Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

টলি-সিন্ডিকেট ভাঙতে আজ চুক্তির উদ্যোগ

প্রযোজকদের সংগঠন ইম্পা-র সভাপতি কৃষ্ণ দাগা জানান, কলাকুশলীদের ফেডারেশনের সঙ্গে আজ, মঙ্গলবার তাঁদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।

নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৪৮
Share: Save:

ঘটনাটি জুলাইয়ের। ঘটেছিল শাসক দলের সাংসদ তথা টালিগঞ্জের সুপারস্টার দেবের ছবির শুটিংয়ে।

উজবেকিস্তানে আউটডোর চলাকালীন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় একটি ক্যামেরাও শুটিংয়ে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সাধেন ইউনিটের প্রোডাকশন কর্মীরা। ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম, দ্বিতীয় ক্যামেরা চালাতে হলেও তিন জন কলাকুশলী লাগবে। এবং স্থানীয় লোকেশন থেকে এক জনও না-নিয়ে কলাকুশলীর বন্দোবস্ত করতে হবে কলকাতা থেকেই। অনিকেতের কথায়, ‘‘বাধ্য হয়ে আপস করেই একসঙ্গে দু’টি ক্যামেরায় কাজ করার পরিকল্পনা বাতিল করি আমরা।’’

এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়! টলিউডে সিনেমার সব শুটিংয়েই কলাকুশলী সংগঠন কার্যত ‘সিন্ডিকেট’-এর ভঙ্গিতে ছড়ি ঘোরায় বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, কলকাতায় বা বাইরে, দেশে বা বিদেশে কলাকুশলীর সংখ্যা থেকে শুরু করে কী কাজে কোন কলাকুশলীকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই বিষয়ে তাঁদের সংগঠন ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-ই শেষ কথা বলে।

আরও পড়ুন: কোন বলি নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে সম্মানিত করিনা?

টিভি ধারাবাহিকের সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন! ধারাবাহিকের শুটিংয়ে রোজকার সমস্যা মেটাতে বর্ষীয়ান শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্বে সব পক্ষকে নিয়ে যৌথ কনসিলিয়েশন কমিটি গড়ে দেন তিনি। এখন প্রশ্ন, সিনেমার শুটিংয়ে প্রযোজক ও কলাকুশলীদের কাজে পদে পদে হরেক সমস্যার কী হবে? সেগুলো মেটাবে কে? সব সমস্যা না-মিটলেও কিছু পদক্ষেপের ব্যাপারে কলাকুশলীদের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে বলে ইম্পা বা পূর্ব ভারতের মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি করা হচ্ছে। কয়েকটি বিষয়ে ফেডারেশন নমনীয় হচ্ছে বলে খবর। প্রযোজকদের সংগঠন ইম্পা-র সভাপতি কৃষ্ণ দাগা জানান, কলাকুশলীদের ফেডারেশনের সঙ্গে আজ, মঙ্গলবার তাঁদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।

গত জুলাইয়েই ৪০ শতাংশ টাকা বাড়ানো হয়েছে কলাকুশলীদের। কিন্তু প্রযোজকদের বিভিন্ন দাবি মানতে তাঁদের রাজি করানো যাচ্ছিল না। ফলে প্রযোজক ও ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরও থমকে ছিল দীর্ঘদিন। টালিগঞ্জের এক তরুণ প্রযোজকের দাবি, কলাকুশলীরা এখনও বিভিন্ন বিষয়ে অনড়। যুগোপযোগী প্রক্রিয়ায় সিনেমার শুটিং করা যাচ্ছে না। তবে কয়েকটি বিষয় বোঝানো গিয়েছে। প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসানের কথায়, ‘‘আগে বিদেশে ১৯ জন কলাকুশলীকে নিয়ে যেতেই হত। সংখ্যাটা শুনছি ১৬ হবে।’’ তবে এখনও উটকো
নানা খরচ বইতে হচ্ছে প্রযোজকদের। যেমন, আউটডোর শুটিংয়ে এখনও দরকার না-থাকলেও ট্রলির লোক নিতে হয়, যাঁর কোনও কাজই থাকে না। মেকআপ ম্যানের সংখ্যাও অহেতুক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য আউটডোরে ক্যাটওয়াকের মতো উটকো ভার (যা স্টুডিয়োর সেটে কাজে লাগতেও পারে) বইতে হচ্ছে না। ‘‘কলাকুশলী ও প্রযোজকদের চূড়ান্ত চুক্তির কাগজটা এখনও দেখিনি। তবে খসড়ায় দেখেছি, সব পক্ষের স্বার্থ অনেকটাই রক্ষা করা হচ্ছে,’’ বললেন নায়ক প্রসেনজিৎ।

গত বছর কলাকুশলীর সংখ্যা নিয়ে বিবাদের জেরে বিলেতে শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক প্রযোজক ফেডারেশনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান। পরে অবশ্য নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নেন তাঁরা। ফেডারেশনের মাথা তথা তৃণমূল নেতা স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিনেমা নিয়ে সমস্যা নেই। কলাকুশলী নিয়ে কার কী আপত্তি, জানি না। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের মতো পরিস্থিতি হয়নি এখনও। নিজেদের মধ্যে আলোচনাতেই সব মিটে যাবে।’’ ইম্পা-র প্রযোজক শাখার সহ-সভাপতি ঋতব্রত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘প্রযোজক ও কলাকুশলীদের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা শুরু হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE