বিচারের দাবিতে ছোট পর্দার শিল্পীরা। ছবি: সম্পিতা দাস।
টেলিভিশন খুললেই যে সমস্ত তারকাদের দেখা যায় রোজ, তাঁরাই নেমে এসেছেন পথে। যাঁদের গলায় শোনা যায় মন ভোলানো সংলাপ, তাঁরাই উঁচু গলায় তুলছেন স্লোগান, ‘বিচার চাই’। রবিবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জের পথের ধারে দাঁড়িয়ে, সে দিকেই তাকিয়েছিলেন বছর পঁচিশের পায়েল বর। এক হাতে তাঁর মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বলছে, প্রতিবাদী মিছিলের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে সেই ছোট্ট আলো। অন্য হাতে আরও ছোট্ট একটি প্রাণ দেখছে নতুন আলোর নিশান। মাত্র ছ’মাসের মেয়েকে নিয়েই পথে এসে দাঁড়িয়েছেন পায়েল। তিনিও বলেন, “বিচার চাই। গত ১৫ দিন শুধু এই একটা কথাই শুনেছি। এ বার বিচারটা পেতে চাই। আমার মেয়েকে নিয়ে তাই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি।”
আরজি কর-কাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতাকে। টানা ১৫ দিন ধরে শহরের রাস্তা মিছিলে মিছিলে ছয়লাপ। ‘মিছিল নগরী’ পেরিয়ে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে জেলায় জেলায়, রাজ্যের বাইরে, এমনকি বিদেশের সেই সমস্ত জায়গায় যেখানে রয়েছে বাঙালির বাস।
এমন পরিস্থিতিতেই রবিবার ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়ো থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল ছোটপর্দার শিল্পী ও কলাকুশলীদের তরফ থেকে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ একে একে এসে জড়ো হতে শুরু করেন তাঁরা। কারও হাতে পোস্টার, কারও গলা থেকে ঝুলছে প্ল্যাকার্ড। জোরালো কণ্ঠে উঠছে স্লোগান, ‘বিচার চাই’। সুর চড়েছে সরকারের বিরুদ্ধেও।
সুবিচার চান কলকাতার মানুষ। ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর সামনে অভিনেত্রী রুকমা রায়কে পাওয়া গেল প্রতিবাদী মিছিলের মুখ হিসেবে। অভিনেত্রী বলেন, “সুবিচারের আশাতেই আমরা পথে নেমেছি। সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় আমাদের কোনও ভয় নেই। সব ভয় চলে গিয়েছে।”
তবে সুবিচারের জন্য ধৈর্য ধরতে রাজি অভিনেত্রী তুলিকা বসু। তিনি বলেন, “১৬ দিনে বিচার হয়ে যাবে যেমন তেমন করে, সেটাও কাঙ্ক্ষিত নয়। কয়েক বছর ধরে ঘটে চলা অন্যায়ের বিচার ১৪-১৫ দিনে হয়ে যেতে পারে না। হয়তো যে মেয়েটি চলে গেল, তার পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। কিন্তু এর পিছনে যে বড় ঘটনা রয়েছে, তা আমরা বুঝে গিয়েছি। সেটার তদন্ত চাই, বিচার চাই।”
অভিনেত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ আমাদের একটাই চাওয়া-- বিচার। এটা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। আমরা রোজ সন্ধেবেলা পথে নামছি। এটা ঘরে ফেরার সময়, এই সময় যখন মানুষ পথে নামছেন তখন বুঝতেই হবে এর গুরুত্ব রয়েছে। আর যাঁরা বলছেন মেয়েদের রাতে কাজ করার প্রয়োজন নেই, আসলে তাঁরা নিজেদের দুর্বলতা বুঝতে পারছেন। আমরা কিন্তু দুর্বল নই।”
এ দিনের জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা বিচার চাই। বিচারের পিছনে যে সমস্ত মস্তিষ্ক রয়েছে, তাদের কাছে বিচার চাই। সেটা যদি সরকারের হয়, তা হলে সরকারকে তার মুখোমুখি হতে হবে। কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে বাঁচানো যাবে না।” অনিন্দ্য দাবি করেন, এই আন্দোলন বহু দূর ছড়িয়ে পড়েছে। এই সঙ্ঘবদ্ধতার পরিণতি ভাল হবে না, যদি না সুবিচার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “আমরা চাই, আসল অপরাধী প্রকাশ্যে আসুক। যত ক্ষণ তা না হচ্ছে, তত ক্ষণ আন্দোলন চলবে। এই ঘটনার পিছনে যারা, তারাও শাস্তি পাক।”
অভিনেতা রাহুল বলেন, “মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। এত দিন কেটে গেল, এটা লজ্জাজনক। জানি না, এর জবাব পুলিশ দেবে, না সিবিআই দেবে! আমরা শুধু চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি হোক।”
তবে কি শিল্পীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই মুখ খুলতে চাইছেন এ বার? অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু রাজ্য সরকার তো নয়! দেশটা যে হেতু ভারত, তাই একই ভাবে কেন্দ্রের কাছেও আমরা বিচার চাইছি। এটা আমাদের দাবি।”
সৌরভ পালোধী বলেন, “ন্যায়বিচার না হলে, মানুষ ভেবে ফেলবে, এ ভাবেই চলতে পারে। এত দেরি হচ্ছে, তাতে আমার হাস্যকর লাগছে।” আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সৌরভ।
তবে শুধু আরজি কর নয়, সারা দেশে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেই কথা বলতে চান তাঁরা। সৌরভ বলেন, “যে কোনও ভাবেই হোক, মানুষ নিজের নিজের মতো করে পথে নামছেন। আগামী ২৯ অগস্ট কলেজ স্ট্রিট থেকে একটি পদযাত্রার আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে শুধু রাজ্য নয়, সারা দেশে ঘটে চলা অপরাধের বিরুদ্ধে বিচার চাওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy