ঋতুবন্ধের সময়ে কী কী খেলে সুস্থ থাকবেন ছবি: ফ্রিপিক।
বয়স পঞ্চাশের আশপাশে পৌঁছলেই সবচেয়ে বেশি যে চিন্তাটি মহিলাদের ভাবায়, তা হল ঋতুবন্ধ। এই কারণে অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগেন। তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
ঋতুচক্র শুরুর যেমন নির্দিষ্ট সময় আছে, তেমনই ঋতুবন্ধও হয় সময় ধরেই। কারও কিছুটা আগে, কারও পরে। তবে কার কবে ঋতুবন্ধ হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে তার খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপনের পদ্ধতির উপর।
এই সময়ে অত্যধিক মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত নেশা, শরীরচর্চার অভাবের কারণে মহিলাদের একটা বড় অংশের ঋতুস্রাব পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চল্লিশের নীচেই। ফলে হরমোনের ওঠানামার কারণে বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহিলারা যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং সুষম ডায়েট মেনে চলেন, তা হলে ঋতুবন্ধ তাড়াতাড়ি হবে না। এখন জেনে নেওয়া যাক, ঋতুবন্ধের সময় এগিয়ে এলে বা ঋতুবন্ধের পরে কী কী খেলে মেয়েরা সুস্থ থাকবেন।
১. সয়াবিন খান বেশি করে। ডায়েটে নিয়ম করে রাখুন সয়া প্রোটিন। সয়া দুধও খুব উপকারী। অনেকেরই গরুর দুধ সহ্য হয় না। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল বিকল্প হতে পারে সায় দুধ। ল্যাক্টোজ মুক্ত এই দুধে থাকে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও বিভিন্ন রকম খনিজ উপাদান। সয়া দুধে থাকে ফাইটোইস্ট্রোজেন, যা মহিলাদের জন্য বিশেষ জরুরি।
২. মাছ খেতে হবে। মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শরীরের জন্য ভাল। হার্ট ভাল রাখে, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। মাছে প্রচুর সিলেনিয়াম রয়েছে, যা দেহে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী হল, তৈলাক্ত মাছ। যেমন ভেটকি, ম্যাকারেল, ইলিশ, পাকা রুই, কাতলা, চিতল, ইত্যাদি মাছে থাকে আয়োডিন, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ফসফরাস সহ নানা খনিজ।
৩. সবুজ সব্জি ও শাকপাতা খেতেই হবে। যে মরসুমে যা শাক পাওয়া যায়, সেই সব নিয়মিত খেতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা যায়। সব্জির পাশাপাশি তাই নিয়মিত কোনও না কোনও মরসুমি শাক খেতে বলা হয়। শুধু রোগ প্রতিরোধ নয়, ত্বক থেকে চুল— সবই ভাল রাখে শাকপাতা।
৪. বেরি জাতীয় ফলও মহিলাদের জন্য খুব ভাল। জামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে ভাল। এ ছাড়া স্ট্রবেরিও খেতে পারেন। চেরিও পাওয়া যাবে সহজেই।
৫. বিভিন্ন রকম বাদাম খেতে হবে নিয়ম করে। সারা দিনে তিনটি ভারী খাবারের মাঝেও টুকটাক মুখ চালানোর জন্য বাদাম খুব উপকারী। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তাবাদাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন থাকে বাদামে। ঋতুবন্ধের পরে মেয়েদের ক্লান্তি ভাব বাড়ে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই এই সময়টাতে বাদাম খাওয়া খুবই ভাল।
৬. দানাশস্য রাখতে পারেন ডায়েটে। ভাত বা রুটি ভাল না লাগলে ওট্স, ডালিয়া, কিনোয়া খেতে পারেন। হালকা করে ডালিয়ার খিচুড়ি, মরসুমি সব্জি দিয়ে খেলে শরীরের পুষ্টি হবেও, পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, প্রোটিনের চাহিদাও মিটবে। আটা বা ময়দার রুটির বদলে খেতে পারেন জোয়ার, বাজরা বা রাগির রুটি। রাগিতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, রাগিতে থাকা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খনিজ লিভারে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও ঠিক থাকে।
৭. চল্লিশের পর থেকে মহিলাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমতে থাকে। এই সময়ে দাঁত, হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। হাঁটুর ব্যথা, পিঠ ও কোমরের ব্যথা জাঁকিয়ে বসে। অস্টিয়োপোরেসিসের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই রোজের ডায়েটে ক্যালশিয়াম রাখতেই হবে। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, দই, চিজ্ খেতে পারেন। দুধ খেতে সমস্যা হলে অনায়াসেই টোফু খাওয়া যায়। তা ছাড়া চিয়া বীজেও প্রচুর ক্যালশিয়াম থাকে। ছোলা ও বিভিন্ন ধরনের ডালও ক্যালসিয়ামের খুব ভাল উৎস।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। সকলের শরীর সমান নয়। খাওয়াতেও অনেক বিধিনিষেধ থাকে। তাই ঋতুবন্ধের সময় এগিয়ে এলে বা ঋতুবন্ধের পরে কী কী খাওয়া উচিত আর কী কী নয়, তা পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy