুমার। —ফাইল চিত্র।
দিন কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা গোবিন্দার স্ত্রী সুনীতা আহুজা বলেছিলেন, বাড়িতে সবাই তাঁকে ‘লেডি অক্ষয় কুমার’ বলে ডাকেন। কারণ জানতে চাওয়ায় সুনীতা বলেছিলেন, ‘‘কারণ আমি ভোর সাড়ে তিনটেয় উঠি। আর তার পর থেকে প্রতিটা কাজ করি ঘড়ি ধরে।’’
বলিউডে অক্ষয় কুমারের নিয়মনিষ্ঠ বলে খ্যাতি আছে। অক্ষয়ের ঘনিষ্ঠরা তো বটেই, বলিউডের অনেকেই জানেন, অক্ষয়ের সকাল শুরু হয় আকাশ অন্ধকার থাকতে থাকতে। তার পরিবারের ঘুম ভাঙার আগেই তাঁর শরীরচর্চা এবং মেডিটেশেন করা হয়ে যায়। সাক্ষাৎকারে গোবিন্দার স্ত্রী জানিয়েছেন, তিনিও ভোরে উঠে এক ঘণ্টা মেডিটেশন করেন, তার পরে এক ঘণ্টা জোরকদমে হাঁটেন, ফিরে এসে যোগাসন করেন, তার পরে শুরু হয় সংসারের কাজ। অক্ষয়ের সঙ্গে তাঁর সকালে ওঠা এবং শরীরচর্চার অভ্যাস মিলে যাওয়ার জন্যই বাড়ির লোকের কাছ থেকে জুটেছে ওই ‘উপাধি’! তবে একই সঙ্গে সুনীতা জানিয়েছেন, বাড়ির লোক যা-ই বলুন, বছরের পর বছর ওই অভ্যাস ধরে রেখে তিনি ভাল আছেন। যেমনটি অক্ষয়ও বলেছিলেন, নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাপনের জন্য তিনি বড় একটা অসুস্থ হন না। তবে কি ভোরে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ভাল থাকে?
ভোরে উঠলে কী হয়?
ভোরে উঠলে যে ভাল হয়, তা গুরুজনেরা বরাবরই বলে এসেছেন। হিন্দু শাস্ত্রে ভোরের একটি বিশেষ সময়কে ব্রাহ্মমুহূর্তও বলা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রাহ্মমুহূর্ত হল সূর্যোদয়ের আগে রাতের শেষ এক-চতুর্থাংশ সময়, যাকে প্রাচীন কালে পণ্ডিতেরা দিনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত বলেও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে? কাকভোরে ঘুম থেকে উঠলে কি শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পড়ে?
চিকিৎসক যা বলছেন
দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নরেন্দ্র সিংলা। তিনি বলছেন, ‘‘ভোরে ওঠার অনেক উপকারিতা। তবে সেটা নির্ভর করবে যিনি ভোরে উঠছেন তাঁর পারিপার্শ্বিকতা এব পরিস্থিতির উপর।’’
১। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ভোরে উঠলে অবশ্যই দিনটা অনেকটা বেশি দেখা যায়। যে কাজ করবেন, তার মান ভাল হয়, কারণ ভোরে চারপাশের নিস্তব্ধতায় মনঃসংযোগ করতে সুবিধা হয়। মন অনেক পরিষ্কার থাকে। অনেক কেন্দ্রীভূত থাকে। ফলে যাঁরা সৃষ্টিশীল, তাঁদের ভাবনার স্ফুরণ হওয়ার সুযোগ থাকে।
২। পাশাপাশি কোনও জটিল সমস্যার সমাধান কররার প্রয়োজন পড়লে বা ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য কোনও কাজ করলে, যেমন শরীর চর্চা বা মানসিক বিকাশের জন্য চেষ্টা, ধ্যান, যোগাভ্যাস, পড়াশোনা বা লেখা— ভোরবেলায় করলে ফল আরও ভাল হয়।
৩। ভোরে উঠলে দিনটাকে সুন্দর ভাবে সময়ের নিগড়ে বেঁধে ফেলা যায় বলেও মত চিকিৎসক সিংলার।
৪। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ভোরে ওঠার অভ্যাস যদি রপ্ত করা যায় তবে তা মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দিনভর মনকে চাপমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। কারণ ভোরে ওঠার জন্য গোটা দিনটার উপর একটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে আপনার।’’
মনে রাখতে হবে
১। তবে শুধু ভোরে উঠলেই হবে না। ভোরে ওঠার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের কথাও মাথায় রাখতে হবে। ভোরে উঠতে গিয়ে যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তবে লাভ তো হবেই না, উল্টে ক্ষতিই হবে বলছেন চিকিৎসক সিংলা।
২। ভোরে ওঠার ব্যাপারে পুষ্টিবিদ কণিকা মলহোত্র বলছেন, ‘‘হঠাৎ ঘুম থেকে ওঠার সময় অনেকটা না বদলে দেওয়াই ভাল। কারণ তাতে হজমের সমস্যা হতে পারে।’’ পুষ্টিবিদের পরামর্শ, হঠাৎ করে ভোর সাড়ে তিনটে বা চারটেয় উঠতে আরম্ভ করলে চলবে না। শরীর একটা রুটিনে অভ্যস্ত হতে সময় নেয়। তাই ধীরে ধীরে ওঠার সময় পিছিয়ে নিয়ে যান। দরকার হলে এক মাস সময় নিন। তাতে লাভ বই ক্ষতি হবে না।
৩। গোবিন্দার স্ত্রী সুনীতা অবশ্য বলছেন, ‘‘যদি ভোরে ওঠার অভ্যাস করতে চান, এক-আধ দিন যদি না উঠতে পারেন, তাতে বিচলিত হবেন না। নিজের উপর বেশি কঠিন হতে গিয়ে অভ্যাসটাই না বন্ধ হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy