জ্বালাপোড়া রোদ, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, প্যাচপেচে ঘাম, সব মিলিয়ে গ্রীষ্মের অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় স্বস্তি পায় না ত্বকও। নির্দিষ্ট এই ঋতুতে মানুষের ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেটি কতখানি বেশি? কী কী একেবারে বাদ দিতে হবে? কী কী ব্যবহার করতেই হবে? এমন নানাবিধ প্রশ্ন জাগে এই সময়ে। আর সঠিক উত্তর না পেয়ে অনেকে ভুল করে বসেন। জেনে নিন, সেই ভুলগুলি কী। রইল শুধরে নেওয়ার উপায়ও।
সানস্ক্রিন এড়িয়ে যাওয়া
গ্রীষ্মকালে রাস্তায় বেরোলে সানস্ক্রিন মেখে নেওয়া আবশ্যক। কিন্তু অনেকের কাছেই এই ত্বকচর্চা বাড়তি বলে মনে হয়। কিন্তু এই ঋতুতে অতিবেগনি রশ্মি বেশি শক্তিশালী এবং ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। ত্বকে অকালবার্ধক্য নিয়ে আসে। রোদে পুড়ে যায় ত্বক। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ত্বকের ক্যানসারের মতো ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। অন্তত ৩০ এসপিএফ-এর সানস্ক্রিন মাখতেই হবে। শরীরের যে অংশগুলি ঢাকা থাকে না, সেখানে দু’ঘণ্টা অন্তর মেখে নেবেন।
অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েটিং
ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ অর্থাৎ এক্সফোলিয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এক্সফোলিয়েশন করলে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল বেরিয়ে যেতে পারে, যার ফলে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে, জ্বালা অনুভব করতে পারেন। এই সময়ে ত্বক উত্তাপ, ঘাম এবং দূষণের সঙ্গে দিনরাত লড়াই করে। অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশন এই সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে উল্টে ত্বক দুর্বল হয়ে যায়। ল্যাক্টিক অ্যাসিড বা এনজ়াইমের মতো হালকা অ্যাসিডযুক্ত এক্সফোলিয়েটর বেছে নিন।

অতিরিক্ত পরিমাণে এক্সফোলিয়েশন করলে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল বেরিয়ে যেতে পারে, যার ফলে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
হাইড্রেশনের দিকে নজর না দেওয়া
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সময়ে শরীর দ্রুত আর্দ্রতা হারাতে থাকে। ত্বকেও শুষ্কতা বেড়ে যায় এর ফলে। হাইড্রেশন যথাযথ ভাবে না করলে ত্বক ফ্যাকাসে দেখায়। গরমে যেমন পরিমাণ মতো জল পান করা আবশ্যক, তেমনই ত্বকেরও জলের প্রয়োজন পড়ে। ত্বকের ধরনের সঙ্গে মানানসই হালকা, হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য হায়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন এবং অ্যালোভেরার মতো উপাদানগুলি বেছে নিন।
চোখের চারপাশের ত্বককে অবহেলা করা
চোখের চারপাশের ত্বক খুবই নরম হয়। অতিবেগনি রশ্মির জন্য সেখানকার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবহেলা করলে কালো দাগ, ফোলাভাব চলে আসে। ভাল আই ক্রিম কিনে রাতে মেখে ঘুমোনো প্রয়োজন।
ত্বকচর্চার জন্য ভুল প্রসাধনী ব্যবহার করা
দোকান থেকে অথবা অনলাইনের বিজ্ঞাপন দেখে যা খুশি কিনে নিয়ে ত্বকচর্চা করলে তাতে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। নিজের ত্বকের ধরন বুঝে সঠিক জিনিস বেছে নিতে হবে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে খুব ভারী বা ত্বকের জন্য অনুপযুক্ত পণ্য ব্যবহার করলে ব্রণ, জ্বালা এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি নিজে বেছে নিতে না পারেন, তা হলে চর্মরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জিনিস কেনা উচিত।

গ্রীষ্মকালীন ত্বকের যত্নের সাধারণ ভুলগুলি এড়িয়ে চললে স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারেন। ছবি সংগৃহীত।
সঠিক ভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে ভুলে যাওয়া
ত্বক পরিষ্কার করা সবচেয়ে জরুরি ধাপ। গরমে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ত্বক পরিষ্কারের কাজটি। ঘাম, সানস্ক্রিন এবং দূষণ ত্বকের ছিদ্রগুলি আটকে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে পরিষ্কার না করলে ব্রণ হতে পারে। হালকা ক্লিনজ়ার ব্যবহার করতে হবে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল বার না করেই ময়লা দূর করতে পারে।
ঠোঁট উপেক্ষা করা
ত্বকচর্চার রুটিন থেকে হামেশাই বাদ পড়ে যায় ঠোঁট। কিন্তু সেটিরও সুরক্ষা এবং যত্নের প্রয়োজন। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফাটতে থাকে। এসপিএফ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করুন। ঠোঁটকে আর্দ্র এবং সুরক্ষিত রাখতে তা সারা দিনে বার বার মাখতে হবে।
গ্রীষ্মকালীন ত্বকের যত্নের সাধারণ ভুলগুলি এড়িয়ে চললে স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারেন। এই রুটিন এক দিন অথবা দু’দিন মেনে থেমে গেলে চলবে না। নিয়মিত চালিয়ে গেলে তবেই ফল পাবেন।