শরীরে জমা অতিরিক্ত ‘টক্সিন’ বা বর্জ্য পদার্থ বার করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি ‘ডিটক্সিফিকেশন’ নামে পরিচিত। সুস্থ থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে শরীরকে বিষমুক্ত রাখা জরুরি। শুধু কি তা-ই? দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বকের জেল্লা হারানো কিংবা চুলের বাড়বৃদ্ধি রুখে যাওয়া— সবের নেপথ্যেই ‘টক্সিন’-এর ভূমিকা রয়েছে।
শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দেওয়ার এই কাজে সহায়তা করে তরল পানীয়। তাই পুষ্টিবিদেরা নানা ধরনের ‘ডিটক্স’ পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যোগ প্রশিক্ষকেরা বলছেন, এই ধরনের পানীয়ে চুমুক দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ময়ূরাসন অভ্যাস করতে পারলে শরীরের নিজস্ব ‘ডিটক্স মেকানিজ়ম’ আরও জোরদার হয়ে ওঠে।
আমাদের দেশের জাতীয় পাখি ময়ূর। সেখান থেকেই এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজিতে এই ভঙ্গিটি ‘পিকক পোজ়’ নামেও পরিচিত। বোঝাই যাচ্ছে, এই আসন অভ্যাস করার সময়ে দেহের ভঙ্গি অনেকটা ময়ূরের মতো হবে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে করবেন?
· প্রথমে পদ্মাসন বা সুখাসনের ভঙ্গিতে হাঁটু মুড়ে ম্যাটের উপর বসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
· দুই হাত রাখুন মাটিতে। সামনের দিকে ঝুঁকে, বুকের কাছাকাছি এমন ভাবে দু’টি হাত রাখবেন, যেন দেহের ভার বইতে অসুবিধা না হয়।
· এ বার হাত ভাঁজ করে ঠিক নাভির দু’পাশে রাখুন। যেখানে কোমরের হাড় রয়েছে, সেই খাঁজটিতে দু’টি কনুইয়ের ঠেকনা দিন।
· দেহের উপরিভাগ সামনের দিকে টেনে আনুন। শরীরের ব্যালান্স ঠিক রাখতে না পারলে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে রাখুন।
· এ বার পা দু’টি ধীরে ধীরে পিছনের দিকে ছড়িয়ে দিন। চোখ রাখুন মাটির দিকে। কোমর এবং নিতম্ব যেন টান টান থাকে।
· ধীরে ধীরে পা, মাথা এবং গোটা শরীরটাই মাটি থেকে শূন্যে তুলে ফেলতে হবে। শুধু দু’টি হাতের উপর গোটা শরীরের ভার থাকবে।
· পেখমধারী মূয়র গ্রীবা টান টান করে মাটির দিকে চেয়ে থাকলে যেমনটা দেখায়, শরীরের ভঙ্গিটিও ঠিক তেমনটাই হবে। এই অবস্থান ধরে রাখতে হবে ৩০ সেকেন্ড। শ্বাস-প্রশ্বাস একেবারে স্বাভাবিক থাকবে।
· প্রথমেই খুব বেশি ক্ষণ এই ভাবে থাকা সম্ভব নয়। তাই আবার ধীরে ধীরে গোটা শরীরটিকে মাটির সমান্তরালে শুইয়ে দিন। এই আসনটি অভ্যাস করতে গেলে ধৈর্য এবং একাগ্রতার প্রয়োজন। প্রথম বারের চেষ্টায় বার দুয়েক করতে পারলেই যথেষ্ট।
আরও পড়ুন:
কেন করবেন?
দেহের গঠনভঙ্গি ঠিক করতে সাহায্য করে এই আসন। ময়ূরাসন অভ্যাস করলে প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়। হজমের গোলমাল কমে এবং পেটের পেশি মজবুত হয়। মানসিক চাপ, অবসাদ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই আসন অভ্যাস করলে বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়।
আরও পড়ুন:
সতর্কতা:
যাঁরা শরীরচর্চার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন, তাঁরা এই আসন অভ্যাস করতে যাবেন না। এ ছাড়া যাঁদের ‘কার্পেল টানেল’র মতো রোগ বা কব্জিতে কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও এই আসন করা বারণ। উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা থাকলে ময়ূরাসন করবেন না। চোখ, নাক কিংবা কানের সমস্যা থাকলেও বিরত থাকবেন। ঋতুস্রাব চলাকালীন কিংবা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ময়ূরাসন অভ্যাস করা নিষিদ্ধ।