দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাটাই কারও কাজ। আবার দিনের বেশির ভাগ সময়টা অনেকেই হেঁশেলে কাটান, দাঁড়িয়ে রান্না করে। এমনিতেই গোটা শরীরের ভার বইতে হয় পদযুগলকে। তার উপর এই ভাবে অতিরিক্ত চাপ পড়লে পায়ের শিরা-উপশিরা ফুলে ওঠে। তার ভিতর যে রক্তজালিকা থাকে, সেগুলি চামড়ার উপর ভেসে উঠতে শুরু করে। পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা করে। হাঁটতে-চলতেও অসুবিধা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা ‘ভেরিকোজ় ভেন’ নামে পরিচিত।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি। যোগ প্রশিক্ষকেরা অবশ্য বলছেন, ভেরিকোজ় ভেন্স বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছোনোর আগেই তাকে নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলা সম্ভব। তার জন্য নিয়মিত অভ্যাস করতে হবে তুলাদণ্ডাসন।
সংস্কৃতে ‘তুলাদণ্ড’ শব্দটির অর্থ হল দাঁড়িপাল্লা, যা আসলে ওজন মাপার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই আসন অভ্যাস করলে দেহের ভঙ্গি হয় ওই তুলাদণ্ডের মতোই। বিদ্যুতচালিত আধুনিক ওজনমাপক যন্ত্র নয়, পুরনো দাঁড়িপাল্লা কেমন দেখতে হয়, তা সকলেই জানেন। ইংরেজি ‘টি’ আকৃতির একটি দণ্ডের দু’পাশে দু’টি পাল্লা ঝোলানো থাকে। যার এক দিকে চাপানো হয় ওজন এবং অন্য দিকে সেই একই মাপের জিনিস। দু’পাশের ওজন একেবারে সমান-সমান করাই এই যন্ত্রটির কাজ। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে শরীরের ব্যালান্স বা ভারসাম্য রক্ষা করার কাজে এই আসন কতটা কার্যকরী।
কী ভাবে করবেন?
· প্রথমে ম্যাটের উপর সোজা হয়ে দাঁড়ান। এ বার শ্বাস নিতে নিতে দু’টি হাত মাথার উপর তুলুন। হাতের পাতা থাকুক প্রণামের ভঙ্গিতে।
· ঘাড়, পিঠ, কোমর যতটা সম্ভব টান টান রেখে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। তার সঙ্গে ডান অথবা বাঁ পা মাটি থেকে তুলে নিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
· অন্য পা-টি থাকবে মাটিতে। ওই একটি পায়ে গোটা শরীরের ভার বইতে হবে।
· শরীর সামনের দিকে কতটা ঝোঁকাবেন এবং পা পিছনের দিকে কতটা তুলবেন, সেটা বুঝতে পারাই এই আসনের কাজ।
· হাত, ঘাড়, পিঠ, কোমর এবং পা যেন একটি সরলরেখায় থাকে। অন্য পা মাটিতে দণ্ডের মতো রাখবেন। দেখে যেন তুলাদণ্ডের ‘টি’ আকৃতি স্পষ্ট হয়।
· এই অবস্থানে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। ব্যালান্স রাখতে পারলে এক মিনিট। তার পর আবার প্রথম ভঙ্গিতে ফিরে যান। একই ভাবে অন্য পায়ে অভ্যাস করুন এই আসন।
কেন করবেন?
এই আসন অভ্যাস করলে সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। পেট ও পায়ের পেশি মজবুত হয়। দেহের ব্যালান্স, অর্থাৎ ভারসাম্য ধরে রাখা সহজ হয়। একঠায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে মেরুদণ্ডের উপরেও চাপ পড়ে। তুলাদণ্ডাসন অভ্যাস করলে এই সমস্যাও বশে থাকে।
সতর্কতা:
শুরুতে এই আসন করা বেশ ঝক্কির। ব্যালান্স রাখতে না পারলে কোনও লাভ হবে না। উল্টে পড়ে গিয়ে শরীরের কোথাও আঘাত লাগতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই আসন অভ্যাস করা একেবারেই নিষিদ্ধ।