Advertisement
E-Paper

পরিচালক-ফেডারেশন দ্বন্দ্বে রায় হাইকোর্টের, যাঁরা কাজ হারিয়েছেন তাঁরা কি কাজ পাবেন?

আদালতের রায় পরিচালকদের যতই স্বস্তি দিক, তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়। ফেডারেশন কি এত সহজে সমস্ত মেনে নেবে?

হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তিতে পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য, অয়ন সেনগুপ্ত?

হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তিতে পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য, অয়ন সেনগুপ্ত? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫২
Share
Save

বৃহস্পতিবার স্মরণীয় হয়ে থাকল টলিউডের কাছে। মার্চে ফেডারেশনের অকারণ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকোর্টের কাছে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য। সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিদুলাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তাঁর কোনও কাজে ফেডারেশন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয় ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার। এ দিনও বিচারপতি পরিচালকদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, ফেডারেশন কোনও ভাবে পরিচালকদের কাজের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। একই ভাবে, ইউনিক কার্ড না থাকলেও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারবেন পরিচালকেরা। পাশাপাশি, মেডিক্লেম কার্ড আটকে রাখার বিষয়টি নিয়ে কোর্ট ভর্ৎসনা করেছে ফেডারেশনকে। পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, এই কার্ড রাজ্য সরকার চালু করেছে। তাই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা যেন কার্ড সংগ্রহ করেন। ফেডারেশনের এখানে কোনও প্রয়োজন নেই। বিচারপতির এই নির্দেশ ছোট-বড় উভয় পর্দার জন্যই।

পরবর্তী শুনানি ১৯ মে। তার আগে আদালতের নির্দেশে, তথ্য ও সম্প্রচার দফতর পিটিশন দাখিলকারী সমস্ত পরিচালক, ফেডারেশন এবং এই মামলার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবে। প্রত্যেকের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। তার উপর ভিত্তি করে একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব, যা পরবর্তী শুনানিতে জমা দিতে হবে। সেই খসড়ার উপর হাইকোর্ট পরবর্তী শুনানির রায় দেবে, এ কথা আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী।

এই রায়ে কতটা স্বস্তিতে টলিপাড়ার ছোট এবং বড় পর্দার পরিচালকেরা?

এ প্রসঙ্গে বিদুলা জানিয়েছেন, আখেরে পরিচালকদের থেকেও বেশি লাভবান হবেন টেকনিশিয়ানেরা। কাজ বাড়াতে তাঁদের উপার্জন আরও বাড়বে। কিছু দিন আগেই কাজের অভাবে রাস্তায় খাবারের দোকান দিতে বাধ্য হয়েছেন ছোট পর্দার পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত। এই রায় কি তাঁকে হারানো কাজ ফিরে পাইয়ে দেবে? এই প্রশ্নের জবাবে অয়ন বলেছেন, “কাজ করতে চেয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে হয় পরিচালকদের। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?”

ফেডারেশনের একুশে আইনের জেরে নাভিশ্বাস টলিউডের প্রযোজকদের। পরিচালক আর ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। গত জুলাইয়ে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে সেই টানাপড়েন প্রকাশ্যে চলে আসে। বারে বারে উভয় পক্ষ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। বরাবর পরিচালকদের প্রধান অভিযোগ, ফেডারেশনের নীতি-নিয়মের জেরে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। ফেডারেশনের অন্যায় আধিপত্যে অনেক প্রযোজক ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন। অন্য রাজ্য থেকেও কাজ আসছে না। গত এক বছর ধরে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কাছে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার অনুরোধ জানায়।

খবর, অজানা কারণে সংগঠনের পরিচালক সদস্যদের ডাকে সাড়া দেননি ফেডারেশন সভাপতি। উপরন্তু তাঁর দাবি ছিল, পরিচালক-প্রযোজকদের ৬০ শতাংশ অভিনেত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। ক্ষিপ্ত প্রযোজক-পরিচালকেরা এর পরেই স্বরূপের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। নতুন বছরের শুরুতে এই সংঘাত আরও জোরালো হয়। নানা ওজর তুলে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়ের কাজ বন্ধ করে দেয় ফেডারেশন। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। এখানেই শেষ নয়, রাজ্য সরকার থেকে দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পরিচালকেরা পাননি বলে আনন্দবাজার ডট কমের কাছে অভিযোগ জানান পরমব্রত, অনির্বাণ, ইন্দ্রনীল।

উপায় না দেখে কৌশিক, রাহুল-সহ একাধিক পরিচালক এর পরেই পরিচালকদের আর একটি সংগঠনে যোগ দেন। কারণ, ডিএআইআই-এর সদস্যপদের কার্ডকে মান্যতা দিতে নারাজ ফেডারেশন।

খবর, এর পরেই স্বাধীন পরিচালক বিদুলা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলা দায়ের করেন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। সেই সময়েও হাইকোর্ট তাঁর পক্ষেই ছিল। গত মাসে মামলা রাজ্যের উচ্চ আদালতে ওঠার পর বিচারপতি বিদুলাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ৩ এপ্রিল। আদালতের এই পদক্ষেপে আশার সঞ্চার হয় বাকি পরিচালকদের মনেও। প্রকাশ্যে তাঁকে সমর্থন জানান পরমব্রত, অনির্বাণ, ইন্দ্রনীল। পরে যোগ দেন আরও পরিচালক। পরিচালক সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, অয়ন সেনগুপ্ত, দেবাশিস চক্রবর্তী-সহ মোট ১৫ জন পরিচালক ফেডারেশনের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন জমা দেন। এঁদের পিটিশনেরও শুনানি হয় এ দিন।

মামলার রায় শুনে বিদুলা কি মেঘমুলুকে ভাসছেন? প্রশ্ন শুনে ফোনের ও পারে চওড়া হাসি তাঁর। পরিচালক বললেন, “কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি।” যোগ করেছেন, “এতে যে একা আমরা, পরিচালকেরা লাভবান হলাম, তা নয়। আমার মতে, আমাদের থেকেও বেশি লাভবান হলেন টেকনিশিয়ান বন্ধুরা, যাঁদের সঙ্গে পরিচালকের সখ্য আজীবনের। কেউ কাউকে ছাড়া এক পা চলতে পারি না।” বিদুলার যুক্তি, তিনি পরিচালকদের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানদের হয়েও বলেছেন। পরিচালকের দাবি, “যত কাজ হবে তত টেকনিশিয়ানদের লাভ। ওঁদের উপার্জন বাড়বে। মনে রাখতে হবে, পরিচালকদের থেকেও ওঁরা সংখ্যায় বেশি। প্রত্যেকের সংসার চালানোর জন্য তাই আরও বেশি কাজ চাই।” পাশাপাশি তাঁর মত, তিনি এই লড়াইয়ের শক্তি পেয়েছেন তাঁর অগ্রজ পরিচালকদের আগে করা পদক্ষেপ দেখে। এবং তিনি যে সঠিক তার প্রমাণ, বাকিরা তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন।

৩ এপ্রিলের শুনানির রায় প্রকাশের পর আনন্দবাজার ডট কমের মাধ্যমে অয়ন আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিদুলাকে। তাঁর কথায়, “নারীশক্তিকে কুর্নিশ। বিদুলা এ ভাবে না এগোলে কিছুতেই অচলাবস্থা কাটত না। তিনি করে দেখিয়েছেন। আমরা ওঁর কাছে ঋণী।” নিজের দোকানের জন্য বাজার করতে করতেই ফোনে জবাব দিচ্ছিলেন অয়ন। নিজের এবং বাকি পরিচালকদের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অয়নের আক্ষেপ, “স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আমরা। বাক্‌স্বাধীনতার পাশাপাশি উপার্জনের স্বাধীনতাও আছে আমাদের। তার পরেও তার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে! এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?”

অয়ন কি আবার পরিচালনায় ফেরার কথা ভাববেন? “অবশ্যই”, আত্মবিশ্বাস ধ্বনিত হল তাঁর কণ্ঠে। ইতিমধ্যেই তিনি দোকান চালানোর পাশাপাশি শ্রীজিৎ রায়ের নতুন ধারাবাহিক ‘তুই আমার হিরো’তে অভিনয় করছেন। একই কথা বিদুলারও। হাতের কাজ থামিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ফের পুরোদমে কাজে ফিরবেন। কারণ, এখনই অন্য কোনও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন তাঁর আইনজীবী দেখতে পাচ্ছেন না। পরিচালকের আইনজীবী জানিয়েছেন, এ বার ফেডারেশনের পদক্ষেপের পালা। বাকিদের রিট পিটিশন আগামী শুনানিতে জয়েন্ট পিটিশন হিসাবে আদালতে দাখিল হবে। এতে প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে।

আদালতের রায় পরিচালকদের স্বস্তি দিলেও প্রশ্ন থেকে যায়, ফেডারেশন কি এত সহজে সমস্ত কিছু মেনে নেবে?

প্রশ্ন করা হয়েছিল বিদুলা, অয়নকে। উভয়েই বলেছেন, “বিষয়টি হয়তো এত সহজ নয়। আগামী দিনে হয়তো পরিচালকদের উপরে নতুন কোনও চাপ, বাধা বা সমস্যা সৃষ্টি হতেও পারে। পাশাপাশি এটাও ঠিক, বিচারব্যবস্থা কিন্তু পরিচালকদের এগিয়ে যেতে অনেকটাই সহযোগিতা করেছে।” বিদুলার কথায়, “সরকারি পক্ষের আইনজীবী নিজেই জানিয়েছেন, ইউনিক কার্ড না থাকলে কাজ করা যাবে না— এই নিয়ম তিন বছর আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরেও ফেডারেশন সেই নিয়মকে তুরুপের তাস হিসেবে বার বার ব্যবহার করেছে। যার বিরোধিতা করেছে আদালত।” একই সঙ্গে মেডিক্লেম কার্ডের জন্য ফেডারেশনের উপর কেন নির্ভর করতে হবে পরিচালকদের, সেই প্রশ্নও বিচারপতি করেছেন। তাঁর নির্দেশ, পরিচালকেরা যেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মারফত কার্ড সংগ্রহ করে নেন।

Bidula Bhattacharjee Ayan Sengupta

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}