প্রতীকী চিত্র।
স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ বহুমুখী। সময়ের সঙ্গে সংস্কৃতির দাবি মেনে বিনোদন জগতে পরিবর্তন হয়েছে। সিনেমা হলের পাশাপাশি সিনেমা এখন মুঠোফোনে বন্দি। বাংলার চলচ্চিত্র জগৎ স্বাধীন মনোভাবেই বিশ্বাসী। কিন্তু টলিপাড়া কি সব দিক থেকে স্বাধীন হতে পেরেছে? ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে চার পরিচালকের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
গত সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ় ‘আবার প্রলয়’। রাজ বললেন, ‘‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ভীষণ ভাবে স্বাধীন। বড় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে এসে সবাই এখানে কাজ করেন, তেমন নয়। বরং হাতেকলমে কাজ শিখে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হয়।’’ সিরিজ়ের সাফল্যে রাজ উচ্ছ্বসিত হলেও ‘স্বাধীনতা’ প্রসঙ্গে তাঁর মনের কোণে একটু হলেও ক্ষোভ জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে বাংলা বাণিজ্যিক ছবিকে সকলেই যেন একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখতে চান। এখানেই আমার আপত্তি।’’ কথা প্রসঙ্গেই ব্যাখ্যা দিলেন রাজ। পরিচালক বললেন, ‘‘আজকে ‘কেজিএফ’ বা ‘আরআরআর’ দেখে কেউ প্রশ্ন করে না। কিন্তু বাংলায় অ্যাকশন ছবি তৈরি হলে দক্ষিণের সঙ্গে তুলনা টানা হয়। আমার মনে হয় দর্শক, এবং তাঁর সঙ্গে সমালোচকদের মন আরও উন্মুক্ত হওয়া উচিত।’’
সম্প্রতি, ‘অর্ধাঙ্গিনী’ এবং ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি চূর্ণী এক জন দক্ষ পরিচালকও। ‘নির্বাসিত’-র পরিচালকের মতে, যে কোনও শিল্পের ক্ষেত্রে বাক্স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। চূর্ণী বললেন, ‘‘এই অস্থির সময়ে সকলেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাইছেন। সেই মত অন্য কারও পছন্দ না-ও হতে পারে। তবে বিশ্বের সামনে শিল্পীর নিজের মন এবং মতামতকে মেলে ধরার সেই স্বাধীনতাটুকু অবশ্যই কাম্য।’’ শিল্প এবং শিল্পীর উপর বিভিন্ন সময়ে যে আঘাত এসেছে, তা মেনে নিচ্ছেন চূর্ণী। তাঁর কথায়, ‘‘মতপ্রকাশ করতে না পারলে সভ্যতার বড় সঙ্কট। শিল্পীর আয়নায় সমাজের একাংশ যখন মুখ দেখতে ভয় পায়, তখন নানা ছদ্মবেশে পরাধীনতার জন্ম হয়।’’
খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর ছবির মাধ্যমে দর্শকের কাছে পরিচালক হিসাবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন অভিজিৎ সেন। টলিপাড়া যে সব দিক থেকে ‘পরাধীন’, তা মানতে নারাজ অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা সিনেমার জগতে অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। আমি সব সময় সেটা উপলব্ধি করেছি। কারণ এক জন নতুন পরিচালক হিসাবে সকলের থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি।’’ কথা প্রসঙ্গেই হেসে বললেন, ‘‘নিজেরা মৌলিক গল্প লিখেছি। নিজেদের পছন্দ মতো ‘টনিক’ খেয়েছি। ‘প্রজাপতি’ উড়িয়েছি।’’ তবে স্বাধীনতা দিবসে বাংলা ছবির প্রদর্শনের উপর জোর দিতে চাইলেন পরিচালক। অভিজিৎ বললেন, ‘‘বাংলা ছবিকে বাংলার সিনেমা হলে আরও বেশি দেখানোর স্বাধীনতা প্রয়োজন। হিন্দি বা অন্য ভাষার ছবির তুলনায় ভাল বাংলা ছবিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’
টলিপাড়ার বর্ষীয়ান পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী এখনও ছবি নিয়ে মেতে রয়েছেন। সম্প্রতি পা রেখেছেন ওটিটিতে। বললেন, ‘‘বাংলা ছবির তো প্রতিযোগী এখন হিন্দি ছবি। আমি কারও বিরোধিতা করছি। কিন্তু প্রদর্শনে বাংলা ছবির স্বাধীনতা কমে গিয়েছে।’’ ‘পাঠান’ মুক্তির সময় একাধিক বাংলা ছবি কোণঠাসা হওয়ার অভিযোগ ওঠে। হরনাথ বললেন, ‘‘বাংলায় এসে রাজত্ব করবে, অথচ বাংলা ছবিকে জায়গা দেওয়া হবে না, এখানে আমার মনে হয় স্বাধীনতা কমে গিয়েছে। সকলে একজোট হয়ে প্রতিবাদ না করলে এই সমস্যা মিটবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy